এগারো মাস আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব যান রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের জালদিয়া গ্রামের দুই যুবক। সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালালের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা।
ভুক্তভোগী দুই যুবক হলেন- জালদিয়া গ্রামের কামাল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা ও মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে ইকবল মোল্লা। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
নিখোঁজ সোহেলের বাবা কামাল মোল্লা জানান, ছেলে সোহেল ও ভাতিজা ইকবলকে সৌদি আরবে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখান প্রতিবেশী মনিরদ্দিন মোল্লা ও তার শ্যালক মামুন মোল্লা। ভাগ্য ফেরাতে মনিরদ্দিন ও মামুনকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে গত বছরের ৯ জুন সৌদি আরবে পাড়ি জমান সোহেল ও ইকবল। সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে উল্টো দালাল চক্রের নির্যাতনের শিকার হন তারা। কাজ দেওয়ার আশ্বাসে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের (পরিবারের লোকদের) কাছ থেকে আরও ২ লাখ টাকা নেন দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন। কিন্তু এরপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সোহেল ও ইকবলের। তিন মাস ধরে তাদের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারটির। গত ২৭ এপ্রিল রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে দুই দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন সোহেলের স্ত্রী রিনা আক্তার।
রিনা আক্তার বলেন, তিন মাস ধরে আমার স্বামী ও দেবরের কোনো খোঁজ নেই। দালাল মনিরদ্দিন ও মামুন বলছেন, তাদের আরও ১০ লাখ টাকা দিলে তারা আমার স্বামী ও দেবরকে এনে দেবেন। আমরা তাদের এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আমরা আরও ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব। কোনো উপায় না দেখে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
ইকবল মোল্লার স্ত্রী সেলিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী ও ভাসুর বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, জানি না। তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। দুই পরিবার ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমার স্বামী ও ভাসুরকে দেশে ফেরত এনে দিক।
সোহেলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের ছেলে দুটিকে আমরা ফেরত চাই। আর এই দুই দালালের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে এদের খপ্পরে পড়ে আমাদের মতো অন্য কোনো পরিবার সর্বস্বান্ত না হয়।
এ বিষয়ে মনিরদ্দিন মোল্লা বলেন, সোহেল ও ইকবলকে আমার শ্যালক মামুন বিদেশে পাঠিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সবকিছু মামুন জানে।
মামুন মোল্লা বলেন, ‘সোহেল ও ইকবলকে যে কোম্পানিতে কাজ দিয়েছিলাম। সেখানে তারা কাজ না করে পাসপোর্ট ফেরত চান। পরে এজেন্সির মাধ্যমে ওই কোম্পানির কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে দিয়েছি। এখন আমার আর কোনো দায় নেই। ’
এদিকে রিনা আক্তারের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুর কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলাটি সঠিকভাবে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে এ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা মামলার তদন্ত শুরু করব এবং নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করব।
বিদেশ গমনেচ্ছুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে হলে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি ও সরকারি অনুমোদিত পন্থা অনুসরণ করা উচিত। দালালের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে অনেকেই প্রতারণার শিকার হন।
এসআরএস