ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৩ মে ২০২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

সুন্দরবনের নদীপথে ‘পুশ ইন’ করা ৭৫জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৭, মে ১৩, ২০২৫
সুন্দরবনের নদীপথে ‘পুশ ইন’ করা ৭৫জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ভারত থেকে পুশ ইন করা বাংলাদেশিরা

ভারতের গুজরাটের বস্তি থেকে তুলে এনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও নৌবাহিনী কর্তৃক বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরের মধ্যে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ায় তিনজনকে শ্যামনগর থানায় মামলা দায়েরের পর সোমবার (১২ মে) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে রোববার (১১ মে) রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ড ৭৮ জনকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে শ্যামনগর থানা চত্বরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।

এসময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিমকে পুশ ইন করে। পরে বনবিভাগের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কোস্টগার্ড।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে তিনজন নিজেদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে যদি দেখা যায় তাদের বাবা-মা বাংলাদেশি এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জন্মসূত্রে ভারতীয় তিনজন হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না সাহার ছেলে মো. হাসান শাহ (২৪) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)।

জন্মসূত্রে এরা তিনজনই ভারতের গুজরাটের নেহেরীনগর, জোপারপচ্চি এলাকার বাসিন্দা। তবে তাদের কাছে ভারতের কোনো বৈধ কাগজ নেই।

পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিরা জানায়, ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তিগুলোতে হানা দেয় এবং বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক নির্যাতন করার পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও পাশবিক নির্যাতন করে। তারপর তাদের চোখ বেঁধে একটি সামরিক উড়োজাহাজে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অপর একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে।

পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একটি জায়গায় রেখে যায় এবং জাহাজে অবস্থাকালীন শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, ধর্মীয় অবমাননাসূচক মন্তব্য করে। এসময় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেনি এবং এখন পর্যন্ত তাদের স্ত্রী সন্তানদের সঠিক অবস্থান তারা জানে না।

ভারতীয় বিএসএফ ও নৌবাহিনী কর্তৃক পুশ ইন করাদের মধ্যে ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া খুলনা জেলার ৬ জন, যশোরের ২ জন এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশাল জেলার ১ জন করে লোক রয়েছে। এদের মধ্যে গুজরাটের আহমেদাবাদের বিভিন্ন বস্তিতে থাকতেন ৭০ জন এবং সুরাটে থাকতেন ৮ জন।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।