চাঁদপুর সেচ প্রকল্পসহ সদর উপজেলায় এবারও আখের আবাদ বেড়েছে। তবে হঠাৎ করে মাজরা পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, আক্রমণ থেকে রক্ষায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সদর উপজেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। বোরো ধান ও সবজির আবাদ শেষে অনেক কৃষক আখ চাষ করেছেন। কেউ কেউ আবার সাথী ফসল হিসেবেও আখ আবাদ করেন। বিশেষ করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনের গাঁও ও লোহাগড়া গ্রামের অধিকাংশ কৃষকই আখ চাষ করে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাঁদপুর জেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলায় আখ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ৬৭৭ হেক্টর জমিতে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচরসহ জেলার ৮ উপজেলায় কম-বেশি আখের আবাদ হয়। এর মধ্যে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য জনপ্রিয় ‘চাঁদপুর গেন্ডারি’ জাতের আখের আবাদ সবচেয়ে বেশি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনের গাঁও গ্রামের আখ চাষি মো. কলন্দর খান বলেন, আমাদের গ্রামের অধিকাংশ কৃষক আখ চাষ করেছেন। তবে এবার গাছগুলো বড় হওয়ার আগেই মাজরা পোকা, সেমি পোকাসহ কিছু অজ্ঞাত পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। বাজার থেকে কেনা কীটনাশকেও কাজ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতাও পাই না। সেমি পোকা আখের মাঝখান দিয়ে ছিদ্র করে ডিগগুলো মেরে ফেলে। এক সময় পুরো গাছটাই পচে যায়। আবার কিছু আখে শিষ ধরে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। এসব কারণে আমরা খুবই চিন্তিত।
একই গ্রামের কৃষক ছামাদ পাটওয়ারী বলেন, আগে আখে ছত্রাক জাতীয় রোগ হতো। এবার নতুন এক ধরনের সাদা পোকার আক্রমণ দেখা গেছে, যা পাতাগুলো সাদা ও চিকন করে ফেলে। আরেকটা কালো পোকা সরাসরি আখের ভেতরে ঢুকে গাছগুলো নষ্ট করে ফেলে। এছাড়া একটি পোকা পাতাগুলো খেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এই তিন ধরনের পোকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।
সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের সেকদী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর মিজি বলেন, পোকার আক্রমণে আখের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অথচ কৃষি বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আমরা মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখিও না।
আখের জমিতে পোকার আক্রমণ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল হাসান বলেন, এবার আখে মাজরা পোকার আক্রমণ কিছুটা বেশি। তবে কতটুকু জমিতে আক্রমণ হয়েছে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তদারকি আরও বাড়ানো হবে।
কৃষকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা খোঁজ নেন না—এমনটা ঠিক নয়। একজন কৃষক ইউনিয়ন বা উপজেলা কৃষি অফিসে গেলেই প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এসআরএস