যশোর: অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদল সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে মাছের ঘের সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলাম সরদার খুন হন। হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে, তরিকুল ইসলামের অনুসারীরা ক্ষোভে ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৩টি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং অনুষ্ঠানের জন্য রান্না করা খাবার বিনষ্ট করা হয়। এরপর মশিয়াহাটি বাজারের কয়েকটি দোকানেও হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এতে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই গ্রামটি মানুষশূন্য হয়ে যায়। স্থানীয়রা আশপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। তবে, ২৩ মে (শুক্রবার) ভোর থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা ধীরে ধীরে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ জানান, এরপর আর কোনো সহিংসতা হয়নি।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম জানান, ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। পরে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আটকরা হলেন অভয়নগরের ভাটবিলা গ্রামের তাপস মণ্ডলের ছেলে স্বদেশ মণ্ডল, ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের সুজিত বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, খুলনার পাইকগাছার হানিরাবাদ গ্রামের মৃত গোস্ট তরফদারের ছেলে অসীম তরফদার, দেলুটি গ্রামের মৃত অবনি রায়ের ছেলে প্রজিৎ রায় এবং যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের রিপন মহালদারের ছেলে সৌমেন মহালদার। আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে আতঙ্ক দূর করতে বিএনপি নেতারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেন। গত শনিবার সকালে নিহত তরিকুল ইসলামের অভয়নগরের ধোপাদি গ্রামের বাড়ি এবং ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, যশোর জেলা সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ সাবুরুল হক সাবু এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন এবং তরিকুল হত্যার বিচার দাবি করেন।
সেদিন বিকেলে নওয়াপাড়ায় তরিকুল হত্যার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপি নেতারা বলেন, আমরা তরিকুল হত্যার বিচার চাই। তবে নীরিহ কোনো মানুষের ওপর অত্যাচার চাই না।
যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত ১৮টি পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৩০ কেজি করে চাল, ছয় হাজার টাকা এবং দুই বান্ডিল করে টিন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে।
অভয়নগর থানার ওসি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এলাকাবাসীর মধ্যে এক ধরনের ভীতি এখনো বিরাজ করছে। তবে বিএনপি নেতাদের আশ্বাসের পর অনেকে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
জেএইচ/এমএম/এমজে