ঢাকা, শনিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় বাগেরহাট শহর, ভোগান্তি চরমে

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৫, জুলাই ১০, ২০২৫
বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় বাগেরহাট শহর, ভোগান্তি চরমে

বাগেরহাট: বেশি হোক, আর কম হোক, বৃষ্টি হলেই শহর জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বাড়ি-ঘর, রাস্তা, খেলার মাঠ সব জায়গা পানিতে তলিয়ে যায়।

মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয়, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। এই পানি থাকে দীর্ঘ সময়। একারণে ভাড়াটিয়ারা এসে বেশি দিন থাকে না। কি যে একটা সমস্যার মধ্যে আছি, তা বলে বোঝানো যাবে না। এভাবেই জলাবব্ধতায় ভোগান্তির কথা জানাচ্ছিলেন বাগেরহাট শহরের খারদ্বার এলাকার বাসিন্দা মোঃ দুলাল।

শুধু খারদ্বার নয়, বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, ২৫০ জেলা হাসপাতাল সড়ক, জেলা ডাকঘরের সামনে, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, পৌরসভার পাশের এলাকা, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনে, বাগেরহাট মডেল থানাসহ শহরের ৭০শতাংশ এলাকার চিত্র একই রকম। ঘন্টাখানেকের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের অলিগলি। এমনকি শহরের বেশিরভাগ সড়ক থাকে পানির নিচে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে যানবাহনচালকদের পড়তে অকল্পনীয় ভোগান্তিতে।

গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এই ভোগান্তি বেড়েছে আরও কয়েকদিন। ১লা জুলাই থেকে নিরবিচ্ছন্ন বৃষ্টিতে ভোগান্তির শহরে পরিনত হয়েছে বাগেরহাট। মঙ্গলবার দুপুরে হাটু পর্যন্ত লুঙ্গি তুলে বাগেরহাট মডেল থানায় প্রবেশ করতে দেখা যায়, ডেমা ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল ভুইয়া ও তার স্ত্রীকে। থানায় প্রবেশ করতেও, হাটু পানি ভেঙ্গে যেতে হয়, এভাবে কি হয় নাকি, থানা থেকে এসব কথা বলতে বলতে বের হন কিছুক্ষন পরে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায়ও যদি পানি ভেঙ্গে প্রবেশ করতে হয়। তাহলে আমরা কোথায় যাব। যে রাস্তায় যাইনা কেন, সেই রাস্তায় পানি।

থানার গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোঃ সাইদ বলেন, বৃষ্টি বেশি হলে আবার জোয়ারে পানি বাড়লে, থানার সামনে পানিতে তলিয়ে যায়। তখন খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ আসে না। আর কি বলব, পুরো শহরেরই একই অবস্থা।

বাগেরহাট বাসাবাটি এলাকা বাসিন্দা উৎপল দেবনাথ বলেন, বৃষ্টি হলেই ঘরের চার-পাশে পানি জমে যায়। এর শেষ নাই। কি করব, বাড়িঘর বেঁচে তো আর চলে যেতে পারি না। তাই কষ্ট করে থাকি।

রিকশাচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, শহরের বেশিরভাগ সড়কে পানি, কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার গাড়ির চাকার অর্ধেক ডুবে যাচ্ছে। যাত্রী নেই বললেই চলে। মানুষ পানির ভয়ে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। একেতো আয় কম হচ্ছে, আবার গাড়ির মেরামত খরচও অনেক বেড়ে যায় এরকম রাস্তায়। এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

সরুই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ জেসমিন আক্তার বলেন, বাড়ির ভেতরে পানি উঠে গেছে। চুলায় আগুন ধরানো যাচ্ছে না। ছোট ছেলেটা পানিতে সর্দি-জ্বরে ভুগছে।

জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের: বাগেরহাট শহরের জলাবদ্ধতা নতুন নয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে বৃষ্টি মৌসুমে শহরের বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগও নেই পৌরসভার। শহরের বাসিন্দা জাহিদ হাসান পলাশ বলেন, বাগেরহাট পৌরসভা দেশের অন্যতম প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। কিন্তু এই পৌরসভা দূর অবস্থা দেখার কেউ নাই। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার অভিশাপে আমরা ভুগলেও, কোন পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।

তিন কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা: বাগেরহাট শহরের একপাশে রয়েছে ভৈরব ও দড়াটানা নদী। স্বাভাবিকভাবে এই দুই নদীতেই বাগেরহাট শহরের পানি নেমে যাবে। সে কারণে নদীর পাশ দিয়ে করা শহর রক্ষা বাঁধের নিচে, কয়েকটি গেট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে গেটগুলো অকেজো। যার ফলে ঠিকঠাক পানি নিস্কাশন হতে পারে না। আবার শহরের মধ্যে যে ড্রেণগুলো রয়েছে, সেগুলোও ময়লা-আবর্জনায় আটকে গেছে, যার কারণে পানি নিস্কাশনের কাজে লাগছে ড্রেণগুলো। অন্যদিনে শহরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৫টি খালের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। নালা আকৃতির অবশিষ্ট যেটুকু খালের চিহ্ন রয়েছে, সেটিও ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিনত হয়েছে। এসব কারণেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান সচেতন নাগরিকরা।

সচেতন নাগরিক কমিটি সুজনের সাধারণ সম্পাদক এসকে হাসিব বলেন, শহরের রাস্তাঘাট, খাল, ড্রেন কোন কিছুই ঠিক নাই। এই শহর এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। অতিদ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, খুবই অল্প সময় হয়েছে আমি এখানে যোগদান করেছি। শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। এর প্রধান কারণ ড্রেন ও খালে ময়লা আবর্জনা ফেলা। এছাড়া শহররক্ষা বাধে থাকা পানি নিস্কাশনের গেটগুলো সংস্কারের অভাবে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। আমরা গেটগুলো সচল করার চেষ্টা করছি। বৃষ্টি মৌসুম গেলে খাল ও ড্রেন পরিস্কার করা হবে। এটা করতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসনে হবে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট পৌরসভার প্রশাসক ডা. ফখরুল হাসান বলেন, পৌর শহরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কাজগুলো দৃশ্যমান হলে জনভোগান্তি কমবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়োতনের প্রথম শ্রেনির এই পৌরসভায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন।

 

এমআরএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।