নরসিংদীতে লিমা আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের পর পেটের ভেতর ১৮ ইঞ্চি টুকরা মপ (কাপড়) রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভুক্তভোগীর ভাই জহিরুল ইসলাম সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছেন।
লিমা আক্তার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাঁও মির্জাকান্দি এলাকার রহিম মিয়ার স্ত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লিমা আক্তারের প্রসব ব্যথা শুরু হলে গত ১৭ জুন নরসিংদীর বাসাইল এলাকায় অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. শিউলি আক্তার। এ সময় লিমা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ২১ জুন দুপুরে লিমা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এ বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরুল ইসলাম।
এ অবস্থায় ফের ভুক্তভোগী নারীকে ২৫ তারিখে পুনরায় একই হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলে সেখানে কিছু ধরা পড়েনি বলা হয়। পরে তাকে নরসিংদীর আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন এবং তার পেটে কিছু একটা রয়েছে বলে ধারণা দেন। সে অনুযায়ী স্বজনরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান এবং নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন তার পেটে রক্ত পরিষ্কার করার 'মপ' বা কাপড়ের টুকরা রয়েছে, দ্রুতই তার অপারেশন করতে হবে। ৩ জুলাই গভীর রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এইচ এম শাখাওয়াত হোসেন দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করে ওই নারীর পেট থেকে ১৮ ইঞ্চি সম পরিমাণ একটি কাপড়ের টুকরা বের করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, অপারেশন করে এখন আমার বোনের অবস্থা আরও খারাপ। পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে, পেট ফুলে আছে, দুর্গন্ধ বের হয়, ব্যথায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে সে। দ্বিতীয় দফায় অপারেশনের আগে ও পরে মিলিয়ে পাঁচদিন তাকে নীবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনও তার অবস্থা সংকটাপন্ন। শিশুটিও মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় মানসিক ও আর্থিকভাবে পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনিও আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছি। বিএমডিসিতে অভিযোগ করবো এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে মামলা দায়ের করবো। আমরা এরকম অবহেলিত চিকিৎসার প্রতিকার এবং এর বিচার চাই।
নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি। রোগীর বাড়িতেও গিয়েছি এবং সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। তারা অনেক বেশি টাকা চায়। ভুল করে বিষয়টি হয়ে গেছে, সেটি তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্বও নেওয়ার কথা বলেছি। ’
এ বিষয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো. আমিরুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে এমন ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। রক্ত পরিষ্কার করার কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে ফেলেন কীভাবে? এর প্রতিকার দরকার, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ