গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো আসামি পালানোর খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন কারারক্ষী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী আচমকা জেলা কারাগারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে কারাগারের জানালার কাচ ভেঙে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যৌথবাহিনী উপস্থিত হয়ে অ্যাকশনে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
এদিকে এ ঘটনায় তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে দুজনের।
এর আগে গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে দুপুর আড়াটার দিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের নিরাপদে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গোপালগঞ্জ থেকে অন্যান্য জেলায় যাওয়ার রাস্তাগুলো গাছের গুঁড়ি ফেলে আটকে দেওয়া হয়। ফলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা। কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল ৫টার দিকে তাদের গোপালগঞ্জ থেকে মোল্লারহাট ব্রিজ পার করে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, আখতার হোসেন, ডা. আব্দুল্লাহ চৌধুরী, সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, ফাহমিদ ইয়াসি, মেনান মুশফিক, ওয়াহিদ অনি, সাইফ নেওয়াজ, তাসনিম আহমেদ, মাহদী হাসান সীন, সানজিদা আক্তার, আলামিন, মাসুদুর রহমান, আব্দুর রহমান, মহররম হাসান মাহিমসহ অনেকে।
গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে সড়ক অবরোধ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জ শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ।
এসময় অনেক পুলিশ ও সাংবাদিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। গোপালগঞ্জ থেকে অন্যান্য জেলায় যাওয়ার রুটগুলো গাছের গুঁড়ি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ।
এদিকে এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ফোরামের অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। এতে যমুনা টিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোজাম্মেল হোসেন মুন্না ও ডিবিসি টেলিভিশনের রিপোর্টার সুব্রত সাহা বাপিসহ অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
তাদেরসহ এ ঘটনায় আহত অনেককে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে কতজন হতাহত হয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। জানা যায়, এনসিপির নেতারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। সারা শহরের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশের মঞ্চের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকালে পুলিশের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয় ইউএনওর গাড়িবহরে।
জুলাই মাস জুড়ে জেলায় জেলায় পদযাত্রা করছে কেন্দ্রীয় এনসিপি। আজ তারা গোপালগঞ্জে লং মার্চ করেন, সমাবেশ করেন।
এসআই