হবিগঞ্জ: ছায়াঘেরা উঠান, পরিত্যক্ত জমি কিংবা নিচু জায়গা—আগে যেখানে কোনো ফসল হতো না, সেসব অলস জমিতে এখন চাষ হচ্ছে আদা। হবিগঞ্জে বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতিতে সাফল্য পাচ্ছেন কৃষকরা।
‘সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে এই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের একজন বিলাল মিয়া। বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে স্ত্রী জানুকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন বস্তায় আদা চাষ।
বিলাল বলেন, ৭ হাজার বস্তায় আদা রোপণ করেছি। প্রতিটি বস্তায় খরচ ৩০ টাকা। চৈত্র মাস নাগাদ প্রতিটি বস্তা থেকে গড়ে ১ কেজি আদা পাওয়া যাবে বলে আশা রাখছি। এতে মোট উৎপাদন হবে প্রায় ৭ টন, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৭ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, বিদেশে গেলে হয়তো এমন সাফল্য পেতাম না। এখন ২ লাখ টাকায় ৭ লাখ পাওয়ার আশা করছি। আগামী বছর দ্বিগুণ করব।
বিলাল জানান, চাষের জন্য ব্যবহৃত জমিটিও আগের মতো ব্যবহারযোগ্য ছিল না। বাড়ির পাশের ছায়াযুক্ত, পরিত্যক্ত জায়গা ও বাঁশঝাড়ের পাশে করেছেন বস্তায় আদা চাষ। যেখানে আগে কিছুই হতো না, এখন সেখানকার ফলন দেখে অবাক আশপাশের মানুষজন। আগাছাও খুব একটা হয় না, আর যেটুকু হয় তা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। মাঝে মাঝে হালকা ছত্রাকনাশক ছিটালেই যথেষ্ট। বর্ষাকালে বস্তায় কয়েকটি ছিদ্র করে দিলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যায়।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম বলেন, চৈত্র মাসে প্রতি বস্তায় ১২-১৫ কেজি মাটি, ১ কেজি ছাই, ২ কেজি জৈব সার, ৩০০-৪০০ গ্রাম ডিএপি ও এমওপি সার দিতে হয়। আদা বীজ ২-৩ দিন ঘরের মধ্যে বালুর মধ্যে রেখে অঙ্কুরিত করে পরে প্রতিটি বস্তায় ২-৩টি করে রোপণ করা হয়। ২৫ দিনের মধ্যেই গাছ বড় হয়ে ওঠে। এক চৈত্রে লাগালে পরের চৈত্রেই ফসল তোলা যায়।
প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা আক্রাম হোসেন বলেন, দেশে বছরে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আদার চাহিদা রয়েছে। অথচ উৎপাদন হয় মাত্র ৭০-৭২ হাজার টন। ফলে বাকি অংশ আমদানি করতে হয়। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি বিস্তৃত হলে দেশের আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর প্রায় ৮০০ কৃষক ৭৪ হাজার ৪৪০টি বস্তায় আদা চাষ করছেন। ফলন ভালো হলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা মাকসুদুল বলেন, বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— বাড়তি জমি লাগছে না। খরচ কম, রোগবালাই নেই, আয়ও বেশি। কৃষিতে এটা এক নতুন সম্ভাবনা।
এসআরএস