ঢাকা, শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

‘আমার ছেলে কোনো দলের জন্য নয়, দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৩, আগস্ট ২, ২০২৫
‘আমার ছেলে কোনো দলের জন্য নয়, দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল’ বক্তব্য রাখছেন ফেনীর প্রথম শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার।

ফেনী: চেয়ার পেয়ে বিপ্লবীদের ভুলে গেলে বার বার অপদস্ত হতে হয়। আমার ছেলে কোনো দলের জন্য নয়, দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল।

৪ আগস্ট তার শরীরে হাত দিয়ে শুধু রক্ত আর রক্ত দেখেছি। এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে নিজের সন্তানের স্মৃতিচারণ করছেন ২৪ এর জুলাই বিপ্লবে ফেনীর প্রথম শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার।

শনিবার (২ আগস্ট) সকালে ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন ।

তিনি বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে একটা হিজাব চেয়ে নেয়। সালাম করে বলে, ‘আমরা না গেলে কে যাবে? দেশটা আমাদের। ’ আমি মানা করেছিলাম, সে শোনেনি। আজ অনেকে পাশে দাঁড়াতে চায়। আমাদের সন্তানদের রক্তের ওপর নতুন বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই, কারণ আমরাই এদেশের মালিক।

শ্রাবণের শরীরে গুলি লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, মহিপালের ‘ইত্যাদি হোটেল’র সামনে প্রথম দুটি গুলি খায়, পরে পাসপোর্ট অফিসের সামনে আরও চারটি গুলি লাগলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এছাড়া সেদিন মসজিদের ইমামকে বাধ্য করা হয়েছিল যেন তিনি বাইরে না বলে শ্রাবণের কয়টা গুলি লেগেছে।

বিচারের বিষয়ে আক্ষেপ নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা সন্তান হত্যার বিচার চাই অথচ এখনও কিছুই হয়নি। এর জন্য আমাদের বারবার রাস্তায় নামতে হয়, সনদের জন্যও নামতে হয় মাঠে।

এভাবে শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম, ওয়াকিল আহমেদ সিহাবের মা মাহফুজা আক্তার, ছাইদুল ইসলামের মা রাহেনা বেগমের স্মৃতিচারণকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের মায়েরা। তাদের কান্না দেখে এক বেদনা বিধুর অবস্থার সৃষ্টি হয় সমাবেশস্থল। এ সময় অতিথি, শহীদ পরিবার ও সুধিজনদের চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে।

ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসরীন আক্তার।

রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জামায়াতে ইসলামীর জেলা সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের জেলা সদস্য সচিব রেজাউল করিম সুজন, এবি পাটির জেলা আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ খেলাফত মজলিসের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজ উল্যাহ আহম্মাদী।

এ সময় তারা বলেন, আমরা জুলাই গণহত্যার নির্মমতা ভুলতে বসেছি। অনেকেই তখন চিকিৎসা নিতে পারেনি। মায়েরা ভালো করে সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। বিচারের কোনো অযুহাত মেনে নেওয়া হবে না। খুনি ফিরে আসার মহাপরিকল্পনা করছেন। আমরাও প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছি। জুলাই ও বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সারাদেশ এর সর্বশেষ