ঢাকা, রবিবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

‘বালিতে পুঁতে টাকা আদায়ের’ কাহিনি মিথ্যা, দাবি প্রেসক্লাব নেতার স্ত্রীর 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৩, আগস্ট ৯, ২০২৫
‘বালিতে পুঁতে টাকা আদায়ের’ কাহিনি মিথ্যা, দাবি প্রেসক্লাব নেতার স্ত্রীর  সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরীর স্ত্রী লাবণ্য রহমান।

যশোরের অভয়নগরে ‘ব্যবসায়ীকে বালিতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়’ করার যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরীর স্ত্রী লাবণ্য রহমান।  

শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্টো অভিযোগকারী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবির টিপুর বিরুদ্ধেই অর্থ আত্মসাতচেষ্টার অভিযোগ তোলেন।

লাবণ্য রহমান বলেন, ‘শিল্প ও বন্দর নগরী যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মেসার্স জাফ্রিদী এটারপ্রাইজের মালিক শাহনেওয়াজ কবির টিপু অসংখ্য ব্যবসায়ীর শত শত কোটি টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাতের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসব ব্যবসায়ী পাওনা টাকা আদায়ে অনড় তাদের বিরুদ্ধে কল্প কাহিনি সাজিয়ে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। ’

“তারই ধারাবাহিকতায় টিপুকে ‘বালিতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়ের’ কল্প বাহিনি সাজিয়ে নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরী, আলহাজ কামরুজ্জামান মজুমদার, আসাদুজ্জামান জনিসহ ৫/৬ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা করা হয়েছে। মূলত মফিজুর রহমান পাওনা টাকা আদায়ে মধ্যস্থতা করেছেন, চাঁদাবাজি করেননি। ”

লাবণ্য রহমান বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের নওয়াপাড়ার এজেন্ট মেসার্স আফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহনেওয়াজ কবির টিপু। নওয়াপাড়ার মেসার্স জনি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আসাদুজ্জামান জনি তার কাছে গম বিক্রির শর্তে বিভিন্ন সময়ে নগদ ৪ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন টিপুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফ্রিদী এটারপ্রাইজে। সাংবাদিক নেতা মফিজুর রহমানও নিজের কিছু এবং কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোট এক কোটি টাকা সংগ্রহ করে জনি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে টিপুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।

“কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে চুক্তি অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের গম এবং লভ্যাংশ দেন না শাহনেওয়াজ কবির টিপু। ইতোমধ্যে বকেয়া ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় নাবিল গ্রুপ শাহনেওয়াজ কবির টিপুকে গম দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জনি এন্টারপ্রাইজ তার বিনিয়োগ করা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জনি এন্টারপ্রাইজের ইউসিবি ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ২ কোটি টাকা দেন শাহনেওয়াজ কবির টিপু। বাকি ২ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার জন্য এক সপ্তাহ সময় নেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হলেও টিপু টাকা না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। ”
 
লাবণ্য রহমান আরও জানান, তার স্বামী মফিজুর রহমান ধোপাদী এস এস কলেজের প্রভাষক, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় অন্তত এক ডজন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সামাজিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এবং ব্যবসায়িক চুক্তির সময় উপস্থিত থাকায় জনি এন্টারপ্রাইজ বিষয়টি নিয়ে শাহনেওয়াজ কবির টিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাকি টাকা এবং লভ্যাংশ আদায়ের ব্যাপারে কথা বলতে অনুরোধ জানায়।  

“তার আরও কয়েক দিন পর নওয়াপাড়াস্থ জনি এন্টারপ্রাইজের অফিসে শাহনেওয়াজ কবির টিপুকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে মফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন ছিল বলে জানতে পারি। এক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ করলে টিপু কয়েক ধাপে মফিজুর রহমানের পূবালী ব্যাংক নওয়াপাড়া শাখার মেসার্স মফিজ ট্রেডিংয়ের হিসাব নম্বরে মোট দুই কোটি টাকা জমা দেন। টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনি এন্টারপ্রাইজের পাওনা এক কোটি টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেন মফিজুর। অবশিষ্ট ১ কোটি টাকা মফিজুর যাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের ফেরত দেন। এ ঘটনার পরেও কয়েক মাস জনি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কয়েক কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে। ৪ কোটি টাকা পরিশোধের পরও জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কাছে জনি এন্টারপ্রাইজের ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা থেকে যায়। এই বাকি টাকার জন্য চাপ দেওয়ার পর ঘটনার এক বছর পরে এসে চলতি মাসের ২ তারিখে ঘটনা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে নিজের স্ত্রী আসমা খাতুনকে দিয়ে মিথ্যা কল্পকাহিনি সাজিয়ে মফিজুর রহমান, আলহাজ কামরুজ্জামান মজুমদার, আসাদুজ্জামান জনি এবং অপর ৫/৬ জনের নামে চাঁদাবাজি মামলা করেছেন টিপু। তারই সূত্র ধরে সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘ব্যবসায়ীকে বালিতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়’ সংক্রান্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ”

লাবণ্য অভিযোগ করেন, বিনিয়োগকৃত ব্যবসায়িক টাকা ফেরত নিতে গিয়ে তার স্বামীর সুনাম নষ্ট হয়েছে এবং তিনি প্রশাসন ও লোকলজ্জার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া এই টিপুর নিকট নওয়াপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন মোকামের ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি পাবে। যার কারণে তার স্থাবর-অস্থাবর জমি-জায়গা সেসব ব্যবসায়ীদের টিপু লিখে দিয়েছেন।

এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে সরেজমিনে তদন্তের দাবি জানান মফিজুর রহমানের স্ত্রী লাবণ্য।

টিএ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।