ঢাকা, সোমবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৬ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

খালি হাতে বিদ্যুতের তারে দিব্যি কাজ করেন আয়নাল

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪২, আগস্ট ১১, ২০২৫
খালি হাতে বিদ্যুতের তারে দিব্যি কাজ করেন আয়নাল বিদ্যুৎ সচল অবস্থায় কাজ করছেন আয়নাল

হবিগঞ্জ: সচল বিদ্যুৎ লাইনে হাত দিলেই মৃত্যু—এটাই সবার জানা কথা। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও পাওয়া যায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর।

কিন্তু হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আছেন এক বিস্ময়কর মানুষ, যিনি এ প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুতের তারে দিব্যি ঝুলে থাকেন, শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করেন, এমনকি তার তাপে ডিম সেদ্ধ করেও খেয়ে দেখান—তবুও তার কিছুই হয় না!

তার নাম আয়নাল মিয়া, বয়স ৬০ বছর। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের বড় বাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। পেশায় একজন ইলেকট্রিক মেকানিক ও ‘বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা। এলাকায় সবাই তাকে ‘বিদ্যুৎমানব’ নামে চেনেন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের এক কোণে বসে কাজ করছেন আয়নাল। দেখতে চাইলে ২৪০ ভোল্টের সচল তার দুই হাত দিয়ে ধরলেন। পাশে দাঁড়ানো মানুষজন বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বিদ্যুতের তারে শরীর দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের তাপে একটি ডিম সেদ্ধ করলেন। তারপর হাসিমুখে সেই ডিম খেয়ে দেখালেন সবার সামনে। আশপাশের অনেকেই ফিসফিস করে বলছিলেন- ‘এ যেন অলৌকিক ঘটনা। ’

আয়নাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ২৭ বছর আগে কুমিল্লায় বৈদ্যুতিক কাজ করার সময় প্রথম বুঝি, সচল বিদ্যুতের তার ধরলেও আমার কিছু হয় না। পরে সাহস করে দ্বিতীয়বারও ধরলাম—তখনও কিছুই হয়নি। তারপর থেকে টেস্টার বা প্লাস ছাড়াই খালি হাতে কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনও জানে ২২০ কিংবা ৪৪০ ভোল্টের লাইন ধরলেও আমার ক্ষতি হয় না।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩৬ বছর ধরে মানুষের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজ করে আসছেন। বিনিময়ে কখনও নির্দিষ্ট টাকা দাবি করেন না, যে যা দেন, তাই নেন। এ কাজ করেই ছয় ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি- বলেন আয়নাল।

শুধু বিদ্যুতের খেলা নয়, অন্যের জীবন রক্ষায়ও তিনি বরাবর এগিয়ে যান। স্মৃতিচারণ করে বলেন, একবার বড় বাজারে আগুন লাগে। তখন একটি ছেলে বিদ্যুতের তারে ঝুলে ছিল। আমি গিয়ে সচল লাইন থেকে তাকে নামিয়ে বাঁচাই। তার কথায় জানা গেল, এমন অনেক ঘটনাতেই তিনি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।

বানিয়াচং মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি শিব্বির আহমেদ আরজু বলেন, আমরা অনেক আগেই শুনেছি, আয়নাল ভাইয়ের শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলেও তার কিছু হয় না। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের খবর পেলেই তিনি ছুটে যান, মানুষের জীবন বাঁচাতে দেরি করেন না।  

এলাকার ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা এটাকে গায়েবি ঘটনা বলি। আয়নাল ভাই খুবই সৎ ও সাদা মনের মানুষ। বিপদে-আপদে সবাইকে সাহায্য করেন। সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করা উচিত।

অপর ইলেকট্রিক মেকানিক তোফাজ্জল মিয়া বলেন, আমরা শিখেছি টেস্টার বা প্লাস ছাড়া সচল লাইনে ধরা যায় না। কিন্তু আয়নাল ভাই দিব্যি খালি হাতে কাজ করেন। হয়তো আল্লাহ তাকে আলাদা ক্ষমতা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমরা জানি, তিনি ২২০ ভোল্টের লাইন ধরলেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন না। তবে অন্যদের এমন দুঃসাহস না করাই ভালো। এটা প্রাণঘাতী হতে পারে।

হবিগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইনস্ট্রাক্টর ওয়াকিল আহমেদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বিজ্ঞান অনুযায়ী এমন করলে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। পায়ে জুতা থাকলেও দুর্ঘটনা হওয়ার কথা। এর পেছনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা থাকতে পারে।

আয়নাল মিয়ার সবার প্রতি অনুরোধ, আমার মতো করে কেউ চেষ্টা করবেন না। এতে প্রাণহানি ঘটতে পারে। আমি মনে করি এটা আমার মায়ের দোয়া আর আল্লাহর রহমত।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।