কুমিল্লা: কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শ্রীমন্তপুর এলাকায় অভাবের তাড়নায় দ্বিতীয়বারের মতো সন্তান বিক্রি করবেন নিশি আক্তার নামের একজন নারী।
এর আগে রাবেয়া নামের তার প্রথম সন্তান তিনি ৯ মাসে বয়সে বিক্রি করে দেন।
এই নারীর দাবি, তাকে খাবার দিতে পারবেন না, তাই বিত্তবান কাউকে দিয়ে দেবেন। সেখানে সন্তান খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে। পাশাপশি তারা খুশি হয়ে কিছু দিলে তিনি স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া বাকি দুই সন্তানের খাবার যোগাতে পারবেন।
নিশি আক্তার জানান, তার বাবার বাড়ি কুমিল্লা লাকসাম উপজেলার বাতাখালী গ্রামে। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বাবার পরিবারের অবস্থাও ভালো নয়। বাবাও প্যারালাইজড।
স্বামী ইউছুফ মিয়া কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার শাকতলী গ্রামের বাসিন্দা। শ্রীমন্তপুরের ভাড়া বাসায় তারা থাকতেন। মাঝে মাঝে মধ্যে আসলেও সংসারের খরচ দিতেন না।
সম্প্রতি এ নিয়ে কথা কাটাকাটির পর মারধর করে তাকে তিন তালাক বলে চলে যান। তার দেনমোহরও দেননি। বিয়ে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও নেই। স্বামী তা নিয়ে গেছেন।
৭ বছর বয়সী বড় মেয়ে রাবোয়াকে এক প্রবাসী পরিবারের নিকট বিক্রি করেন নিশি। তারা মেয়েকে নিয়ে বিদেশে থাকেন। মেজ মেয়ে পাঁচ বছরের লামিয়া নিশির মায়ের সঙ্গে লাকসামে থাকে। দুই বছরের সামিয়াও তার সঙ্গে থাকে। আর এখন ২৯ দিনের সন্তানও তার সঙ্গেই তাকে
নিশি জানান, মানুষের বাসায় কাজ করে সন্তানদের খাওয়ান। তবে চতুর্থ সন্তান হওয়ার পর এখনও কাজে যেতে পারেননি।
তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া সেলিম মিয়ার পরিবার ভালো মানুষ। তাই দেড় মাস ধরে খাবার খাওয়াচ্ছেন। তাদের বাসা ভাড়াও কয়েক মাস দিতে পারছি না। ছোট মেয়েটাকে কাউকে দিতে পারলে মেয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে। টাকা পেলে মেয়ের বাবার রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকার ঋণ শোধ করতে পারব।
বাসার মালিকের স্ত্রী নুর মহল বেগম বলেন, স্বামী প্রায়ই মারধর করতেন। পরে তালাক দিয়ে চলে যান। হাসপাতালের অপারেশনের টাকা আমরা চাঁদা তুলে পরিশোধ করি। এখন নিজেরা খাবার খাইয়ে যাচ্ছি।
প্রতিবেশী এম ফিরোজ মিয়া ও মনির হোসেন বলেন, নিশি তার প্রথম সন্তানটি বিক্রি করে ফেলেছেন। এখন বলছেন অভাবের তাড়নায় তার চতুর্থ সন্তানটিও বিক্রি করে দেবেন। একটি ঘরের ব্যবস্থা ও আর্থিক সহায়তা দিলে তিনি হয়তো সন্তান বিক্রির পথে হাঁটবেন না।
সদর দক্ষিণ উপজেলার নারীবিষয়ক কর্মকর্তা পারভীন আক্তার বলেন, আমাদের অফিসের কাছাকাছি শ্রীমন্তপুর। তাকে অফিসে আসতে বলবেন। তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া তার জন্য আর কি করা যায় দেখি। আইনি সহায়তার বিষয়টিও দেখব।
সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম বলেন, এই নারী তার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাই তাকে লাকসাম উপজলায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। নিশি আক্তারকে সহযোগিতার চেষ্টা করব।
এনডি