নাটোর: নাটোরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিতীয় দিনেও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে নতুন করে আরও ১০৭ জন রোগী নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তারা হলেন, টিমের প্রধান ডা. মো. রবিউল আওয়াল (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ), কমিটির অন্য সদস্য, ডা. আবু সাইদ, ডা. সোহরাব হোসেন, ডা..নাজমা খাতুন ও ডা. শ্রাবন্তি। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল পানিবাহিত কারণে এ ডায়রিয়া রোগ ছড়িয়েছে। তবে বেশি আক্রান্ত নাটোর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড এলাকায় সরবরাহকৃত পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও সেখানে পরীক্ষায় কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। এরপরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ঢাকা থেকে আইসিডিডিআরবির একটি প্রতিনিধি দল নাটোরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ওই প্রতিনিধি দল আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন, পানির নমুনা সংগ্রহসহ নিবির পর্যবেক্ষণ করবেন।
সন্ধ্যায় নাটোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মুহাম্মাদ মোক্তাদীর আরেফিন এবং নাটোর পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাকা থেকে আইসিডিডিআরবির একটি প্রতিনিধি দল নাটোরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের এশটি দল ও স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছেন। ডায়রিয়া মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও স্যালাইন মজুদ রাখা আছে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। আর আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে সেখানে বেশ কিছু ডিপ টিউবয়েল বসানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৫৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে ৩০ জন সুস্থ হলেও চিকিৎসাধীন ছিল ১২৮ জন। সেদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি থাকলেও বৃহস্পতিবার নতুন করে ভর্তি হওয়া ১০৭ জনের মধ্যে মধ্যে ৮৮ জনই পুরুষ বাকি মাত্র ১৯ জন নারী ও শিশু রয়েছে। নাটোরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা না কমে ক্রমেই বাড়তে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নাটোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বুধবার থেকেই আক্রান্ত এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সেখানে ডিপ টিউবয়েল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
স্থানীয় পৌরসভার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী, আনোয়া হোসনসহ অনেকে জানান, শহরের ঝাউতলা, উলুপুর, আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, উত্তর চৌকিরপাড়সহ এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং অনেক স্থান নিচু, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক। ড্রেনের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে অনেক বাড়ির পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতি বর্ষাতেই এসব এলাকায় বাড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ফুলবাগান এলাকার সাজিদ মাহমুদ, ঝাউতলার শফিকুল ইসলাম জানান, পৌরসভার সাপ্লাই পানি খাওয়ার পর থেকে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয় চারিদিকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভা থেকে সাপ্লাই করা পানির সমস্যার কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই পানির লাইন সংস্কার ও ট্যাংকি পরিষ্কারের দাবি জানান তারা।
জেএইচ