ঢাকা, শুক্রবার, ৪ আশ্বিন ১৪৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

চাল চুরির অভিযোগ, দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১৯, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫
চাল চুরির অভিযোগ, দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে খাদ্য বিভাগের ১৪০ বস্তা চাল চুরির অভিযোগে দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্গাপুর সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মামলা দায়ের করেন।

যদিও তিনি গত বুধবারই বদলি হয়ে গেছেন।

মামলার দুই আসামি হলেন রেজাউল করিম (৩০) ও সজিব আলী (২৮)। রেজাউলের বাড়ি দুর্গাপুর পৌরসভার পূর্বসিংগা মহল্লায়, সজিবের বাড়ি পশ্চিমসিংগা এলাকায়। রেজাউল আগে দুর্গাপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন, সজিবও যুবদলের নেতা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে যুবদল নেতা রেজাউল ও সজিব বিনা অনুমতিতে খাদ্যগুদামে ঢোকেন এবং রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তিনি অনৈতিকভাবে আয়-রোজগার করেছেন এবং তাদের দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে না চাইলে তারা হুমকি দেন।

ওই দিন খাদ্যগুদাম থেকে একটি ট্রলিতে করে ১৪০ বস্তা চাল নৈশপ্রহরী শাহজাহান আলমের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছিল। যুবদল নেতারা বিষয়টি দেখে ভিডিও করেন। পরে দ্রুত ওই চাল আবার গুদামে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরে রেজাউল ও সজিবকে অফিসে ডেকে তাদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ ও মামলা করার হুমকি দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন।

রেজাউল করিম ফেসবুক লাইভে বলেন, গরিব মানুষের ১৪০ বস্তা চাল খাদ্যগুদাম থেকে চুরি করে খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও নৈশপ্রহরী শাহজাহানের সহযোগিতায় তার বাসায় রাখা হয়। রফিকুলের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি ইউএনওর নাম দেন। প্রতিবাদ করায় ইউএনও তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন এবং ভিডিও ডিলিট করতে তার ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়।

গত সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে এই খবর প্রকাশিত হয়। পরদিন বুধবার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর সংযুক্তিতে মুলাধলীতে বদলি করা হয়। নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান আলম ও বাবুল কুমারকে বগুড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। কিন্তু রফিকুল ইসলাম সেখানে না গিয়ে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

যুবদল নেতা রেজাউল করিম ও সজিব আলীর দাবি, ৭ টন চাল চুরির ভিডিও সামনে আনার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্টো, ওই দিন চাল চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাদের কাছে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

সূত্রের দাবি, দুর্গাপুর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের লাল-তামাটে বর্ণের চালও ঢোকানো হয়েছিল। সম্প্রতি ইউএনও গুদামে গিয়ে এই চাল জব্দ করেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ মেট্রিক টন নিম্নমানের চাল, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা, অপসারণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের চাল ঢুকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে কথা বলতে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলার বাদী রফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে গত বুধবার তিনি দাবি করেছিলেন, নৈশপ্রহরী শাহজাহান আলমের বাড়িতে কারা চাল নিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না। সেই চাল পরে তার বাড়ি থেকে কোথায় নেওয়া হয়েছে সেটিও তিনি জানেন না।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, খাদ্য কর্মকর্তা বাদী হয়ে দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।