ঢাকা, শনিবার, ২ কার্তিক ১৪৩২, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

বসুন্ধরা শুভসংঘ

সংগ্রামী জামাল ফকিরের মুখে হাসি ফোটালো শুভসংঘের বন্ধুরা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪৫, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
সংগ্রামী জামাল ফকিরের মুখে হাসি ফোটালো শুভসংঘের বন্ধুরা জামাল ফকির ও শুভসংঘের বন্ধুরা

মাদারীপুর: প্রায় ২০ বছর আগে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর দুই পা পঙ্গু হয়ে যায় জামাল ফকিরের (৪৫)। হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেন টগবগে তরুণ জামাল।

জীবনে নেমে আসে হতাশার কালো ছায়া। দৌড়ে বেড়ানোর স্মৃতি নিয়ে এখন এক স্থানে বসে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। জীবন চালানোর তাগিদে ঘরের বারান্দাকে একটুখানি বাড়িয়ে গড়ে তোলেন একটি ছোট্ট দোকান। চা-বিস্কুট বিক্রি করে কোনো রকমে চলছিল তার থেমে থাকা জীবন।  

এদিকে বিয়েও করেন তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। এক মেয়ে ও ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে, আরেক মেয়ে এখনো ছোট। এদিকে আবার স্ত্রী রিনা বেগমও অসুস্থ অনেকদিন ধরে। স্ত্রীর চিকিৎসা, নিজের ওষুধপত্র, তিন বেলার খাবার যোগানো সব মিলিয়ে অতল সাগরে যেন ডুবে যাচ্ছিলেন জামাল ফকির।  

এরই মধ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘ শিবচর শাখার বন্ধুরা খোঁজ পান অসহায় জামাল ফকিরের। তার শুন্য দোকান পূর্ণ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন শুভ সংঘের সদস্যরা। মহতি এই কাজে এগিয়ে আসেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে দোকানে বিক্রির জন্য নানান পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তারা। সাজিয়ে দেন দোকানের শূন্য সেলফ। সাজ্জাদ হোসেন লাবুল সিদ্দিকীর পক্ষে অসহায় দোকানি জামাল হোসেনকে নগদ টাকা ও মালামাল দেন তার ছোট ভাই সাদাত হোসেন সিদ্দিকী নাসরু।

জানতে চাইলে জামাল ফকির জানান, শিবচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। ছোটবেলা থেকেই সংসারের হাল ধরেছিলেন এই মানুষটি। কৃষক বাবার সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, তবুও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। কিন্তু ২৫ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ের চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। হঠাৎ বদলে যায় তার জীবন। তবুও থেমে থাকেননি জামাল। কিছু টাকা লোন করে বাড়ির সামনে গড়ে তোলেন একটি ছোট চায়ের দোকান। এ দোকানই তার জীবনের আশ্রয়, তার সংগ্রামের সাক্ষী। '

তিনি আরও জানান, 'তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে টিকে থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছিল। ঠিক তখনই পাশে দাঁড়ান মাদারীপুরের বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী। বসুন্ধরা শুভ সংঘের সহায়তায় দোকানে যুক্ত হয় নতুন সরঞ্জাম ও উপকরণ। '

আবেগে আপ্লুত জামাল ফকির বলেন,'আমি বসুন্ধরা শুভসংঘ ও লাভলু ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। দুই পা পঙ্গু হওয়ার পর আমি অসহায় হয়ে পড়ি। অভাবের সংসারে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে যায়। একপর্যায়ে লাভলু ভাই তার দোকানে মালামাল দেওয়ায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন তৈরি হলো!'

বসুন্ধরা শুভসংঘ শিবচর শাখার সভাপতি এখলাছ উদ্দিন চুন্নু বলেন, 'আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা খোঁজ নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভসংঘের মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আমাদের কার্যক্রম নিয়মিত চলবে। '

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বসুন্ধরা শুভসংঘ শিবচর শাখার উপদেষ্টা আবুল খায়ের খান, সভাপতি এখলাছ উদ্দিন চুন্নু, সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ, সরোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস এম দেলোয়ার হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল আহমেদ, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন লাভলু, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরফিন মোহাম্মদ সজিবসহ অন্যরা।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।