পাথরঘাটা (বরগুনা): পশ্চিম আকাশের সূর্য হেলে পড়ছে। কতক্ষণে বিহঙ্গ দ্বীপ বেয়ে সুর্য ডুবে যাবে বলেশ্বরের জলরাশিতে সে অপেক্ষার প্রহর গুনছে রুহিতা পয়েন্টে অসংখ্য জেলে ও স্থানীয়রা।
পাথরঘাটা উপজেলার অন্যতম জেলেপল্লী রুহিতা। সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে ছোট্ট পল্লী। বলেশ্বর নদী ঘেঁষা এক পাশে পদ্মা স্লুইস খাল,অন্য পাশে হাজীর খাল,টেংরা খাল। এ খাল পাড়ের জেলেরা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব গ্রামের সব জেলেদের মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিচিত্র জেলে জীবন ও বিচিত্র তাদের সংস্কৃতি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে তারা সবাই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ঘোপজাল, বাধা জালসহ অন্যান্য সব অবৈধ জালের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার অঙ্গীকার করেছে। জনপ্রিয় হাওয়া সিনেমার গানেও মেতে ওঠে 'সাদা সাদা কালা কালা রং জমেছে সাদা কালা, সাদা সাদা কালা কালা রং জমেছে সাদা কালা' মঞ্চ মাতিয়েছেন।
এসডিএফ'র সহযোগিতায় এবং পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের আয়োজনে রোববার রাতে এ অনুষ্ঠান হয়। বলেশ্বর নদীর পাড়ে এ আয়োজনে মেতে ওঠে হাজারো জেলে ও জেলে পরিবার। শত কষ্টের কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় আনন্দে আত্মহারা হয় এখানকার মানুষ।
ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক জেলে অলস সময় পার করছেন আবার অনেক জেলে বিকল্প কর্মসংস্থানে ঢুকে পড়েছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সাগরে মাছ শিকারে যাবে। এ নিষেধাজ্ঞার সময় ডিমওয়ালা মাছ নিধনের ক্ষতিকর, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সম্পর্কে ধারণাসহ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এমন অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলে পল্লীর জেলে ও সচেতন মহল। বলেশ্বর পাড়ে জেলেদের এক রাতে জাল ও জলের রাজার কাব্য রচনা করেছেন তারা। জমকালো আয়োজনে জনপ্রিয় হাওয়া সিনেমার প্রদর্শন করা হয় পাশাপাশি স্থানীয় জেলেরাও তাদের নিজেদের কণ্ঠে গান গেয়েছেন।
স্থানীয় জেলে জাকির মুন্সি বলেন, বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রুহিতা পয়েন্ট একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কেবল শুরু করেছে যাত্রা। ঠিক এমন মুহূর্তে জেলেদের সচেতনতার জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলেদের মাঝে যেমন নতুন আনন্দ যুক্ত হয়েছে পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রটিরও পরিচয় বাড়ছে। ইব্রাহিম নামে অপর এক জেলে বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে আমরা অলস সময় পার করছি। এখানে নাটকের মাধ্যমে যেমন সচেতনতামূলক কিছু বার্তা পেয়েছি পাশাপাশি জেলেদের জন্য যে একটি সিনেমাও দেখানো হয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে এক সঙ্গে আমরা উপভোগ করেছি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা হয়েছে। দর্শনার্থী সংবাদকর্মী কাজী রাকিব, সুমন মোল্লা ও আরিফ তাওহিদ বলেন, জেলে পল্লীতে এমন আয়োজনকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। মৎস্য দপ্তরের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, সরকারের নির্দেশেনা অনুযায়ী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে নজরদারি রাখছি। সরকারের নির্দেশেনা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জেলে পল্লীতে ভিন্ন রকম আয়োজন করেছি। জেলেদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে এবং সম্পর্ক দৃঢ় করাসহ তাদের সচেতন করতেই এ আয়োজন। জাল ও জলের রাজার কাব্য রচনা করা হয়েছে বলেশ্বর পাড়ে।
জেএইচ