ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

শেয়ারবাজার

রিং শাইনের প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনিয়ম, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৩, জুলাই ১৪, ২০২৫
রিং শাইনের প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনিয়ম, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত

রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৬১তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ২৭ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৮২০টি শেয়ার ইস্যু করে ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা মূলধন বৃদ্ধি করে, যার ফলে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৯.৯৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৫.০৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে অর্থ জমা না দিয়েই প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যু বা বরাদ্দের মাধ্যমে ২৭৫ কোটি টাকার মূলধন বৃদ্ধির ঘটনায় সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে এবং এ বিষয়ে তদন্ত পরিচালিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় শুনানি শেষে রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে:

(ক) আইপিও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা ও বানোয়াট (ফলস অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেটেড) তথ্য সরবরাহ করার কারণে রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের উদ্যোক্তা, তৎকালীন পরিচালকগণ, তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তৎকালীন নির্বাহী পরিচালকসহ মোট ৯ জন এবং কোম্পানিটির তৎকালীন সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সংঘটিত প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সংঘবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইস্যু ম্যানেজারের পরিবর্তে আব্দুল কাদের ফারুকের সঙ্গে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংঘটিত রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের শেয়ার প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সেক্রেটারির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়াও রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড, উক্ত উদ্যোক্তা/তৎকালীন পরিচালকগণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারিসহ সংশ্লিষ্ট আব্দুল কাদের ফারুক ও অশোক কুমার চিরিমারসহ (ভারতীয় নাগরিক) মোট ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(খ) রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের ইস্যু ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা দুটি ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান (এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড ও সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড) আইপিও প্রসপেক্টাস এবং ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেটে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করায় সময়ে দায়িত্বে থাকা ইস্যু ম্যানেজার ও সিইওদের ৫ বছর পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু তাই নয়, উক্ত ইস্যু ম্যানেজারদের নিবন্ধন সনদ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরুরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(গ) রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের (২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) ফলস অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট প্রত্যয়ন করায় সংশ্লিষ্ট ৪টি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান (আহমেদ অ্যান্ড আখতার, শিরাজ খান বাসাক অ্যান্ড কো., মাহফেল হক অ্যান্ড কো., ও এটিএ খান অ্যান্ড কো.) এবং তাদের পার্টনারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(ঘ) রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের এক্সটারনাল প্লেসমেন্ট হোল্ডারগণ যারা কোম্পানির হিসাবে অর্থ জমা না দিয়ে অথবা আংশিক জমা দিয়ে তাদের নামে শেয়ার বরাদ্দ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(ঙ) রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের শেয়ার প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত যে দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছিল তার মূল হোতা হিসাবে দায়ী আব্দুল কাদের ফারুক এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট হিসেবে অশোক কুমার চিরিমারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ ছাড়া, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ওপর পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক মার্জিন লোনের মাধ্যমে সংঘটিত ২৯৬ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে এবং উক্ত কোম্পানিগুলোর তৎকালীন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিদর্শন প্রতিবেদনটি দুদকে পাঠনোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।