ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

আর্থিক প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের প্রবণতা বাড়ছে

শেখ নাসির হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪
আর্থিক প্রতিবেদনে তথ্য গোপনের প্রবণতা বাড়ছে

ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অধিকাংশ কোম্পানি তাদের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য গোপন করায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক তথ্য গোপনের এ প্রবণতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।


 
মূলত কোম্পানি আইন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন’১৯৮৭ এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড (আইএএস) অনুযায়ী নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে যেসব তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক, অধিকাংশ কোম্পানিই তা সরবরাহ করছে না।
 
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বিশ্ব ব্যাংককের অ্যাকাডেমিক ইনোভেশন ফান্ডের (এআইএফ) অধীনে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
 
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত বিভিন্ন খাতের মোট ৯৫টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল খাতের সর্বোচ্চ ১৮টি, প্রকৌশল খাতের ১৮টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৬টি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ১৩টি, জ্বালানি খাতের ৮টি, আইটি খাতের ৮টি, সিরামিকস খাতের ৩টি, সিমেন্ট খাতের ৪টি, এবং বাকি ৬টি সেবা খাতের কোম্পানি।
 
কোম্পানি আইন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন’১৯৮৭ এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড (আইএএস) অনুযায়ী মোট ১৯০ ধরনের বাধ্যতামূলক তথ্য দেওয়া হয়েছে কি-না সেটার ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
 
এ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন সঠিক নিয়মে তৈরি করছে না। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও প্রতিবেদন প্রকাশের নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে না। ফলে কোম্পানিগুলো অনেক তথ্য গোপন করে পার পেয়ে যাচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ কোম্পানি একই পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে এসব ক্ষমতাধর শেয়ারহোল্ডারদের কারণে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতে যথাযথ নিয়ম মানা হয় না।
 
গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে যেসব তথ্য গোপন করে তার মধ্যে রয়েছে- স্বল্পমেয়াদী অনিরাপদ ঋণ, ডেফার্ড ট্যাক্স পদ্ধতি, ডেফার্ড ট্যাক্স দায়, জমি ও ভবনের মূল্য, পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ইত্যাদি।
 
এমনকি ৯৫ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে প্রথম সারির কর্মকর্তাদের নাম এবং তাদের বেতন উল্লেখ বাধ্যতামূলক থাকলেও মাত্র ২০টি কোম্পানি সেসব তথ্য উল্লেখ করেছে।
 
৮১টি কোম্পানির জন্য Disclosure on the directors' উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও মাত্র ২৯টি এবং ৭৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩৭টি কোম্পানি স্বল্পমেয়াদী অনিরাপদ ঋণের পরিমান উল্লেখ করেছে।
 
৬৩টি কোম্পানির মধ্যে ২২টি কোম্পানি অনিশ্চিত ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। ২৯টি কোম্পানির মধ্যে ১০টি সম্পদ ও প্রকল্প গ্রহণের তথ্য দিয়েছে। ৬৪টির মধ্যে ৪১টি কোম্পানি রিজার্ভের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করেছে।
 
১৯টি কোম্পানির মধ্যে ৪টি exceptional or unusual credits or charge এর তথ্য উল্লেখ করেছে।
 
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচারক এবং কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমাদের কর্পোরেট ফিন্যান্স বিভাগ প্রতিনিয়তই কাজ করছে। কয়েকটি কোম্পানিকে অসত্য তথ্য দেওয়ার কারণে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, যখন কোনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি পাওয়া যায়, তখন আমরা কোম্পানির কাছে তার ব্যাখ্যা চাই। কোম্পানির দেওয়া ব্যাখ্যা যদি সন্তোষজনক না হয় বা ব্যাখ্যা না দেয় তখন আমরা অভিযোগটি বিএসইসি’র এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠাই। তারা আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
 
এদিকে, ডিএসই’র এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রায়ই বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি চিহ্নিত করে বিএসইসিতে পাঠাই। গত দুই বছরে প্রায় তিন শতাধিক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ছোট বড় অসঙ্গতি ধরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো পরীক্ষা করে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি-না তা আমাদের জানানো হয় না। ফলে আমরা কোম্পানির অনিয়ম সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারছি কি-না, তা বুঝতে পারি না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।