ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

কর্ণফুলী ইন্সুরেন্সের  ৯ লাখ টাকা জরিমানা!

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
কর্ণফুলী ইন্সুরেন্সের  ৯ লাখ টাকা জরিমানা!

ঢাকা: আইনের তোয়াক্কা না করেই বাকিতে বিমা ব্যবসা করে চলেছে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত এই কোম্পানিটি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা না নিয়ে সম্পূর্ণ বাকিতে একের পর বিমা পলিসি ইস্যু করেছে। যা বাকিতে ব্যবসা নামে পরিচিত। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিশেষ প্রতিবেদনে এই উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানির নবাবপুর শাখায় বাকিতে তিনটি পলিসি’র মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৯৬০ টাকার মেরিন (নৌ) ও ফায়ার (অগ্নি) বিমার কোম্পানির মানি রিসিপ্ট, ব্যাংক ডিপোজিট স্লিপ,ব্যাংক স্টেটমেন্ট, কাভারনোট ও পলিসি পরীক্ষা করে বাকিতে ব্যবসার অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ কারণে আইডিআরএ কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে মোট ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

যা বিমার টাকার ৮ গুণ।
 
আইন অনুযায়ী বাকিতে বিমা ব্যবসা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বাকিতে বিমা ব্যবসা বলতে বোঝায়, গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা না নিয়ে সম্পূর্ণ বাকিতে বিমা পলিসি ইস্যুর মাধ্যমে গ্রাহকের ঝুঁকি গ্রহণ করা। এভাবে বাকিতে বিমা ব্যবসা করা এ খাতের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনে বলে মনে করে আইডিআরএ। তাই আইন করে বাকিতে বিমা ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিমা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় প্রতিটি বিমা কোম্পানি বাকিতে বিমা ব্যবসায় ব্যস্ত ছিল। আইডিআরএ’র নিয়ন্ত্রণের কারণে এখন বাকিতে ব্যবসা করার প্রবণতা কমেছে। শাস্তি ঠিক মতো হলে বিমা কোম্পানিতে অনিয়ম থাকবে না বলেও মনে করেন তারা।
 
এদিকে জরিমানায় আপত্তি তুলে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি জরিমানা প্রত্যাহারের জন্য আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
 
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিয়ম ভঙ্গ করে কোম্পানির নবাবপুর শাখায় ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে একটি প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার ৫০০ টাকার বিমা দেখানো হয়। এরপর আইডিআরএ’র একটি দল নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়ে মানি রিসিপ্ট, ব্যাংক ডিপোজিট স্লিপ,ব্যাংক স্টেটমেন্ট, কাভারনোট ও পলিসি পরীক্ষা করে বাকিতে বিমা ইস্যুর করার প্রমাণ পায়।  

এরপর এনিয়ে গত ৫ এপ্রিল ২০১৬ সালে আইডিআরএ’র বোর্ড রুমে কোম্পানির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে প্রমাণিত হয় যে, বিমা আইন ২০১০ এর ১৮ এর ৩ ধারা লঙ্ঘন করে কোম্পানিটি বাকিতে ব্যবসা করেছে। এ অপরাধে বিমা আইন ১৯৫৮ এর ৪৪-৫৫ ধারায় জরিমানা করা হয়।
 
একই দিনে কোম্পানিটির একই শাখার ২০১৫ সালের মে মাসে ৯৫ হাজার ৪৬০ টাকা নৌবিমা এবং অক্টোবর মাসে ১১ হাজার টাকা বাকিতে অগ্নিবিমার বিষয়েও আলাদা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কোম্পানির এমডি, শাখা ব্যবস্থাপক এবং হিসাব কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধি দল এবং আইডিআরএ’র পরিদর্শক দল অংশ নেয়।

‍এ সময় আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ, সাবেক সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুস, জুবের আহমেদ খান, সুলতান উল-আবেদিন মোল্লা এবং বর্তমান সদস্য মুর্শিদ আলম উপস্থিত ছিলেন। দুটি পলিসিতে বাকিতে ব্যবসার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। বিমা আইন ২০১০ এর ১৮ এর ৩ ধারা লঙ্ঘন করে বাকিতে ব্যবসা করায় ১৯৫৮ এর ৪৪-৫৫ ধারার শাস্তির বিধান অনুসারে কোম্পানিকে তিন দফায় ২ লাখ করে ৬ লাখ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাফিজউল্লাহকে ৫০ হাজার করে দেড় লাখ,  শাখা ব্যবস্থাপক গোপালচন্দ্র সাহাকে ৫০ হাজার টাকা করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সবমিলে তিনটি পলিসিতে অনিয়মের জন্য কোম্পানিকে মোট ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।  

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য বাংলানিউজকে জানান, কোম্পানিটির বাকিতে বিমা ব্যবসার প্রমাণ মিলেছে। আইন অনুসারে কোম্পানি, এমডি এবং শাখা প্রধানকে ৩ লাখ করে মোট ৯ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে কোম্পানির সাবেক এমডি হাফিজউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বাকিতে ব্যবসার কারণে কোম্প‍ানি, কোম্পানির এমডি এবং শাখা ব্যবস্থাপককে জারিমানা করেছে কর্তৃপক্ষ। যা যৌক্তিক নয়।
 তার বক্তব্য: একই গরু কয়বার জবাই করা যায়? এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বাকিতে ব্যবসায় তিনবার জরিমানা করেছে আইডিআরএ। শুধু তাই নয়, একই কারণে শাখার ব্যবস্থাপক এবং এমডিকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপককে জরিমানা করলে এমডিকে কেন আবার জরিমানা করতে হবে?
 
‘তিনটি যুক্তি উল্লেখ করে আমি জরিমানা বাতিলের আবেদন করেছি’ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অদ্ভুত কাণ্ড! শুনানিতে আমাদের ডাকলেন, স্বাক্ষরও নিলেন। কিন্তু আমাদের কোনো কথাই শুনলেন না! জরিমানা করে দিলেন। বলুন তো ছেলের অপরাধের জন্য বাপের শাস্তি হয়?’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এমএফআই/আরআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।