ঢাকা, শনিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬ মহররম ১৪৪৭

বসুন্ধরা শুভসংঘ

স্থায়ীভাবে অভাব দূর করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩৫, জুলাই ১২, ২০২৫
স্থায়ীভাবে অভাব দূর করছে বসুন্ধরা গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় দরিদ্র পরিবারের নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ

বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সারা দেশের অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের অসচ্ছল নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে সেলাই মেশিন।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের দরিদ্র নারীদের পাশে দাঁড়াল বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ জন অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়েছে।

বিনামূল্যে সেলাই মেশিন পেয়ে অনেকে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন। কোনো বিধবা নারী পেয়েছেন বাঁচার অবলম্বন, দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পথ। তাঁরা বলছেন, এখন বাড়িতে বসেই সংসারের কাজ বা পড়ালেখার পাশাপাশি সেলাইয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন, যা দিয়ে তাঁদের নানা কষ্ট লাঘব হবে। আর অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা বসুন্ধরার এই কাজকে ‘মহৎ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এই সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলার মদনপুর বৈরাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ১৫ অসচ্ছল নারীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রুহুল আমিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফারহান উদ্দিন আহমেদ পাশা, কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায়, উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি হাসান আব্দুল মালেক, কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাইফুর রহমান ও কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিতাস আলম।
লালমনিরহাট শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠের নীলফামারী প্রতিনিধি ভুবন রায় নিখিল, নিউজ২৪ টিভির লালমনিরহাট প্রতিনিধি রবিউল হাসান ও উপকারভোগী সুস্মিতা চক্রবর্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা মো. মামুন, কালের কণ্ঠ মাল্টিমিডিয়ার উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সোহেল রানা স্বপ্ন, ডিবিসি নিউজের লালমনিরহাট প্রতিনিধি নিয়াজ আহমেদ সিপন, স্থানীয় সাংবাদিক সাজু মিয়া, শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন আরাফাত রাফি, সদস্য তাহমিদ আরেফিন সাজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আমিনুর রহমান প্রমুখ।

কালীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিতাস আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বসুন্ধরা গ্রুপ নানা ধরনের সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে। আমি নিজেও এ ধরনের কয়েকটি কাজে উপস্থিত থেকেছি, অনেক ভালো লেগেছে। গ্রুপটির ভালো কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো অসচ্ছল নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ। যাঁরা সেলাই মেশিন পেয়েছেন, তাঁরা যদি এগুলো ফেলে না রেখে নিয়মিত কাজ করেন, তাহলে অবশ্যই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। ’

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুর রহমান বলেন, ‘নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমন মহতী উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
এটি সুন্দর এবং স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করার মতো একটি উদ্যোগ। বিনামূল্যে বিতরণ করা এসব সেলাই মেশিন দিয়ে অনেকের অভাব দূর হবে। এর আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও জোগাড় হবে। ’

কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘গরিব মানুষের জন্য এ ধরনের সহায়তা প্রশংসার দাবি রাখে। এ কাজের মাধ্যমে বসুন্ধরা একটি মহৎ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ’ উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি হাসান আব্দুল মালেক বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের স্লোগানের মতো সত্যি দেশ ও মানুষের জন্য যে কাজ করে তার উত্কৃষ্ট প্রমাণ আজকের এই আয়োজন। সেলাই মেশিন দিয়ে এসব মানুষের অভাব স্থায়ীভাবে দূর হবে। ’

হার না মানা সুস্মিতা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ

বাবা সমর চক্রবর্তী ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর আয়েই চলত সংসার ও তিন সন্তানের লেখাপড়া। আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত্যুতে স্ত্রী লক্ষ্মীরাণী চক্রবর্তী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। দোকান চালানোর মতো আর কেউ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায়।

সেই দোকান ভাড়া দিয়ে সামান্য যে টাকা পাওয়া যেত, তা দিয়ে কোনো রকমে চলার চেষ্টা করে পরিবারটি। অনটনের কারণে একসময় পড়ালেখা ছাড়িয়ে বড় মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি মেজো মেয়ে সুস্মিতা চক্রবর্তী। বাবা যখন মারা যান, তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতী গ্রামে। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সুস্মিতা প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু আয় করার চেষ্টা শুরু করেন। সেটি আজও চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন স্থানীয় একটি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিতা। নিজের লেখাপড়া আর প্রাইভেট পড়ানোর মধ্যেই থেমে থাকেননি তিনি। কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন পণ্য নিজে বানিয়ে অনলাইনে বিক্রির চেষ্টা করছেন। এসব পণ্যের অনেকগুলো আবার সেলাইসংক্রান্ত। কাজের পাশাপাশি ছোট ভাইকেও লেখাপড়া করাচ্ছেন।

ভাইটি এবার এইচএসসি দিচ্ছে। সুস্মিতার ভাষ্য, ‘বাবার মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। আমার প্রবল চেষ্টা ও আগ্রহ ছিল। তাই আমি কখনো হতাশ হয়ে পড়িনি। কষ্ট করে হলেও নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছি, ছোট ভাইটিকে পড়াচ্ছি, মায়ের সংসারেও সাহায্য করার চেষ্টা করছি। ’ একটি সেলাই মেশিনের অভাব দীর্ঘদিন ধরে অনুভব করছিলেন তিনি।

সুস্মিতা বলেন, ‘আমি অনলাইনে বিক্রির জন্য যেসব কাজ করি, সেগুলো অনেকটাই সেলাই রিলেটেড। এই মেশিনের মাধ্যমে আমি এখন থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটি দিয়ে আমি আমার আয় আরো অনেক বাড়াতে পারব, যা দিয়ে ছোট ভাইসহ নিজের লেখাপড়া চলবে। পরিবারকেও এগিয়ে নিতে পারব। বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। ’

রাশিদার সন্তানদের লেখাপড়াও চলবে নিশ্চিন্তে

‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। না পারছি তাদের ঠিকভাবে খাওয়াতে, না পারছি লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে। এই বিষয়ে কাউকে কিছু না পারছি বলতে, পারছি না সহ্য করতে। ’ তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন রাশিদা বেগম।

তাঁর দুচোখ দিয়ে ততক্ষণে গড়িয়ে পড়ছে পানি। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রয়াত এন্তাজ আলীর স্ত্রী রাশিদা। তাঁর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। মেয়ে পড়েন অনার্সে। স্বামী বেঁচে থাকতেই বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কালীগঞ্জ বাজারে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান করতেন তাঁর স্বামী। দুই বছর আগে তিনি মারা গেলে পরিবারটি বিপাকে পড়ে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।

বাধ্য হয়ে ছোট ছেলেটি পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকানের হাল ধরে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালায়। ছেলের এসএসসি পরীক্ষার কারণে প্রায় পাঁচ মাস দোকান বন্ধ রেখেছিলেন রাশিদা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। একটি বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছিলেন।

তাঁকে সেই পথ দেখাল বসুন্ধরা শুভসংঘ। বিনামূল্যে তিন মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পেয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপহার। এটি শুধুই একটি মেশিন নয়, তাঁর কাছে যেন বাঁচার অবলম্বন। বিধবা এই নারী বলেন, ‘সেলাইয়ের কাজ জানতাম না, ছিল না মেশিনও। এখন দুটিই দিল বসুন্ধরা। এই মেশিন চালিয়ে আয় করার সব চেষ্টা করব, যাতে সন্তানদের খাওয়াতে পারি, লেখাপড়া করাতে পারি। যারা আমাকে এই পথ দেখিয়েছে, তাদের জন্য মন থেকে দোয়া করব। ’

মায়ের ‘স্বপ্ন’ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে সামিত

ফোকলা দাঁত। মাথা ন্যাড়া। হাসতে থাকে কারণে-অকারণে। নাম তার সামিত। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিত দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। বোন পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। মা সামিনা আক্তার শামু সেলাই মেশিন পাবেন—এই খবর আগেই জেনেছিল। তাই আগে থেকেই বায়না ধরেছিল যেদিন মা মেশিন আনতে যাবেন সেদিন তাকেও নিয়ে যেতে হবে।

ছেলের বায়না পূরণ করতে তাকেও নিয়ে এসেছিলেন মা। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে ও বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত সেলাই মেশিন বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা যতক্ষণ চলছিল, কক্ষের বাইরে ঘোরাফেরা করছিল সামিত। মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে উঁকি মারছিল। একসময় তার মাসহ ১৫ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন, অপেক্ষার অবসান হয় শিশুটির।

দৌড়ে সেই কক্ষে ঢুকে পড়ে সে। মেশিনের এক পাশে মাকে ধরতে দিয়ে অন্য পাশ নিজেই ধরে। এরপর সেই ফোকলা দাঁতে হাসতে হাসতে বাইরে বেরিয়ে আসে, যদিও মেশিনটি বয়ে নিয়ে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর, কিন্তু সে নাছোড়বান্দা! মায়ের সঙ্গে কিছুটা হাঁটছে আবার খানিকক্ষণ ‘দম’ নিচ্ছে। এভাবে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে ফুটবল মাঠ পেরিয়ে চলে যায় বাড়ির পথে। তার মা বারবার মেশিনটিকে রিকশায় বা ভ্যানগাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নারাজ তাঁর ছেলে! সামিতের ভাষ্য, ‘আমার মা নতুন মেশিন পেয়েছে, আমি কাউকে এটাতে হাত দিতে দেব না। ’

যেন মায়ের স্বপ্ন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট সামিত। সামিনা আক্তার শামু বলেন, ‘আগে থেকেই সামান্য কিছু কাজ জানতাম, কিন্তু মেশিনের অভাব ছিল। এখন সবকিছু শেখার পর মেশিনও পেলাম। আমার সংসারে আয়ের একটি পথ হলো। ’

বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

সুকান্ত সরকার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কালীগঞ্জ, লালমনিরহাটএকটি সেলাই মেশিন শুধু একটি যন্ত্র নয়। একটি সেলাই মেশিন হতে পারে স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার। এই মেশিন হতে পারে অল্প বয়সে বিধবা হওয়া কোনো নারী, স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা, বাবার বাড়িতে নিগৃহীত অথবা অসচ্ছল কোনো পরিবারের শিক্ষার্থীর বাঁচার অবলম্বন। সেলাই মেশিনের ঘুরতে থাকা চাকার সঙ্গে বড় হতে পারে কোনো নারীর স্বপ্ন, যিনি একদিন হয়ে উঠতে পারেন একজন নামকরা উদ্যোক্তা, হাজারো নারী উদ্যোক্তার পথপ্রদর্শক।
ফলে উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ, সেই রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রেও এমন অসামান্য উদ্যোগগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। তাই এমন মহতী উদ্যাগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বৈষম্যহীন সমাজ আপামর জনসাধারণের অন্যতম চাওয়া। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি। সেই বাস্তবতায় বসুন্ধরা গ্রুপের নেওয়া এ ধরনের উদ্যাগগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিনপ্রাপ্ত নারীরা পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যদের পোশাক তৈরির মাধ্যমে আয় করবেন, স্বাবলম্বী হবেন। তখন তাঁরা পরিবারের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এতে নারী নির্যাতন, নারীকে অবহেলা করার মতো ঘটনাগুলো হ্রাস পাবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের মতো দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়িক-সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন পদক্ষেপ অব্যাহত রাখলে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ অত্যন্ত সহজ হবে। একেকটি পরিবার এগিয়ে গেলে সমাজ এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে দেশ। তাই সম্মিলিতভাবে এই দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

এই নারীরা একদিন সমাজের মডেল হবেন

মাওলানা রুহুল আমিন, আমির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কালীগঞ্জ, লালমনিরহাটআমাদের দেশের শিল্পপতিরা প্রতিদিন নাশতা খেতে বা সামান্য কাজে যত টাকা ব্যয় করেন, তা দিয়ে যদি সাধারণ মানুষের ভালো করার কথা চিন্তা করেন, তাহলে সমাজের জন্য তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁদেরই একজন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপ বা বসুন্ধরা শুভসংঘ ইচ্ছা করলে অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ না করে এই টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারত।

কিন্তু তারা সেটি না করে প্রান্তিক-দরিদ্র নারীদের কথা চিন্তা করে এই মহতী আয়োজন করেছেন। এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। ইসলামে নারীদের খাটো করে দেখা হয়নি। সমাজেও অর্ধেক নারী ও অর্ধেক পুরুষ।

ফলে তাঁদের বাদ দিয়ে সমাজের উন্নয়ন আশা করা যায় না। নারীদের বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়নই আশা করা যায় না। আজকে যাঁরা মেশিন পেলেন, তাঁরা সংসারের কাজ শেষে যদি সেলাইয়ের কাজ করেন, তবে তাঁদের সংসারে অনেক উন্নতি হবে। আপনারা একদিন মডেল হবেন, আপনাদের দেখে সমাজের আর দশজন মা-বোন বেঁচে থাকার পথ পাবেন।

অসচ্ছল নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সে জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। তারা দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের উন্নতির জন্য যে কাজগুলো করে যাচ্ছে, সেটি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আশা করি, বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা নিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ দেশজুড়ে নানা সামাজিক কাজ অব্যাহত রাখবে।

দারিদ্র্য দূর করতে বসুন্ধরা গ্রুপের অনন্য উদ্যোগ

ফারহান উদ্দিন আহমেদ পাশা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, বিএনপি কালীগঞ্জ, লালমনিরহাটগ্রামীণ দরিদ্র নারীদের পাশে দাঁড়ানোর এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা গ্রুপ যে চিন্তা থেকে বাংলাদেশের একেবারে শেষ প্রান্তের জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে, তাদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পিছিয়ে পড়া এই উপজেলায় অসচ্ছল মানুষ যেমন আছে, তেমনি নদীভাঙন-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এসব পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারছে না, নানাভাবে সমাজে লাঞ্ছিত হচ্ছে।
সেই দিক চিন্তা করে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের সামাজিক সংগঠন শুভসংঘের মাধ্যমে এখানকার যে উপকারভোগীদের বাছাই করেছে, এরপর তিন মাস ধরে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—এটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসচ্ছল এসব নারী এখন থেকে বাড়িতে বেকার সময় না কাটিয়ে রোজগার করে দুবেলা ঠিকভাবে খেতে পারবেন। উন্নতি করতে পারবেন সংসারের। লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে পারবেন সন্তানদের।
ফলে এই পরিবারগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সুফল পাবে আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ। একসময় স্বাবলম্বী এসব নারীকে দেখে পিছিয়ে পড়া অন্য নারীরাও আশাবাদী হবেন, সন্ধান পাবেন নতুন পথের। সেলাই মেশিন হাতে পাওয়া এই নারীদের হাত ধরে একদিন আরো অনেকে স্বাবলম্বী হবেন। সচ্ছলতা ফিরবে তাঁদের পরিবারে।
মেশিনপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষার্থী যেমন নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই এখন থেকে জোগাতে পারবেন, তেমনি কোনো নারী হয়তো সংসারের নানা কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে আয়ের মাধ্যমে স্বামীকে সাহায্য করতে পারবেন। স্থায়ীভাবে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে বসুন্ধরার এটি একটি অনন্য উদ্যোগ।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বসুন্ধরা শুভসংঘ এর সর্বশেষ