ঢাকা: পুরো বিষয়টি ছিল অনাকাঙ্খিত, হুট করে আবাহনীর কাছে ২-০ গোলে জাতীয় দলের পরাজয় কোন ভাবেই কাম্য নয়। তাও কিনা বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের ঠিক ১০ দিন আগে! কিন্তু সোমবার বাংলাদেশ দল সম্পর্কে সমস্ত খুটিনাটি জেনেই যে মাঠে নেমেছে জর্জ কোটানের শিষ্যরা।
নেপাল, শ্রীলঙ্কার পরে জাপান ও বুসান আইপার্কের মতো দলের সাথে খেলেছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। জয়-পারজয়ের পূর্ন স্বাদ তারা আস্বাদন করেছে। তাই আবাহনীর সাথে ভালো খেলার প্রত্যয় ছিল জাতীয় দলের। কিন্তু আবাহনীর তিন হাঙ্গেরিয়ান ফুটবলার ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন অনেকটাই। আর তাদের মাথার উপর বটবৃক্ষ হয়ে আছেন সাফ ফুটবলে স্বর্ন জয়ী সফল সাবেক কোচ জর্জ কোটান। তাই শক্তি-সামর্থ-যোগ্যতা দিয়ে কোন ভাবেই তারা আবাহনীকে পরাস্ত করতে পারেনি।
দুইটি গোলই করেন হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড সাবোলোস সার্বা। আরও বড় ব্যবধানে হারতে পারতো জাতীয় দল। জোড়া গোল করা সার্বা একাই মিস করেছেন আরও গোটা তিনেক সহজ সুযোগ। এর মধ্যে দুবার তিনি গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে পাঠিয়ে দেন। ওদিকে সুযোগ নষ্ট করেছে জাতীয় দলও। উইঙ্গার জাহিদ একটি সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে হারের ব্যবধান কমাতো মামুনুলরা।
কিন্তু স্বপ্নবাজ মানুষ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। পরাজয়ের পরের দিন দলের এই মানসিক বিপর্যয়ের সময় তিনি পাশে দাঁড়ালেন। হয়তো নিজেও খেলোয়াড় ছিলেন বলে ফুটবলারদের বর্তমান অবস্থা বুঝতে পেরেছেন। তাইতো মঙ্গলবার পুরো টিমকে ডেকে পাঠানো হয় ঢাকাতে। বিকেএসপিতে অনুশীলন ফেলে তারা আসেন বাফুফে ভবনে। কথা হল কাজী সালাহউদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে।
খেলোয়াড়দের সাথে কি বিষয়ে কথা হলো বাফুফে সভাপতির সঙ্গে? দলের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, 'আমাদের উপর রাগ করেছেন তিনি। জানতে চাইলেন কেন পরাজিত হলাম? তবে আমরা তার সামনে হারের জন্য কোন কারণই দাঁড় করাইনি। শুধু বলেছি, খারাপ খেলেছি বলেই হেরেছি। তবে আমরা খেলোয়াড়রা তাকে কথা দিয়েছি, গোল্ড কাপের সেমিফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আপনার সঙ্গে কথা বলবো। '
তিনি আরো যুক্ত করেন, 'আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি সেমিফাইনালে উঠতে পারি এটি আমাদের ফুটবলের জন্য সত্যি ইতিবাচক হবে। পুরো দলের অবস্থাই ভালো আছে। ভালো খেললে অবশ্যই সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব। '
আন্তর্জাতিক আসরটি দরজায় কড়া নাড়লেও ফিটনেস ঘাটতিটা রয়েই গেছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে। এ বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ সাইফুল বারী টিটুও, ‘দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস শতভাগ নেই। কিছুটা ক্লান্তিও ছিল। আর আমরা এই ম্যাচটাতে নেমেছিলাম কোনরকম পরিকল্পনা ছাড়াই। আবাহনীর বিদেশি খেলোয়াড় কিংবা পুরো দল সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না। তারপরও আমাদের গোল খাওয়া উচিত হয়নি। আমরা বেশকটি ভাল সুযোগ পেয়েও সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। তবে আশা করছি গোল্ডকাপের আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারব। ’
এ ম্যাচে সব খেলোয়াড়কেই মাঠে নামিয়েছিলেন টিটু। তবে আবাহনীর তিন হাঙ্গেরিয়ান এবং ঘানার এক ফুটবলার সম্পর্কে ধারণা ছিল না তাদের। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় আবাহনীর বিদেশিরা। তবে আবাহনীর এই চার বিদেশি যে ভাল খেলেছেন, তা স্বীকার করেন টিটু, ‘ম্যাচের পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছেন আবাহনীর বিদেশিরা। তারা বেশ ভাল খেলেছেন। ’
এখনও সাবেক কোচ ক্রুইফের ফেরার নাম নেই। আর স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় দল তাদের সামর্থের পরিচয় ইতি মধ্যেই দিয়ে ফেলেছে! সন্ধ্যা নামতেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলারদের নিয়ে বাসটি রওনা দিল বিকেএসপির উদেশ্যে। সেই সাথে বাংলাদেশের কোটি ফুটবল প্রেমীদের স্বপ্নও, এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল দলটির শেষ গন্তব্য কোথায়?
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ২০ জানুয়ারি ২০১৫