বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক স্তরের এক তরুণ কুস্তিগিরের দণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এমনটাই জানিয়েছে 'আল-জাজিরা'।
২০১৮ সালে ইরানের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে পানি কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মী হাসান তুর্কমানকে হত্যার অভিযোগে শনিবার নাভিদ আফকারি নামের ২৭ বছর বয়সী কুস্তিগিরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে এ মামলার রিভিও আবেদন খারিজ করে দেয় ইরানের সর্বোচ্চ আদালত।
আফকারি কুস্তিতে ইরানের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ইরানে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
ইরানের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাভিদ ও তার দুই ভাই। সেসময় দেশের বেহাল আর্থিক অবস্থা, বেকারত্ব ও দুর্নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল হাজারো মানুষ।
২০১৮ সালের ২ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে এক নিরাপত্তা কর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ ওঠে নাভিদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে নাভিদ ও তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারকার্য শেষে তার দুই ভাইয়ের একজনের ৫৪ বছর ও আরেকজনের ২৭ বছর জেল হয়। কিন্তু নাভিদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
নাভিদের সাজার প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল সারা বিশ্বের ক্রীড়ামহল। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বাখ ইরান সরকারের কাছে নাভিদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই আহ্বান জানিয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প।
সেসময় সারা বিশ্বের ৮৫ হাজার অ্যাথলিট ইরান সরকারের কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন। ইরানের অলিম্পিক কমিটি, বিশ্ব রেসলিং ফেডারেশন এবং ইরানিয়ান রেসলিং ফেডারেশনও একই অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের শহর শিরাজে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নাভিদ আফকারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তার আইনজীবীর দাবি, জেলখানায় অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে জোর করে নাভিদের কাছ থেকে খুনের স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সঠিক তথ্যপ্রমাণও নাকি হাজির করা হয়নি। এমনকি তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে পরিবারের সঙ্গে তাকে শেষ সাক্ষাতও করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তার আইনজীবীর।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশলান এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এক বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাটিকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
এমএইচএম