ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

এই পর্যটন মৌসুমে ঘুরে আসুন বাংলার দার্জিলিং

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এই পর্যটন মৌসুমে ঘুরে আসুন বাংলার দার্জিলিং

বান্দরবান (নীলাচল) থেকে ফিরে: বাংলা পঞ্জিকায় মাঘ মাস চললেও শীতের বুড়ির বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে এরই মধ্যে। সেই কনকনে শীতের দাপট আর নেই।

শীতের আড়মোড়া ভেঙে আবারও যেন সজীব হয়ে উঠেছে এই শ্যামল প্রকৃতি। বিরাজ করছে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া।  

আর এরমধ্যেই পুরোদমে চলছে পর্যটন মৌসুম। রূপসী বাংলা যেন তার নির্মল সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।  

দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি ভাঙতে তাই এখনই বের হয়ে যেত পারেন ঘরের বাইরে। দেশের মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন আপনার পছন্দের কোনো দর্শনীয় স্থানে।  

আজ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো দেশের দক্ষিণে থাকা সেইরকম একটি বিনোদন কেন্দ্রের আদ্যোপান্ত।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা এমনই একটি জেলা। দেশের পর্যটন শিল্পকে যে কয়েকটি জেলা সমৃদ্ধ করেছে তার মধ্যে বান্দরবান অন্যতম। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের সব সময়ই টানে সবুজ পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই বান্দরবান জেলা। ৪ হাজার ৪৭৯ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট্ট বান্দরবান জেলাকে বলা হয় শৈল শহর। আমাদের দার্জিলিং।  

যার চারিদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এখানকার পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজেই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এ যেন নৈসর্গিক এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে গেলে যে কেউই ঘন সবুজের মায়া বেষ্টিত প্রকৃতির প্রেমে পড়বেন। তাই আজ জানাব পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা সেই সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির অসীম ও অনন্ত সৌন্দর্যের কথা।

বান্দরবান আসলে আপনি প্রথমেই যেতে পারেন নীলাচল। তবে এছাড়াও বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘলা ও নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণ মন্দির, আমিয়াখুম জলপ্রপাত, কিয়াচলং লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, কেওক্রাডং, চিম্বুক পাহাড় ও পাহাড়ি গ্রাম, চিংড়ি ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, জীবননগর, ডামতুয়া ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, তমা তুঙ্গী, তাজিংডং, ত্লাবং ঝর্ণা, নাফাখুম জলপ্রপাত, বগাকাইন হ্রদ, বুদ্ধ ধাতু জাদি, রাজবিহার এবং উজানিপাড়া বিহার, রেমাক্রী, লুং ফের ভা সাইতার ও শৈলপ্রপাত।

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে চাঁন্দের গাড়ি করে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচলে যেতে হয়। শহর থেকে এই পর্যটন কেন্দ্রের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। মূলত পাহাড়ের বুকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতেই পর্যটকরা এখানে বেশি যান। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ও ভীড় থাকে এই নীলাচলে। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁন্দের  গাড়িতে চেপে রওনা দিতে হয় নীলাচলে।

আর এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি- বান্দরবান শহরে আসলে অবশ্যই দলবেঁধে আসা ভালো। কারণ এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য চাঁন্দের গাড়ি অথবা সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে হয়। তাই একা আসলে খরচ বেশি পড়বে। শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য সিএনজি, চাঁন্দের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। এখানে সিএনজি করে যাওয়া-আসার জন্য ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা আর, জীপ ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আর চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করতে ১ থেকে ২ হাজার টাকা লাগে। তবে একটু দরদাম করলে ভাড়া কমানোও যায়।

এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামের এই শহরের সরু আকাঁবাঁকা উঁচু পথ ধরে যত সামনে যেতে থাকবেন ততই যেন অবাক হতে থাকবেন। মনে হবে এখানে প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে আপনার জন্য। চারিদিকে কেবলই মুগ্ধতার ছড়াছড়ি। আর নীলাচলের উঁচু চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি পুরো বান্দরবান শহরটাকেই দেখতে পারবেন।  

সূর্যোদয়ের পর শুভ্র মেঘের ভেলাকে স্পর্শ করতে পারবেন এখানে দাঁড়িয়েই। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত বা শীত-বসন্ত নেই এখানে এলেই পাহাড়ের বুকে দেখা মিলবে মেঘমালার। একটু চোখ বন্ধ করে ভাবলেই মনে হবে আপনি কোনো মেঘের রাজ্যে চলে এসেছেন। এমনই আনন্দ অনুভব মিলবে এই পাহাড়ের চূড়ায়।

এই নীলাচল দেশের এমনই একটি পর্যটনকেন্দ্র যেখানে আসলে আপনি ছোট্টো করে হলেও এই পৃথিবীর সৌন্দর্যকে অনুভব করেতে পারবেন। পারবেন প্রাণ ভরে আনন্দ উপভোগ করতেও। নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় আর মেঘের অপূর্ব মিতালী। রয়েছে তুলনাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সকালে মেঘের ভেলার খেলা। আর পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত। রোজ এই দুসময়ই সবুজে ঘেরা নীলাচল ধারণ করে তার পূর্ণ রূপ।

এখানে যাওয়ার পরপরই বুঝতে পারবেন কেন এই নীলাচল পর্যটকদের এত বিমোহিত করে। যেখানে তাকাবেন, যতদূর তাকাবেন শুধু পাহাড় আর পাহাড়। চারিদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। আর পাহাড়ের ঢালে ঢালে নিপুণভাবে সাজানো হয়েছে দেশের অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্রটি।

একটি পাহাড় থেকে আরেকটি পাহাড়ের সৌন্দর্য সম্পূর্ণ আলাদা। এ যেন সৃষ্টিকর্তার এক অনুপম সৃষ্টি। দেখলে শুধু দেখতেই মন চাইবে। মন চাইবে হারিয়ে যেতেও। ভাজে ভাজে কেবলই সবুজ সৌন্দর্য। তাই একে বাংলার দার্জিলিং বললেও ভুল হবে না। আর এজন্যই হয়তো স্থানীয়রা একে তার সৌন্দর্যের এমন উপাধি দিয়েছেন। যারা নানান কারণে দার্জিলিং যেতে পারছেন না তারা অন্ততঃ এই নীলাচল দেখে আসতে পারেন।

নীলাচল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের ওপর অবস্থিত। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকেই দেখা যায়। মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে এখানে দূরের কক্সবাজারের নীল সমুদ্র সৈকতও হাতছানী দেয় পর্যটকদের। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলো সমানভাবে বিমোহিত করে পর্যটকদের।

এই নীলাচলে মেঘমালা খেলা করে হাতের কাছেই। এখানে পর্যটকরা মূলত আসেন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য। আর এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি- এই রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নীলাচলে রয়েছে কয়েকটি বিশ্রামাগার ও রিসোর্ট। নীলাচলে পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে পারেন।  

পরবর্তীতে শুধুমাত্র যারা রিসোর্টে রাত যাপন করেন তাদেরই এখানে থাকার অনুমতি মিলে। তাই যারা মেঘের দেখা পেতে চান এবং পাহাড়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে চান তাদেরকে এক হলে এই রিসর্টে থাকতে হবে আর না হলে তবে খুব ভোরে অথবা পড়ন্ত বিকেলে যেতে হবে এই নীলাচলে।

নীলাচলে থাকতে চাইলে প্রতিটি কটেজে দুইটি করে রুম আছে। প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ৩ হাজার টাকা। আগে থেকেই যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এছাড়া নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছে বলেই বান্দরবান শহরের হোটেল ও রিসোর্টগুলোতেও থাকা যাবে। আর এমন সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য থাকতেই পারেন।

যেভাবে যাবেন নীলাচল

রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকার শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস চট্টগ্রামের বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া নন-এসি ৭০০-৮০০ টাকা ও এসি ১০০০-১৬০০ টাকা। রাত ৯টার দিকে রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন বান্দরবান। এছাড়া ট্রেন বা প্লেনেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার যাবেন। সেখান থেকে বাসে করে এই বান্দরবান জেলায় যেতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময় : ১৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এসএস/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।