ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বিলের জমিও দখল করছে আম

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৮
বিলের জমিও দখল করছে আম বাগান প্রসারিত হতে হতে ধান, গম, সবজি চাষের জমি ক্রমে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে। ছবি: ডিএইচ বাদল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: আমবাগানের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিলের জমি দেখা মেলা ভার। অন্তত প্রধান সড়কসহ কোনো রাস্তার ধারে চাষের জমি নেই বললেই চলে। বাগান প্রসারিত হতে হতে ধান, গম, সবজি চাষের জমি ক্রমে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে। বিষয়টি যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে, তেমনি দেখা দিতে পারে সমস্যাও।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। এ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল যে আম তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমের বাগান বেড়ে যাওয়া সেই অর্থে ইতিবাচক। কিন্তু অন্যদিকে চিন্তা করলে কমছে ধানের জমি। কৃষি অধিদপ্তরে সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় চাষের জমি রয়েছে ৫০ হাজার হেক্টর। আর আম চাষ হচ্ছে ২৯ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। এ অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কিংবা ফাঁকা জায়গায় আম গাছ দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মালদাহের মতো এখানকার মাটিও স্বাদের আমের জন্য উপযুক্ত।
 
কৃষিজোন সংক্রান্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা বা নীতিমালা আমাদের নেই। তাই আম চাষে বাধা নেই। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যের ভারসাম্য ঠিক থাকবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।  
 
বাগান প্রসারিত হতে হতে ধান, গম, সবজি চাষের জমি ক্রমে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে।  ছবি: ডিএইচ বাদল
এ বিষয়ে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বলেন, গত তিন বছরে জেলায় আম চাষ বেড়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হলে আমে লাভ বেশি। যদিও এখানকার জমিতে তিন ফসল হয়। তাই কৃষক ঝুঁকছে আম চাষে।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি নতুন জমিতে আমের পাশাপাশি ধান বা অন্য ফসল চাষ করা যায় সাধারণত ৭-৮ বছর। এরপর ওই বাগানে অন্য কোনো ফসল হয় না। শুধু আম ছাড়া।  
 
‘আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে। নাচোলের ওদিকে প্রচুর কৃষিজমি এখনও আছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক জোনের কথা ভাবতে হবে। দিনাজপুরে যদি ধানের জমিতে আম চাষ না হয়, আর চাঁপাই যেহেতু আমের জন্য ভালো সেহেতু এখানে যদি আম চাষে বাধা না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটা সরকার নির্ধারণ করে দিতে হবে খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে। সরকার চাইলে সিলেট অঞ্চলের অনেক পতিত জমিকেও ব্যবহার করতে পারে। ’
 
বাগান প্রসারিত হতে হতে ধান, গম, সবজি চাষের জমি ক্রমে ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে।  ছবি: ডিএইচ বাদল
আম চাষ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আম চাষে ঝামেলা কম, লাভ বেশি। আর ধান বা অন্য চাষের জন্য দিনমজুর লাগে। এতে খরচের পাশাপাশি লোক পাওয়াও এখন কঠিন। এক বিঘা জমিতে যদি ১২ থেকে ১৪টি আট বছর বয়সী আম গাছ থাকে তাহলে চাষি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করতে পারে এক বছরে। যেটা অন্য কোনো চাষে সম্ভব নয়।
 
এছাড়া এ অঞ্চলে সেচ সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আম গাছে পানির ঝামেলা খুব কম। প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই হয়ে যায়। তাছাড়া স্বল্প লোক দিয়ে অনেক জমি চাষ করা যায়। কষ্টও অনেক কম। তাই এ অঞ্চলের চাষিরা বেশি ঝুঁকছেন আম চাষে।
 
এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বলেন, জেলা পর্যায়ে এখনই কৃষিভিত্তিক জোন করার চিন্তা নেই। এটা করতে হবে কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় নিয়ে। খাদ্যশস্য উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে সরকার চাইলে কৃষিভিত্তিক জোন করতে পারে। তবে চাঁপাইতে এখনই এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই।  
 
.
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৮
এএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।