ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

‘সিকিম’ যেনো স্বপ্নের দেশ

পর্যটন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
‘সিকিম’ যেনো স্বপ্নের দেশ তাশি ভিউ পয়েন্ট

অনন্য সৌন্দর্যের আধার ভারতের পর্যটন রাজ্য সিকিম। স্বপ্নের দেশের মতো সুন্দর এ রাজ্য ঘুরে দেখতে হাজার পর্যটক হানা দেয় এখানে।

ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে’২০১৮ তে  ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই পর্যটন  রাজ্য নিয়ে এক প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস রাজ্যটির ১৫টি ভ্রমণ লোকেশন তুলে ধরেছে পাঠকদের জন্য।  

১.গুরুদংমার লেক 
উত্তর সিকিমের গুরুদংমার লেক বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর লেকগুলোর মধ্যে একটি।

হিমালয় পর্বতের কোলে অবস্থিত সুদৃশ্য লেকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৪৩০ মিটার উপরে অবস্থিত। নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এলাকাটি পুরাপুরি হিমায়িত থাকে। মধ্য সিকিমের গুরুদংমার লেক, হিমাচলপ্রদেশের রেওয়ালসার ও রেণুকা লেক অনেকের কাছে বেশ পবিত্র।  গুরুদংমার লেক
২. হিমালয় জুওলজিক্যাল পার্ক
ভারতের জুওলজিক্যাল পার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম হিমালয় জুওলজিক্যাল পার্ক। পাহাড়ঘেরা চমৎকার লোকেশনে জুওলজিক্যাল পার্কের অবস্থান। এই পার্কের মূল আকর্ষণ লাল পাণ্ডা। এই লাল পাণ্ডা অনেকের কাছে লাল বিড়াল বিয়ার নামেও পরিচিত। পাহাড়ের ঢালে এই চিড়িয়াখানা বাচ্চাদের নিয়ে উপভোগ করার মতো জায়গা। এই জুওলজিক্যাল পার্কে ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় ফ্রেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।   

৩. কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় আছে সিকিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্কটি ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৭৭ সালে। শুরুতে প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে ছিল পার্কটি। পরে এর আয়তন বেড়ে হয় ১৭৮৪ বর্গ কিলোমিটার যা সিকিমের ২৬ শতাংশ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং আশপাশের উঁচু এই পার্কটি নানা জায়গা থেকে দেখা যায় বলে পর্যটনের দিক থেকেও এই পার্কটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই ন্যাশনাল পার্কে ত্রিশটিরও বেশি লেক আছে। ২০১১ সালের ভূমিকম্পে এই পার্কের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। অতি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে এই ন্যাশনাল পার্কটিও আছে।  

ইউনেস্কোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে অনেক পৌরাণিক গল্প জড়িয়ে রয়েছে। আর এর চারপাশে রয়েছে সব রকম প্রাকৃতিক উপাদান (হ্রদ, গুহা, নদী)। সিকিমের মানুষ এসবের পুজা করেন। ওই সব গল্প এবং প্রথা বৌদ্ধ বিশ্বাসের সঙ্গে মিল রয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক
৪. কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত
সিকিমের অনন্য সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত। ভ্রমণপ্রেমীরা এখানে এসে এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়। অনন্য সুন্দর এই জলপ্রপাতের জল পড়ার শব্দে মন জুড়ায় দর্শনার্থীদের।  

৫. সিংবা রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য
সিংবা রডোডেনড্রন অভয়ারণ্যের অবস্থান উত্তর সিকিমে। এখানে ২৪ প্রজাতির রডোডেনড্রন ফোটে প্রত্যেক গ্রীষ্ম ও বসন্তে। ভ্রমণকারী মন ভরাবে এমন মনোরম দৃশ্য। এলাকাটি পর্যটন মানচিত্রে ‘ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার’ হিসেবেও পরিচিত। সিকিমের বাসিন্দাদের কাছে অপরূপ সুন্দর রডোডেনড্রন গুরাস নামেই পরিচিত। সিকিমের রডোডেনড্রন বিশ্ববিখ্যাত। গোটা বিশ্বের রডোডেনড্রন মানচিত্রে সিকিম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর এশিয়ায় প্রথম।

৬. সোলফোক চার্দাম
সিকিমের এই সোলফোক চার্দামটি তীর্থস্থানটি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই তীর্থস্থান কেন্দ্রে ১০৮ ফুট উঁচু মন্দির রয়েছে। যেখানে সোলফোক পাহাড়ে বসার ভঙ্গিতে ৮৭ ফুট উচু শিবের মূর্তি রয়েছে। সোলফোক চার্দামে শিব ভক্তদের জন্য ১২টি জ্যোতিলিঙ্গের রেপ্লিকা রাখা হয়েছে। সোলফোক চার্দাম

০৭. বুদ্ধ পার্ক
সিকিমের অনন্য সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম বুদ্ধ পার্ক। পর্যটকরা এই বুদ্ধ পার্কের চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখে মোহিত হন।  

০৮. নামগাইয়েল ইনস্টিটিউট অব তিব্বতলজি
তিব্বত গবেষণা কেন্দ্র এবং সংগ্রহশালা নামগাইয়েল ইনস্টিটিউট অব তিব্বতলজি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। তিব্বতি জনগণের ইতিহাস, ধর্ম, ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতির উপর গবেষণা ও পৃষ্ঠপোষকতা করে প্রতিষ্ঠানটি। তিব্বতের বাইরে বিশ্বব্যাপী তিব্বতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির বৃহত্তম সংগ্রহশালার একটি এই নামগাইয়েল ইনস্টিটিউট অব তিব্বতলজি।
সিকিমে ঘুরতে এসে পর্যটকরা মিস করেন না এই সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে।  

০৯. সামদ্রুপসে পাহাড়
পাহাড়ের কোলে ২১৩৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নামচির আকাশচুম্বী সামদ্রুপসে পাহাড়। এই পাহাড়ে রয়েছে পদ্মসম্ভবের মূর্তি। এখানে এলে গুরু পদ্মসম্ভবকে প্রণাম জানাতে ভোলেন না অনেক পর্যটকই। এছাড়া চোখ মেললেই দেখা মেলে বরফঢাকা পাহাড়ের সারি আর শুভ্র ক্যানভাসে বহুদূরের শান্ত গ্রাম। নামগাইয়েল ইনস্টিটিউট অব তিব্বতলজি১০. সুখলাকাং মন্দির 
সুখলাকাং গ্যাংটকের কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের খোদাই করা কলামগুলো নজর কাড়ে পর্যটকদের।   

১১.তাশি ভিউ পয়েন্ট
তাশি ভিউপয়েন্টে দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা আর মাউন্ট সিনিয়লচুর মনোরস সৌন্দর্য।  

১২. সিংসোর সেতু
সিকিমে বেড়াতে আসা মানুষের মনোরঞ্জন করবে সিংসোর সেতু। ২৩০ মিটারের এই ঝুলন্ত সেতুটি সিকিমের সর্বোচ্চ সেতু। সেতুটির নির্মাণ প্রকৌশলী নজর কাড়ে দর্শনাথীদের। এই সেতু থেকে মনোরম দৃশ্যের পাশাপাশি হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা আপনাকে ভোগাবে।

১৩. ইয়ামথাং 
ইয়ামথাং ভ্যালি উত্তর সিকিমে অবস্থিত। চমৎকার এই ভ্রমণ লোকেশনটি হিমালয় পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এই স্থানটি সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৩,৫৬৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সিকিমে এলে পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় থাকে ইয়ামথাং।  

১৪. রচনা বুকস 
রচনা বুকস সিকিমের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বইপ্রেমীরা সিকিমে এলে ঘুরে যেতে পারেন এই রচনা বুকসে। এখানে এসে পর্যটকরা গল্প বলা ইভেন্টে, বই পড়া, সঙ্গীতসন্ধ্যায় অংশ নিতে পারেন।  

১৫. টেমি চা ফ্যাক্টরি 
নামচির অনতিদূরে অবস্থিত সিকিমের একমাত্র চা ফ্যাক্টরি টেমি। এটির অবস্থার ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ মিটার উঁচুতে। এই চা ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। পর্যটতরা সিকিমে এলে এই চা ফ্যাক্টরি ঘুরে যেতে ভুলেন না। আর এখানে এলে পর্যটকরা ৪৮ পদের চা টেস্ট করতে ভুলেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
এপি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।