গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার উত্খাতের পর গঠিত হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল এই সরকার।
ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অর্থনীতির দুরবস্থা, কলকারখানা বন্ধ হয়ে লাখো শ্রমিকের বেকার হওয়া, মার্কিন শুল্কনীতির চাপ, মব ভীতি, অনাকাঙ্ক্ষিত নিত্যনতুন সংকট—এসব কারণে সরকারের প্রতি আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে।
এরই মধ্যে সরকারের দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। সংস্কার যদি দৃষ্টান্তমূলক না হয়, নির্বাচনও যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্টজনরাও মনে করছেন, সরকারের কার্যক্রম নিয়ে শক্ত কথা বলারই সময় এসেছে। বলা হচ্ছে, এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তার পরও অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে অটুট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আরো সুদৃঢ় ও দৃশ্যমান করা প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য চোখে পড়ছে না, বরং সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। ’
বুধবার রাজধানীতে একটি গোলটেবিল বৈঠকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মিষ্টি কথা, ভালো কথা, ভালো উদ্যোগ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু হয়েছে। ...আজ পাওনার হিসাবটা খুবই জরুরি। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—এই বিষয়গুলোতে এক বছরে কী কী হলো, সেই পাওনার হিসাবটা আজ মূলকথা হতে হবে। ’ একই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোনো ভয়ভীতি নেই, এমনটা কেউই বলতে পারবে না।
ভয় বিচারব্যবস্থার ভেতরেও আছে, বাইরেও আছে। ’ বৈঠকে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনায় আমরা নতুন সরকার আনলাম। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে তারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ও সংস্কারপ্রক্রিয়ায় প্রতিফলন করতে পারল না। সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করা নেই। ’
অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলেই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার না এলে সমস্যা আরো বাড়বে।
দেশ এখন গভীর খাদের কিনারে। সেই খাদে একবার পতিত হলে সেখান থেকে দেশকে টেনে তোলা প্রায় অসম্ভব। তাই আমরা মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আর সে জন্য প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেই হবে।
এনডি