ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

অন্যান্য

পারিবারিক প্রভাবমুক্ত হচ্ছে প্রাইম ব্যাংক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫৯, আগস্ট ১৩, ২০২৫
পারিবারিক প্রভাবমুক্ত হচ্ছে প্রাইম ব্যাংক

পারিবারিক প্রভাবমুক্ত হচ্ছে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক। ৩০ বছরের কর্তৃত্ব হারাতে যাচ্ছেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আজম জে চৌধুরী।

সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রস্তাবিত আইন অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হলে আজম জে চৌধুরী পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে দুজন হবে। পাশাপাশি ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালনায় থাকা সদস্যদের বিদায় নিতে হবে। এর ফলে প্রায় তিন দশক ধরে প্রাইম ব্যাংকে আজম জে চৌধুরীর কর্তৃত্ব কার্যত শেষ হতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন আইন কার্যকর হলে পরিচালকদের ক্ষমতা কমে আসবে এবং বোর্ডের গঠন হবে বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। গত ছয় বছর ধরে যেসব পরিচালক পর্ষদে রয়েছেন তারা বাদ পড়বেন নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। শুধু তাই নয়, পরিচালকদের ক্ষমতাও কমিয়ে আনা হচ্ছে। একই পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। ব্যাংকগুলোর পর্ষদে ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হবে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল থেকে। কোনো ব্যাংক চাইলেই নিজের পছন্দমতো পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাবিত নতুন আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন সদস্যের সীমা নির্ধারণ করেছে এবং টানা ছয় বছরের বেশি সময় পরিচালনা পর্ষদে থাকা সদস্যদের অপসারণের বিধান রেখেছে।

প্রাইম ব্যাংকে আজম জে চৌধুরীর দীর্ঘ প্রভাব : প্রাইম ব্যাংক পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ব্যাংকের যাত্রার শুরু থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে পর্ষদে রয়েছেন এবং একাধিকবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালে তিনি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিয়ে ছেলে ও ইস্ট কোস্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিল চৌধুরীকে ওই পদে বসান। বর্তমানে পর্ষদে আজম জে চৌধুরী, ছেলে তানজিল চৌধুরী এবং তানভীর চৌধুরীই পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।

প্রাইম ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান না থাকলেও আজম জে চৌধুরীই মূলত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দেন। এমনকি পর্ষদ সভায় তিনি সর্বদা চেয়ারম্যানের পাশেই বসেন, যা তার প্রভাবের প্রতীক। দেশের ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকে উদ্যোক্তা-মালিকদের শেয়ারের হার গড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশের সামান্য বেশি। এর বিপরীতে জনগণের অর্থ গড়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি। অথচ বোর্ডে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবশালী পরিবারগুলোর উপস্থিতি ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমানতকারীদের স্বার্থকে প্রায়ই পেছনে ঠেলে দেয়।

নতুন আইন কার্যকর হলে প্রাইম ব্যাংকের মতো দীর্ঘদিন ধরে পরিবারতন্ত্রের অধীনে থাকা ব্যাংকগুলোর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসবে। আজম জে চৌধুরীর মতো উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে এবং বোর্ডে বহুমুখী ও পেশাদার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।

সার্বিকভাবে প্রস্তাবিত সংশোধন বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে, যা দীর্ঘদিন ধরে এই খাতের জন্য জরুরি ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ, যদি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেন মুখ দেখে সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়। একজনের জন্য প্রয়োগ, অন্যজনকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী গতকাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন প্রাইম ব্যাংক অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে। প্রাইম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক। আমরা সব পরিচালকের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করি, বিশেষ করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, প্রাইম ব্যাংকের শাসনব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী, শুধু আমাদের পুরাতন চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী নয়, নীতিনির্ধারণে পরিচালনা পর্ষদের সবাই অংশগ্রহণ করেন।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।