ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বই মেলা, ম্যালা বই | মোহাম্মদ অয়েজুল হক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
বই মেলা, ম্যালা বই | মোহাম্মদ অয়েজুল হক বই মেলা, ম্যালা বই | মোহাম্মদ অয়েজুল হক

আমাদের দেশে মাসব্যাপী বইমেলা হয়। লেখকরা সারা বছর ধরে যা লেখেন বইমেলার মাধ্যমে তা পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। বইমেলা। খুব সুন্দর একটা আয়োজন।

একদিন দু’দিন নয়, মাসব্যাপী। বইমেলার বদলে মাসব্যাপী ফাস্টফুডের মেলা হলে গিলতে গিলতে আর খেতে খেতে পেট ফেটে মরার আশঙ্কা থাকত।

বই পড়ে কেউ মরে না। পড়তে পড়তে কারও মাথা ফেটেও যায় না। গল্প, কবিতা, উপন্যাসের ওভারলোডের কারণে কারও মাথার ঘিলু ছিটকে বেরিয়েও যায় না। বই মনের দুয়ার খুলে দেয়, জ্ঞান চক্ষুর জন্ম দেয়। জ্ঞান চক্ষু কিন্তু যা তা ব্যপার না। সাধারণ চক্ষু সবার থাকে, জ্ঞান চক্ষু সবার থাকে না। সাধারণ চক্ষু দিয়ে পানি পড়ে, চক্ষুতে ছানি পড়ে, চোখ কানা হয় কিন্তু জ্ঞান চক্ষুর কিছুই হয় না। ছানি পড়ে না, পানি পড়ে না। যতো বেশি বই পড়া হবে জ্ঞান চক্ষু ততো বেশি প্রখর হবে।


যদিও মাসব্যাপী বইমেলা হয় কিন্তু বই কেনার ব্যপারে আমরা আজও সেকেলে রয়ে গেছি। বইমেলায় প্রচুর দর্শনার্থী বই দর্শন করতে আসেন। আমি ভাবি, যারা আসেন তারা সবাই যদি একটা কিছু নিয়ে যেতেন তাহলে স্টলের বই শেষ হয়ে স্টলের বাঁশ, খুঁটি, প্যান্ডেলের কাপড় কিছুই থাকত না। কিন্তু আশ্চর্যভাবে অসংখ্য ভালো ভালো বই থেকে যায়। লেখকদের সুন্দর সুন্দর বইগুলো সুন্দরভাবেই পড়ে থাকে।
ক’বছর আগে মেলায় এক লেখক বন্ধুর সাথে দেখা। উস্কোখুস্কো চুল। মনে হয় অনেকদিন গোসল করে না। চোখ দু’টো লাল। মনে হয় অনেক দিন ঘুমায় না। শরীরটা রুক্ষ। অনেকদিন নিয়ম মতো খাবার খায়নি হয়তো। ওকে দেখে আমার প্রথম কর্তব্য যা তা হলো, বইমেলায় প্রকাশিত তার তিনটি বইয়ের খোঁজ নেওয়া। সেই হিসেবে প্রশ্ন করে ফেলি, কী রে বইগুলো কেমন চলছে? আমার প্রশ্ন শুনেই লেখকবন্ধু তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। বইয়ের কি হাত পা আছে! বই কী বাস, গাড়ি না ট্রেন যে চলবে? তাইতো! বুঝতে পারি তার বাকহীন, শক্তিহীন জড়ো বই নিশ্চিতভাবেই স্টলে পড়ে আছে। লেখকের ঘুম নেই, খাওয়া নেই, নাওয়া নেই। পাবলিক যদি বই না কেনে তাহলে কী আর করা যাবে! বাস ঠেলার মতো ‘আরও জোরে হেঁইয়ো, জোরসে বলো হেঁইয়ো’ মার্কা স্লোগান তুলে বই পাবলিকের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। মুজতবা আলীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে এ বুলি আওড়াতে ইচ্ছা হয়, আমি নিজেই প্রডিউসার, নিজেই কাস্টমার। আমি তামাক দিয়ে সিগারেট বানাই, আমি নিজেই খাই। আমি বই লিখি, আমি নিজেই কিনি।


অবশ্য সবার বই যে চলে না তা নয়। কারও কারও বই চলে। হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় ঘুরে বেড়ান বহুল বিক্রিত বইয়ের লেখকরা। তাদের যদি ওই একই প্রশ্ন করা হয় তারা জবাব দেন, আরে কি যে বলেন! বই তো না রকেট ছেড়েছি। ধুম-ধাড়াক্কা ব্যান্ডের মিউজিকের মতো চলছে। প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়েছে বই মেলার আগেই, দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ হয়েছে মেলার দ্বিতীয় দিন। দিনে দিনে মুদ্রণ সব শেষ। জানেন, লোকজন তো বইটা যে প্রেস থেকে ছাপা হয়েছে সে প্রেসটাই কিনে নিতে চায়। হেঃ হেঃ!


আমি প্রধানমন্ত্রীর একটি বাণী পড়েছি, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। চমৎকার উপদেশ। আমার মনে হয়, প্রিয়জনকে চাইনিজ, ফাস্টফুড উপহার দিলে সে শুধু বেলুনের মতোই ফুলবে, ফুলে আটার বস্তা হবে। কিন্তু তাকে একটি বই উপহার দিলে সে কিছু শিখবে, সুতরাং প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।


বইমেলায় একশ্রেণির তরুণ-তরুণী দেখতে এবং দেখাতে আসে। ঠোঁটে দু’ইঞ্চি লিপিস্টিক, মুখে পাঁচ ইঞ্চি মেকাপ মেরে হেলেদুলে তরুণীরা ভিড় জমায়। তাই দেখে তরুণের দল ঝাঁক ধরে বিল্ডিং থেকে নেমে আসে ফিল্ডিং মারতে। কারও উদ্দেশ্যই বই কেনা নয়। তবু্ও ভালো। আসতে আসতে একদিন কিনতে শিখবে। সে দিন লিখবো, বই মেলা, ম্যালা বই। ঘরে বাইরে বই। স্টলে স্টলে নতুন নতুন বই। মানুষের হাতে হাতে বই। বই আর বই।


ছড়ার মতো করে বলি,

বই আর বই

তোরা সবাই কই!

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।