ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

আহত কাজী জাবেরের সাক্ষাৎকার

জুলাইযোদ্ধাদের সম্মান না দিলে ভবিষ্যতে কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না

রেজাউল করিম রাজা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৮, মে ২৯, ২০২৫
জুলাইযোদ্ধাদের সম্মান না দিলে ভবিষ্যতে কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না জুলাইযোদ্ধা কাজী জাবের সম্প্রতি বাংলানিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জুলাইযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান না দিলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না বলে সাবধান করেছেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখসারির যোদ্ধা কাজী জাবের।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাবের এ সাবধানবাণী দেন।

তিনি জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা, জুলাই আহতদের চিকিৎসা-পুনর্বাসন ও জুলাই সনদ প্রকাশের দাবিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

কুমিল্লার বাসিন্দা কাজী জাবের চাকরির সুবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বসবাস করেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থানকালে তিনি ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা। আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন।

বাংলানিউজ: আপনি কীভাবে কোথায় গুলিবিদ্ধ হলেন?

কাজী জাবের: আমি যাত্রাবাড়ীতে চাকরি করতাম। ছাত্র-জনতার ডাকে আমিও আন্দোলনে শরিক হই। ১৯ জুলাই বিকেলে আমি যাত্রাবাড়ীতে আহত হই।

বাংলানিউজ: আহত হওয়ার পরে কোথায় কীভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন?

কাজী জাবের: আহত হওয়ার পর স্থানীয় একটা বেসরকারি অনাবিল হাসপাতালে আমি প্রথমে চিকিৎসা নেই। সেখানে আমার ড্রেসিং করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। আমার অবস্থা দেখে ঢাকা মেডিকেল ভর্তি নেয়নি। ওখানে থেকে আমাকে নিটোরে ট্রান্সফার করে দেয়। নিটোরে আসার পর অনেক ঝামেলা এবং হয়রানির শিকার হতে হয়। রাত ১১টা নাগাদ আমার অপারেশন করা হয়। এরপর আমাকে রক্ত দেওয়া হয়। আমার এখন পর্যন্ত ছয়টা অপারেশন হয়েছে, সম্ভবত আরও তিনটা অপারেশন বাকি আছে। আমাদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে যেভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সরকার তার ধারে-কাছেও হাঁটেনি। চিকিৎসা অনেক দূরের ব্যাপার, হাসপাতালে আমাদের খাবারটাও নিম্নমানের।  

বাংলানিউজ: একজন আহত যোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাছে আপনার দাবি কী?

কাজী জাবের: সরকারের ন্যূনতম লজ্জা হওয়া উচিত। আমাদের রক্তের ওপর হেঁটে আপনি আজকে ক্ষমতায়। আজকে আমাদের কোনো খবর নেই। আজকে আমাদের অধিকারের জন্য, দাবি আদায়ের জন্য আমাদের রাজপথে আসতে হয়। আমি যদি চিকিৎসা না পাই, জুলাইযোদ্ধা কিংবা অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, রাজপথে যারা সংগ্রাম করতে দাঁড়িয়েছেন, তাদের যদি নিজের পুনর্বাসনের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হয়, তাহলে মনে রাখবেন একসময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আর কেউ সাহস করবে না।

বাংলানিউজ: জুলাইযোদ্ধাদের জন্য সরকারের কাছে আপনাদের দাবি কী?

কাজী জাবের: যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা। আমার আহত ২৩ হাজার ভাই যারা আছেন, তাদের যেভাবে, যেই দেশে চিকিৎসা দিলে দ্রুত সেরে উঠবে, সেই চিকিৎসা দেওয়া হোক। আমি মনে করি এটা সরকারের দায়িত্ব।

বাংলানিউজ: আহত হওয়ার পর সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কি না?

কাজী জাবের: সহযোগিতা বলতে, হাসপাতালে আমাদের থাকা খাওয়া এবং চিকিৎসা ফ্রি। কিন্তু এই সরকার একবারও গিয়ে খবর নেয়নি, আমাদের কতটুকু চিকিৎসা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল, আমরা আসলে কী চিকিৎসা পাচ্ছি, কতটুকু সুস্থ আছি। আমাদের মনোবল কতটুকু শক্ত আছে। আমি নয় মাস যাবত হাসপাতালে শুয়ে আছি, আমি এবং আমার পরিবার কীভাবে চলছে? সরকার আমাদের পুনর্বাসন করার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, সেটা আশ্বাসেই শেষ। যত মেগা প্রকল্প দেখেন, এগুলো সব মিডিয়াতে, সরকারের মুখে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মুলা ঝুলানো ছাড়া কিছুই নেই।

বাংলানিউজ: দেশবাসীর জন্য কিছু বলতে চান কি না?

কাজী জাবের: দেশবাসীর কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা যদি আমাদের সম্মান না করেন, আমি আমার জন্য নয়, দেশের জন্য বলছি, ব্রিটিশ আমল থেকেই আমরা অত্যাচারিত হয়ে আসছি, পাকিস্তানে অত্যাচারিত হয়েছি, শেখ হাসিনার আমলেও অত্যাচারিত হয়েছি, এভাবে যুগে যুগে শাসকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জুলাইযোদ্ধাদের সম্মান দেওয়া উচিত। আপনারা যদি আমাদের সম্মান না করেন তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভয়ে থাকেন যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আর কেউ দাঁড়াবে না। আমরা যদি আমাদের ন্যায্য অধিকার না পাই, তাহলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রজন্মের কেউ দাঁড়াবে না।

আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।