ঢাকা, সোমবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৫, অক্টোবর ২০, ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

ঢাকা: বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর তা বাস্তবায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ।  

জুলাই সনদের বিষয়ে ঐক্যে পৌঁছলেও কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা মতভেদ, মতবিরোধ।

 

দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই দিনে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর দাবি, নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।  

আর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ না থাকায় সনদে স্বাক্ষর করেনি জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল এনসিপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। তবে বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবে।  

শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠাকিতার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসসহ ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এনসিপি, গণফোরাম ও ৫ বাম দল এতে স্বাক্ষর করেনি।  

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকার করলেও কার্যত এটি একটি ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবেই থাকছে। বাস্তবায়নের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত গড়াচ্ছে পরবর্তী সংসদের ওপরেই। তবে সেই সংসদে এই সনদ বাস্তবায়নের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সাতটি বিষয়ে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে।

এদিকে জুলাই সনদের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (দ্বিমত) দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সনদে স্বাক্ষর করলেও দলটি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে ওইসব বিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কী হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। অপরদিকে গণভোটের মাধ্যমে জামায়াতের মতো দলগুলো যে বাধ্যবাধকতা পরবর্তী সংদের ওপর তৈরি করতে চাচ্ছে সেটিও আসলে চূড়ান্ত নয়। কারণ গণভোটে সনদ গৃহীত হলেও জাতীয় সংসদে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে। এখানে অনেক বিষয় আছে, কিছু বিষয় আছে সংবিধানের। যারা এই জুলাই সনদ করল তারাই সংসদে যাবে। নির্বাচিত সংসদ সেসব বিষয় ঠিক করবে সিদ্ধান্ত নেবে। এগুলো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। ’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে কারণগুলো উল্লেখ করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করিনি। কারণ সনদ বাস্তবায়নে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটা স্পষ্ট নয়। আগে সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা সুস্পষ্ট করতে হবে। আইনি জটিলতা থাকতে পারে, যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কী করবে কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। ’

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেছেন, ‘আজকে যে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হলো এটা একটি অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা। এটার কোনোরকম আইনি ভিত্তি নেই। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও অজ্ঞাত। আমরা যে জিনিসটা বলতে চাই, আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে, সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ অভিনন্দন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে এবং সেই আদেশের ভিত্তিতে আমরা দাবি করছি, নভেম্বরের মধ্যেই যেন গণভোটের আয়োজন করা হয়, তা না হলে এটার কোনো আইনি ভিত্তি থাকবে না। ’  

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘সনদে স্বাক্ষর করা হলেও আইনগত স্বীকৃতি না থাকায় এর কার্যকর প্রয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে যে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হয়েছে, সেটি যেন সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করে। যদি সরকার ডিলে (বিলম্ব) করে বা অন্য কোনো চিন্তা করে, তাহলে সেটা জুলাইয়ের সঙ্গে জাতীয় গাদ্দারি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করবে। ’

এদিকে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে, সনদ স্বাক্ষর কেবলই লোক দেখানো এবং এটি জুলাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। ঐক্যমত কমিশন আলোচনায় ডাকলে তাতে সাড়া দেবে এনসিপি। নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) এর সঙ্গে জুলাই সনদের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসকে/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।