ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

৭৯ ঘণ্টার নানা নাটকীয়তা শেষে শপথ নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৬, আগস্ট ৮, ২০২৫
৭৯ ঘণ্টার নানা নাটকীয়তা শেষে শপথ নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার দাবিতে ১ জুলাই শুরু হওয়া ৩৬ দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের ইতি ঘটে। ৫ আগস্ট পালিয়ে আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী দেশে।

পরের দিন রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। মূলত এভাবে সরকারবিহীন তিন দিন থাকার পর নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার।

দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, নানা বিষয়ে সংস্কারব্রত নিয়ে চলা এ সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নড়বড় হয়ে ওঠে। আইন শৃঙ্খলার তেমন উন্নতি দেখা যায়নি। মাঠে এখনো সেনাবাহিনী রয়েছে। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে নির্বাচনের সময়সীমাও ঘোষণা করেছে সরকার।

কিন্তু এই ১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২টি বড় সাফল্য তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার তিনি তার ফেসবুক পোস্টে এসব সাফল্য তুলে ধরেন। যদিও সরকারের কাছে জাতির আশা আরও বেশি ছিল, তবে সরকার যথাযথ সময় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারের কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। তবে নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে যা অর্জন করেছে, এর বেশি হয়তো সম্ভব ছিল না।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ নেতা।

২৪-এর নির্বাচন
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মহাজোট সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালে একতরফা, ২০১৮ সালে রাতের ভোট করে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করে আসছে বিরোধী জোট। এমন অভিযোগের মধ্যে ফের একতরফা ভোট করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি মহাজোট ও আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের এই সরকারের সময় বিদেশে টাকা পাচার, গুম, খুন, নিপীড়ন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ, বৈষম্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে।

হাসিনার পতন
এমন অবস্থায় আদালতের রায়ের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে সর্বস্তরের জনতা যোগ দেয়। কিন্তু ওই আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া গুলি, গণগ্রেপ্তার এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা ও সংঘর্ষ এক পর্যায়ে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট (সোমবার) কারফিউ ভেঙে গণভবন অভিমুখো লাখো মানুষের ঢল নামলে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার আগে দেড় সহস্রাধিক শিশু, ছাত্র ও জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন ৩০ হাজারের মতো মানুষ।

সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি
এক প্রকার সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবিহীন অবস্থায় ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুরে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।

দণ্ড থেকে খালাস ড. ইউনূস
এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে নানা দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। ছাত্ররা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করেন। কিন্তু বিদেশে থাকা ড. ইউনূস প্রথমে রাজি হননি। আর তিনি একটি মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে ছিলেন। যদিও ৭ আগস্ট (বুধবার) সেই দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।

এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।

শপথ নিতে ফ্রান্স থেকে দেশে ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিতে ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকায় আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করাই আমার প্রথম কাজ। এয়ারপোর্ট থেকে গুলশানের নিজ বাসায় যান তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় যান বঙ্গভবনে।

সরকার গঠন
রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর পরপরই উপদেষ্টা পরিষদের ১৩ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আর বঙ্গভবনের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্র দল বিকল্পধারার নেতা মাহী বি চৌধুরীকে। অনুষ্ঠানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার ৪০০ আমন্ত্রিত অতিথি। শপথ পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

১৬ জন উপদেষ্টার মধ্যে তিনজন পরে শপথ নেন। পরে অবশ্য উপদেষ্টা পরিষদে যোগ বিয়োগ হয়।

সরকারের এক বছরের অর্জন নিয়ে বিএনপি
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি সরকারের কাছে জাতির আশা আরও বেশি ছিল, তবে সরকার যথাযথ সময় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে বলেন, সরকারের কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। তবে নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে যা অর্জন করেছে, এর বেশি হয়তো সম্ভব ছিল না।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ নেতা।

নির্বাচন কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি পাঠানোকে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করে সালাউদ্দিন আহমদ আর বলেন, জাতি এর জন্যই অপেক্ষা করছিল। সংস্কার ও বিচারেও অগ্রগতি হয়েছে, বিএনপি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতেও জাতিকে এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টার ভিশনকে বিএনপি গ্রহণ করবে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য দ্রুত আইনকানুন প্রণয়ন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমানে পুলিশের স্ট্রাকচার রাতারাতি পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলেও নির্বাচন পরিচালনায় তাদের রাখতে হবে। তবে মূল ভূমিকা রাখবে সেনাবাহিনী। এ সময় তিনি আরও বলেন, জনগণ যেখানে স্বচ্ছ নির্বাচন চায় সেখানে জনগণ ও প্রার্থীদের মানসিকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।

সরকারের ১২ সাফল্য
১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২টি বড় সাফল্য তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি সাফল্যের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

১. শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
জুলাই বিপ্লবের পর দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরেছে, যার ফলে নৈরাজ্য ও প্রতিশোধের চক্র বন্ধ হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নৈতিক নেতৃত্ব ছিল এই স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি, যা জাতিকে সহিংসতা নয়; বরং পুনর্মিলন ও গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করেছে।

২. অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রেখেছে এই সরকার। খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নামানো হয়েছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে (যা ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), রেমিট্যান্সে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি, বহু বছর পর টাকার মান ডলারের বিপরীতে বেড়েছে এবং ব্যাংক খাত স্থিতিশীল হয়েছে।

৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল শুল্ক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, দুর্বল সরকার এটি পারবে না। কিন্তু এই সরকার সেটি করে দেখিয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অর্জন (যেমন হানদা গ্রুপের ২৫ কোটি ডলারের টেক্সটাইল বিনিয়োগে ২৫ হাজার কর্মসংস্থান) এবং আগের সরকারের চেয়ে দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ। চীনা বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদ
সংস্কার কমিশন গঠন, ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসা রোধে সুরক্ষা দিচ্ছে। জুলাই সনদ গণতন্ত্রের নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৫. জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার শুরু হয়েছে, যাতে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারটি প্রধান বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার বিচারও শুরু হয়েছে।

৬. নির্বাচন পরিকল্পনা ও সংস্কার
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী, নতুন ভোটার এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নাগরিক মতামতের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হচ্ছে। প্রায় ৮ লাখ পুলিশ, আনসার ও সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।

৭. প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সংস্কার
বিচার বিভাগ: সংস্কারমুখী নিয়োগের মাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত।  
পুলিশ: মানবাধিকার সেল, বডি ক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ও জাতিসংঘ মানদণ্ডের প্রতিবাদ ব্যবস্থা।
আইন: দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন, গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলক, আইনজীবী ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত, অনলাইন জিডি চালু।

৮. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট অধিকার
দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সব সাংবাদিক মামলা প্রত্যাহার, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে প্রথমবারের মতো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

৯. পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন
একক দেশের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে এসে বহুমাত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে। সার্ক পুনরুজ্জীবন ও আসিয়ান সদস্যপদ অর্জনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

১০. প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পুনরায় চালু, মালয়েশিয়ার মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালু, উপসাগরীয় দেশে অনিয়মিত কর্মীদের বৈধতা দেওয়া, জাপানে ১ লাখ তরুণ পাঠানোর পরিকল্পনা এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

১১. শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের সহায়তা
জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন। ৭৭৫টি শহীদ পরিবারের মাঝে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র ও ভাতা দেওয়া, ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত বিপ্লবীর জন্য ১৫৩ কোটি টাকার সহায়তা। গুরুতর আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন।

১২. সামুদ্রিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন
বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির’ মূল সম্পদ ঘোষণা, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো (+২২৫ কনটেইনার দৈনিক হ্যান্ডলিং), উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রসারণ এবং গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ ও শিল্প প্রকল্পে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব।

ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।