ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

হঠাৎ কেন ডিম-পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৪, আগস্ট ৮, ২০২৫
হঠাৎ কেন ডিম-পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা হঠাৎ ডিম ও পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ফাইল ছবি

রাজধানীসহ দেশের বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডিম ও পেঁয়াজের দাম। বাজারে সরবরাহ কমায় ও মৌসুমের শেষ সময় হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।

যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর যে পুরনো সিন্ডিকেট বাজারে আছে, তারাই কারসাজি করে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

রাজধানীতে মাস খানেকের বেশি ধরেই স্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। তবে হঠাৎ করেই বাজারে বেড়ে গেছে দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। আর প্রতি ডজন সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। তবে এলাকাভেদে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে।

পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্যে, বর্ষা মৌসুমে ডিমের উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। এ ছাড়া, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ছে।  

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডিমের দাম। পাইকারিতে বাড়ায় খুচরাতেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।  

আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহের চেয়ে ডিমের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে। বাজারে সবজি, মুরগি, মাছ ও মাংসের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। এ কারণে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। আর সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে ডিমের।

এদিকে রাজধানীর বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। কোথাও প্রতি কেজি পেঁয়াজে গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকাও।  

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায়ও বেড়েছে দাম।  

পেঁয়াজ বিক্রেতা আশিক বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকেই আমাদের প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকার ওপরে। খুচরায় খুব বেশি লাভ থাকছে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মজুদ কমে যাওয়া এবং সংরক্ষণের অভাবে পেঁয়াজ পচে যাওয়া ও চারা গজানোর সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাছাইয়ের পর ভালোমানের পেঁয়াজের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের কারণে এর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, পাবনার পেঁয়াজের দাম বর্তমানে কিছুটা বেশি। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১০ দিন আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। তিনি এর জন্য আগের লোকসান এবং বৃষ্টির প্রভাবকে দায়ী করেন।  

শফিকুল ইসলাম বলেন, বছরের শুরু থেকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বা তার বেশি লোকসান করেছেন, এমনকি কৃষকদেরও ক্ষতি হয়েছে। তবে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।  

তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শেষ ভাগে এসে সরবরাহ কমে গেছে। তার ওপর বৃষ্টিতে পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। কয়েক দিন আগেও প্রতিপাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার ওপরে। পাবনা ও ফরিদপুর অঞ্চলে মোকামে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারে।

ভোক্তারা মনে করছেন, বাজারে নিয়মিত নজরদারি না থাকায় পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হঠাৎ করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রবিন অধিকারি বলেন, বাজারে আমদানি পেঁয়াজ নেই, সবই দেশি পেঁয়াজ। গত সপ্তাহ থেকে মোকামে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল আড়তে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ টাকা কম ছিল।  

তিনি জানান, দাম আরও বাড়তে পারে, আজ হয়তো আরও ৫ টাকা বৃদ্ধি পাবে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের সংরক্ষণ সমস্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্ষা মৌসুমে পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে এবং অনেক পেঁয়াজে চারা গজাচ্ছে। এর ফলে বাছাইয়ে ঘাটতি হচ্ছে এবং পচা পেঁয়াজের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।  

তবে তিনি আশ্বাস দেন, আগের বছরগুলোর মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।