ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংকটের মেঘ জমেছে

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১৩, আগস্ট ১২, ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংকটের মেঘ জমেছে

চলতি বছর ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের পরও বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত অথবা বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতা কাটেনি।

রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ছয় মাসের মেয়াদ আগামী ১৫ আগস্ট শেষ হতে চললেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও আস্থাহীনতার কারণে সনদের ভবিষ্যৎ মেঘাচ্ছন্ন।

দিনের পর দিন দফায় দফায় বৈঠকের পরও সনদ চূড়ান্ত না হওয়া এবং এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য পুরো প্রক্রিয়াটিকেই এক বড় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

গত বছরের ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঁধে ছিল এক গুরুদায়িত্ব—রাষ্ট্রের ভঙ্গুর ও অবিশ্বাসের কাঠামোতে একটি স্থায়ী সংস্কার আনা। এই লক্ষ্যেই সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনগুলোর কাজ ছিল নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিচার-পর্যালোচনার মাধ্যমে সংস্কারের সুপারিশমালা প্রণয়ন করা।

এই বিপুল সুপারিশমালার ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কঠিন দায়িত্ব নিয়ে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। উদ্দেশ্য ছিল সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে একটি ‘জাতীয় সনদ’ বা ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা, যা হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথচলার অঙ্গীকারপত্র। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিভিন্ন কমিশনের প্রতিবেদন দলগুলোর কাছে পাঠানো হয় এবং এরপর সংসদ ভবনের এলডি হল থেকে শুরু করে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মতো স্থানে দফায় দফায় সংলাপ চলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় দেশের ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। কিন্তু সাড়ে পাঁচ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল ব্যয়ের পরও সনদের চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে রয়ে গেছে বড় ধরনের প্রশ্ন।

কমিশনের কাজের পরিধি ছিল বিশাল। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ধাপের ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর পর এরপর ৫ মার্চ, পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক ২৭টি সুপারিশ ছিল।

এই সুপারিশমালার ওপর ভিত্তি করে কমিশন দুই পর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় সংলাপে বসে। প্রথম পর্বের আলোচনা ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৪টি বৈঠকে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। কোরবানির ঈদের পর ২ জুন থেকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা, যা ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ দিন ধরে চলে।

এই পর্বে অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ১৯-২০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং আরও ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই আপাত সাফল্যের আড়ালেই ঘনীভূত হচ্ছিল সংকটের মেঘ। জুলাই মাসের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এখন ১৫ আগস্ট কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষণ গণনা শুরু হলেও, সনদ স্বাক্ষর পর্ব অধরাই রয়ে গেছে।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথায় অবশ্য এখনো ইতিবাচক সুরই লক্ষ্য করা যায়। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকে জানান, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়েই সনদ হবে। যেসব বিষয়ে দলগুলোর ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, সেগুলোও সনদে উল্লেখ থাকবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য পরামর্শ হিসেবে থাকবে।

জুলাই সনদের সংকট সবচেয়ে বেশি ঘনীভূত হয়েছে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে। খসড়া সনদে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। এই প্রস্তাবে বিএনপি নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া দলটির পক্ষ থেকে এই সনদকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগতও জানানো হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেছেন, “সাংবিধানিক সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের বৈধ ফোরাম হলো জাতীয় সংসদ। ” তিনি এই সনদকে ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়’ উল্লেখ করে বলেন, এই সনদ বাস্তবায়নে সকলেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও এর আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির আপত্তি দেখা গেছে।

কিন্তু এই অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগেই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে হবে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছেন, “জুলাই সনদে যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয় এবং এখন থেকে এটা বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা যত জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, সেগুলোর কোনো প্রতিফলন ঘটবে না। ” তার মতে, সংস্কার বাস্তবায়নে দেরি করা সুষ্ঠু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে। এমনকি আইনি ভিত্তি না দিলে কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছে দলটি।

এদিকে এনসিপিও কথা বলছে একই সুরে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি ভিত্তি না দিলে, এই সনদ একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই থাকবে। এমনটি হলে তারা এই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলোর এই অবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে অতীত অভিজ্ঞতা। দলগুলো আশঙ্কা করছে পরবর্তী সংসদে এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আদৌ অনুমোদন পাবে না। অতীতে ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনের পর তিনদলীয় জোটের চুক্তির কথা উল্লেখ করে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, পরবর্তীকালে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ, কেউই সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। এই ঐতিহাসিক আস্থাহীনতা বর্তমান প্রক্রিয়াকেও জটিল করে তুলেছে।

দীর্ঘ সংলাপের পর কমিশন ১৯টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ রাখা, নির্বাচন কমিশন ও দুদকসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের স্বচ্ছ বিধান এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিন্তু সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার চিত্রও স্পষ্ট। ১০টি বিষয়ে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। এর মধ্যে নারী প্রতিনিধিত্ব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মতো বিষয়গুলো অন্যতম। বিশেষ করে, সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদসহ বামপন্থি দলগুলো তীব্র আপত্তি জানিয়ে বৈঠক বর্জন করে এবং সনদে স্বাক্ষর না করার হুমকি দেয়।

এরই মধ্যে নতুন উদ্বেগ যুক্ত হয়েছে। শ্রম, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নারী ও স্বাস্থ্য খাত সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো মূল সংলাপে আলোচিত না হওয়ায় ওই কমিশনগুলোর প্রধানরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এই বিষয়গুলো জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত না হলে ভবিষ্যতে এগুলো উপেক্ষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে, যা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শহীদদের আত্মত্যাগকে অর্থহীন করে তুলবে।

এই অচলাবস্থা নিরসনে কমিশন বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়েছে। গত রোববারের (১০ আগস্ট) বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) জারি করা কিংবা সংবিধান সভা গঠনের মতো একাধিক বিকল্প পথের সন্ধান দিয়েছেন। কিন্তু এই প্রস্তাবগুলো নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন করে মতবিরোধ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ যখন শেষ প্রান্তে, তখন একটি বড় প্রশ্ন উঠছে, কমিশন কি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে? দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় খরচে দফায় দফায় যে আলোচনা ও সংলাপের আয়োজন করা হলো, তার ফলাফল এখনো আশানুরূপ না হওয়ায় বিষয়টিকে হতাশাজনক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয়ে দীর্ঘদিন এই সংলাপ চলার পর ফলাফল যদি একটি স্বাক্ষরবিহীন খসড়া দলিল হয়, তবে এই পুরো প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কমিশনের তীব্র সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, “আমি এই কমিশনকে বলি, 'জাতীয় বিভাজন কমিশন। ” কীসের ভিত্তিতে তারা সংলাপে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করেছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দিনের পর দিন সংলাপের নামে তারা যা করেছে, তা আসলে কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে যদি এই সনদকে অস্বীকার করে, সেক্ষেত্রে তাদের কী করার থাকবে? এতদিন আলাপ-আলোচনা করে তারা তো এখনো সনদের একটা চূড়ান্ত রূপই জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি। যেদিন শাহদীন মালিককের বদলে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সংস্কার কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে, সেদিনই বোঝা উচিত ছিল, সংস্কার আসলে হবে না কিছুই। সংবিধান নিয়ে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তাদেরকেই এই দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। ”

এদিকে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই মনে করছেন, মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যকার দূরত্ব দূর করতে না পারা কমিশনের ব্যর্থতা। কমিশন অনুঘটকের ভূমিকা পালনের কথা বললেও, এর ওপর জনগণের প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেক বেশি। একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়ায় এই কমিশনের কাছ থেকে একটি দৃঢ় ও কার্যকর সমাধান আশা করা হয়েছিল বলেও তারা মত দেন। কিন্তু কমিশন দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারলেও তাদের অনড় অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি।

তবে এর পুরো দায় কমিশনের ওপর চাপানোও যুক্তিযুক্ত নয় বলেও কেউ কেউ মত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “কমিশন কেবল অনুঘটকের কাজ করতে পারে, বাস্তবায়নের পথ দলগুলোকেই খুঁজে বের করতে হবে। ” বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস এতটাই গভীর যে, কোনো কমিশনের পক্ষেই হয়তো রাতারাতি এর সমাধান করা সম্ভব নয়। এই ব্যর্থতা মূলত দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোরই, যারা জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে এই বিশাল আয়োজন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ দলগুলোর এই মতানৈক্যকে বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবেই দেখছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বিএনপি মনে করছে নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতা যাবে, ফলে সরকার গঠনের পর তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে, এমন কিছুতে তারা একমতে পৌঁছাতে চাইছে না। ” তবে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এতে বিএনপির জন্য একটি ঝুঁকিও রয়েছে। যদি জনমনে এই ধারণা তৈরি হয় যে বিএনপি সংস্কার চায় না, তবে তা তাদের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সময় প্রায় শেষের দিকে। অথচ জুলাই সনদের ভাগ্য এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যের সুতোয় ঝুলছে। একদিকে বিএনপি নির্বাচিত সংসদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো প্রাক-নির্বাচন আইনি সুরক্ষার দাবিতে অনড়। বিশেষজ্ঞরা বিকল্প পথের সন্ধান দিলেও সেগুলোর বাস্তবায়নও সময়সাপেক্ষ এবং জটিল।

তবে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয় বলেও মত দিচ্ছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। সময়ের সঙ্গে এর পরিবর্তন হতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। জুলাই সনদকে ঘিরে তৈরি হওয়া জাতীয় প্রত্যাশার চাপ এবং দলগুলোর মধ্যকার অবিশ্বাস—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। এই সনদ যদি শেষ পর্যন্ত একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই থেকে যায়, তবে রাষ্ট্র সংস্কারের এই বিশাল আয়োজন সাধারণ মানুষের মধ্যে কেবল হতাশারই জন্ম দেবে বলে ভাবছেন তারা।

এসবিডব্লিউ/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।