ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পর্যটন সহায়ক বৃক্ষ হতে পারে বিলুপ্তপ্রায় ‘উদাল ফুল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২০
পর্যটন সহায়ক বৃক্ষ হতে পারে বিলুপ্তপ্রায় ‘উদাল ফুল’ বসন্ত প্রকৃতির বিলুপ্তপ্রায় উদাল ফুল। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে নিজের দারুণভাবে মেলে ধরেছে ফুলটি। পথ পেরোতেই দূর থেকে চোখ পড়ে যায় এ ফুলগুলোতে। একবার তাকালে চোখ আর সরানো যায় না। গাছজুড়ে শুধু গুচ্ছ গুচ্ছ মুগ্ধতা! সূর্যের আলোয় ফুলগুলো যেন আরও চকচক করে উঠেছে।

এ ফুলগুলো নাম উদাল। অপূর্ব সৌন্দর্যকে জানান দিয়ে বসন্ত প্রকৃতিতে এখন ফুটে রয়েছে।

পুরো গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। পাতা নেই একটিও। পাতাগুলো ঝরে পড়ে ফুল ফোটার পথকে স্বার্থক করে দিয়ে গেছে। এটিই এ গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ডালে পাতা থাকা অবস্থায় গাছটি তার দীর্ঘ শরীরজুড়ে নিজেকে ফুলে ফুলে সুসজ্জিত করে না কখনো।  

মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের শেষ সীমানায় উদাল গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে সোনারঙের বৃক্ষ হয়ে। এর ইংজেজি নাম Hairy Sterculia বা Elephant rope tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sterculia villosa. এটি Malvaceae পরিবারের উদ্ভিদ। গাছটি প্রায় ২০ মিটার বা তার থেকে কিছু বেশি লম্বা হয়ে থাকে। উদাল ফুলগুলোর সামনের দিকটা হলুদ এবং ভেতরে কমলা রঙের হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এই উদাল বৃক্ষটি আমাদের দেশে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ। তবে এক সময় প্রচুর ছিল। এখন অনিয়ন্ত্রিত আহরণের কারণে বিলুপ্তির দিকে চলে গিয়েছে। বসন্ত প্রকৃতির বিলুপ্তপ্রায় উদাল ফুল।  ছবি: বাংলানিউজআমাদের বনভূমিগুলোতে এখন বড় উদাল গাছ আর চোখে পড়ে না। বড় গাছটাকে কেটে ফেললে এর গোড়া দিয়ে অনেকশাখা বেরোয়। সেগুলোকে বারবার কাটে। পাতাগুলো ফেলে দিয়ে ডালপালা শহরে বিক্রি হয়ে থাকে ‘উদাল’ বৃক্ষ নামে। পত্রবিহীন অবস্থায় পুরো বৃক্ষজুড়ে এ সময়ে পুষ্পিত হয়ে থাকে। বাহারি উদ্ভিদ হিসেবে একলাইনে অনেকগুলো রোপণ করা যেতে পারে। এটি ওষুধিগুণ সম্পন্ন তাই ঢাকায় ফুটপাতে বিক্রি হয়।

আঁশ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদাল গাছের ছাল দিয়ে উন্নতমানের ফাইবার (আঁশ) হয়। এই ফাইবার দিয়ে সাধারণত জঙ্গলে হাতি বাঁধার দড়ি তৈরি করা হয়। কিংবা জাহাজের নোঙর করতে যে দড়ি লাগে তা এই উদাল গাছের ফাইবার দিয়েই তৈরি। গাছের বাকলগুলো লম্বা করে কেটে আঁশটা তুলে ফেলে পানিতে ভিজালে একটু পচে। তখন এটি দড়িতে পরিণত হয়।

পত্রঝরা অবস্থায় পুরো গাছজুড়ে ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে থাকে। কী যে ভালো লাগে তখন। নিজ চোখে না দেখলে এটা বলা যাবে না। সোনালি রঙ ধারণ করে থাকে পাতাহীন গাছটিতে। এটা বীজ বাদামের মতো। এটা অনেকে খায়। ফলটা যখন ফাটে তখন স্টারের (তারা) মতো হয়ে যায়। বীজের আবরণ একটু চকলেট কালার বলেও জানান এই গবেষক।  

ওষুধিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, উদাল গাছটি ওষুধিগুণসম্পন্ন। এর রস খেলে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয় এবং শক্তিবর্ধক। এছাড়া পেট ও শরীর ঠাণ্ডা রাখে। এজন্য কেউ কেউ সকালে উঠে এক গ্লাস উদাল শরবত খেয়ে থাকেন।    

আক্ষেপ করে উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ফাইবারের জন্য কেটে ফেলা, অনিয়ন্ত্রিত আহরণ, এর টিম্বর ভ্যালু (কাঠের দরদাম) বেশি না থাকার কারণে বনভূমিতে এ বৃক্ষের গুরুত্ব কম বলে নতুনভাবে রোপণ করা হয়নি প্রভৃতি কারণে এই সৌন্দর্যময় উদ্ভিদটি আজ বিপন্ন। আমাদের প্লেন্টেশনের (চাষাবাদ) তালিকায় এ বৃক্ষটি এখনো আসেনি। বসন্ত প্রকৃতির বিলুপ্তপ্রায় উদাল ফুল।  ছবি: বাংলানিউজউদাল বৃক্ষের সৌন্দর্য বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনে করুন, কোনো বিশেষ এলাকার এক-দুই কিলোমিটারজুড়ে পাকা সড়কের দু’ধারে কৃষ্ণচূড়ার মতো উদাল গাছ লাগানো হলো। যখন সব গাছে একসঙ্গে ফুল ফুটবে তখনকার বিষয়টিকে একটু কল্পনা করুন তো! আমরা আমাদের ‘চেরিব্লোজম’ এর সঙ্গে কল্পনা করে বলতে পারতাম যে ‘উদালব্লোজম’। এর ফুলগুলো কিন্তু প্রায় দু’সপ্তাহ থাকে। ১০-১২ দিন ধরে আমরা যদি গাছের পুরো ফুলগুলো ধরে রাখতে পারি তাহলে তো এটি দারুণ উপভোগ্য। এটিকে ঘিরে ফুল বা প্রকৃতিপ্রেমীদের আগমন ঘটলে ওই স্থানের পর্যটন বিকশিত হত। এই নানা বিষয়গুলো এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

ফাইবার বা আঁশের জন্য বড় বড় উদাল গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। এই উদালবৃক্ষটি নতুন করে আমাদের বনভূমিসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পথের দু’দিকে লাইন করে লাগানো প্রয়োজন। বিশেষ করে অ্যাভিনিউ বা পার্কে। এর ফলে প্রতিবছর বসন্ত মৌসুমে এই গাছগুলো ফুলে ফুলে দারুণভাবে মুখরিত হয়ে সৌন্দর্য ছড়াবে বলেও জানান উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।