ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিপন্ন তালিকায় চলে যাচ্ছে ‘সবুজ-ধুমকল’  

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
বিপন্ন তালিকায় চলে যাচ্ছে ‘সবুজ-ধুমকল’
  সবুজ-ধুমকল জোড়া বেঁধে চলে। ছবি: ইনাম আল হক

মৌলভীবাজার: একজোড়া পাখি বুনো ফলের ডালে। খাবার খেতে খেতে তারা পরস্পর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।

পুনরায় ফিরে আসছে কাছে-ফলের গ্রহণের টানে। ফল খাওয়ার এমন প্রাকৃতিক দৃশ্যে জুড়িয়ে যায় হৃদয়।    
 
পাহাড়ি বনের অদেখা পাখি ‘সবুজ-ধুমকল’ (Green Imperial Pigeon)। পাহাড়ি বনকে প্রসারিত হতে না দেওয়া এবং বনের খাদ্যসংকটের ফলে অনেক প্রাণীর মতো এ পাখিটির অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
 
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে মাত্র ২ প্রজাতির ‘Imperial Pigeon’ অর্থাৎ ‘ধুমকল পায়রা’ রয়েছে। পৃথিবীতে রয়েছে ৪২ প্রজাতির। কিন্তু আমাদের থেকে পশ্চিমের দেশগুলোতে ওরা নেই। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সবুজ পাহাড়ি বনগুলোতে ওরা আছে। সাতছড়ি উদ্যানের পাশে সবুজ-ধুমকল।  ছবি: ইনাম আল হক
 পাখিটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমরা হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারির কাজ সেরে লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে শ্রীমঙ্গল ফিরছি; হঠাৎ গাড়ি জানালা দিয়ে দেখি এক জোড়া Green Imperial Pigeon। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে আমরা তাদের ছবি তুললাম। চা-বাগানের ফাঁকা গাছে ওরা খুবই কম আসে। কিন্ত ওখানে ওরা নিমের ফল খেতে এসেছিল। এদের আকৃতি ৪৩-৪৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।  
 
‘শরীর সবুজ বলে সহজে লোকের চোখে পাড়ে না, ডানাটা একটু বেশি ঘনসবুজ। ও ঘুঘুর মতো ডাকে; কিন্তু অনেক গম্ভীর গলা। বনে ঢুলকেই ডাক শুনে বুঝতে পারি ইমপেরিয়াল পিজন আছে আশ-পাশে। এরা হলো ফল খাওয়া পাখি। শুধুমাত্র বুনো ফলই খায়। ওরা ঝাঁক বেঁধে আসে না। আমি একজোড়া গ্রিন ইমপেরিয়াল পিজন দেখতে পেলেই মহাখুশি। ’
 
ইনাম বলেন, ‘সবুজ-ধুমকল’ বিরল পাখি; তবুও টিকে আছে। ওর বড় ভাগ্য, লোকে ওকে খুঁজে পায় না। হরিয়াল (Green Pigeon) যেমন বটগাছে আসে বলে লোকজন তাকে সহজে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু ধুমকলকে মারা ততটা সহজ নয়। একমাত্র চট্টগ্রামে ক’বছর আগে আমি নৃ-গোষ্ঠী মুরংদের এই পাখিটিকে বন্দুক দিয়ে মারতে দেখেছিলাম। কিন্তু সিলেটে লোকের হাতে খুব কমই মারা পড়ে। কারণ লোকে ওকে দেখতে পায় না।
 
‘ও শুকনো কাঠি দিয়ে গাছের উঁচুতে বাসা করে। ঈগলের নাগাল ছাড়া সে বড় পাখি বলে কিছুটা নিরাপদ। প্রাকৃতিকভাবে মারা পড়ে না। তবে ছানা হলে খাটাশ, বনবিড়াল হয়তো ওদের খেয়ে ফেলে। কিন্তু এটি প্রাকৃতিক ব্যাপার বলে এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে না। মানুষ মারলেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই মানুষ কর্তৃক পাখি ও প্রাণী শিকারের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যাপকভাবে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ’
 
পাখির প্রজনন এবং বন সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ‘এরা ঘুঘু পাখির মতো বছরে দুটো ডিম পাড়ে। অসুবিধা হলো- একটি ডিম ফুটলো না; বা বড় হওয়ার আগেও কোনো শিকারী পাখি/প্রাণী খেয়ে ফেললো। ফলে অনেক সময় ৫/১০ বছরেরও সে বয়স্ক বাচ্চা রেখে যেতে না পারলে ওদের বংশবিস্তার প্রাকৃতিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়াও এ পাখিটি যে ফল খায়; সেই ফলগাছগুলোও কমে গেছে। বন ছোট হয়ে গেছে। এরাই ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে বন প্রসারিত করে। কিন্তু আমরা তো এখন বন প্রসারিত হতে দিই না। বনকে তো আমরা আটকে রেখেছি একটা ছোট্ট জায়গার মধ্যে। ’ বুনোফল খেতে চায় সবুজ-ধুমকল।  ছবি: ইনাম আল হক
 রাজকীয় অপূর্ব সুন্দর এক পাখি গ্রিন ইমপেরিয়াল পিজন; আমাদের জালালি পায়রা থেকেও সে আকারে বড়। এই পাখিটি আমাদের বনে টিকে থাকুক-এটাই আমরা চাই। এই ৪২ প্রজাতির প্রত্যেকটি পাখিই কিন্তু অপূর্ব। তবে ওদের অনেকগুলোই কিন্তু পৃথিবীতে বিপন্ন। ভাগ্যক্রমে আমাদের সবুজ ধুমকলটা রয়েছে; এখনো আমরা ‘বিপন্ন’ ঘোষণা করিনি। তবে মনে হয়-খুব শিগগির এ প্রজাতিটিও বিপন্ন তালিকায় যাবে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।