ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পদ্মাপাড়ের রাজশাহী 

রাজশাহী: সারা দেশের মধ্যে আজও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।  

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগের দিন বুধবার ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এটিই ছিল এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অর্থাৎ সামান্য বিরতি দিয়ে রাজশাহীর ওপর দিয়ে আবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বাড়ে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সিয়াসের মধ্যে থাকলে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।  

বিশেষ করে মাঘ মাস শুরুর পর রাজশাহীতে বেড়েছে শীত। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৫ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

মূলত গত ১৫ জানুয়ারির পরই দ্বিতীয় দফায় দিনের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। আর আবহাওয়ার এই পরিসংখ্যান বলছে যতই দিন যাচ্ছে, তাপমাত্রার পারদ কেবলই নিচের দিকে নামছে।  

এদিকে, মৌসুমের দ্বিতীয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরুর পর বৃহস্পতিবার ভোরে ঘন কুয়াশায় মুড়ি দিয়েছিল পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। দিনভর বয়ে চলা ঠাণ্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে পথে-প্রান্তরে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো। সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা গেলেও রোদের উত্তাপ শীতার্ত মানুষগুলোর গায়ে লাগেনি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতেই আবারও অসহনীয় হয়ে ওঠে মাঘের শীতের দাপট।  

গাছপালা বেশি থাকায় শহর-নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এখন শীতের কাঁপুনি বেশি। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষের জন্য এই শীতের তীব্রতা বয়ে এনেছে বাড়তি কষ্ট ও দুর্ভোগ। হিমেল বাতাস আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তর জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।  

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ পড়েন বিপাকে। হঠাৎ করে আবারও শীতের প্রকোপ বাড়ায় কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। শীত যতই বাড়ছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শীতজনিত রোগীর সংখ্য ততই বাড়ছে। শিশু ও বয়স্করাই অন্যদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক নাসিমুল ইসলাম লুৎফর বাংলানিউজকে বলেন, শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে নবজাতক শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের শিশু ও বয়স্করাও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন। চলমান এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আরও দুই-তিন দিন রাজশাহীসহ সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে। ফলে নতুন করে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার সারা দেশের মধ্যে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বরিশালে ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমেছে রাজশাহীতে। এই জেলায় আরও কয়েক দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম রেজওয়ানুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। একই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ কেটে গেলে শীতের প্রকোপও কমে আসবে। তবে এর আগে সকাল-সন্ধ্যা ও রাতে ঘন কুয়াশার প্রভাব থাকবে পুরো অঞ্চলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এসএস/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।