ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

ক্রিকেট

চলে গেলেন পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট দলের সর্বশেষ জীবিত সদস্য

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২০, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
চলে গেলেন পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট দলের সর্বশেষ জীবিত সদস্য উজির মোহাম্মদ/এমএইচএম

পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের এক মহীরুহ চিরবিদায় নিলেন। দেশটির সাবেক টেস্ট ব্যাটার এবং বিখ্যাত মোহাম্মদ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান উজির মোহাম্মদ ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সোমবার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। ১৯২৯ সালে ভারতের জুনাগড়ে জন্মগ্রহণ করা এই কিংবদন্তি ছিলেন বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার হানিফ, মুশতাক ও রইস মোহাম্মদের ভাই এবং পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলা চার মোহাম্মদ ভাইয়ের মধ্যে অন্যতম।

পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি এক বিবৃতিতে উজির মোহাম্মদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে টেস্ট ক্রিকেটে তার অনবদ্য অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নকভি বলেন, ‘উজির মোহাম্মদ কেবল একজন ভালো ব্যাটসম্যানই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত পরিশীলিত মানুষ। ’

উজির মোহাম্মদের ক্রিকেটীয় দূরদৃষ্টি কতটা প্রখর ছিল, তার এক অনন্য উদাহরণ তুলে ধরেন তার ছোট ভাই ও সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার সাদিক মোহাম্মদ। ভারতের জুনাগড় থেকে করাচিতে আসার পর শৈশবে তারা পাঁচ ভাই যখন ক্রিকেট খেলতেন, তখন উজিরই প্রথম পরিবারে একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সাদিকের স্মৃতিচারণে উঠে আসে সেই দিনটির কথা, ‘একদিন বড় ভাই আমাকে ডেকে বললেন, ‘আমাদের পরিবারে কোনো বাঁহাতি নেই, তুমি একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হও না কেন?’ তার সেই নির্দেশনাই আমার ভাগ্য বদলে দেয়। এরপর থেকে অনুশীলনে অন্যরা একবার সুযোগ পেলে আমি পেতাম পাঁচবার। তিনি সবসময় বলতেন, ‘ব্যাট করবে বাঁহাতে’। ’

পাকিস্তানের সর্বপ্রথম টেস্ট দলের এই বর্ষীয়ান সদস্যের টেস্ট পরিসংখ্যান (২০ ম্যাচে ২৭.৬২ গড়ে ৮০১ রান) হয়তো তার প্রতিভার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটায় না, তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৬০ ম্যাচে ৪০.৪০ গড় তার সামর্থ্যের আসল পরিচয় বহন করে।

তার সংক্ষিপ্ত অথচ প্রভাবশালী ক্যারিয়ারে এমন কিছু ইনিংস রয়েছে যা পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৫৪ সালের ওভাল টেস্টে তার চার ঘণ্টা ধরে খেলা ৪২ রানের লড়াকু অপরাজিত ইনিংসটিই ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিল প্রথম ঐতিহাসিক জয়। এরপর ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে অধিনায়ক আবদুল হাফিজ কারদারের সাথে তার গড়া শতরানের জুটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। শুধু তাই নয়, ১৯৫৭-৫৮ সালে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়ে তিনিই ছিলেন দলের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান।

সাদিক মোহাম্মদ সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ওয়েস হল এবং চার্লি গ্রিফিথের মতো বিশ্বসেরা বোলারদের বিপক্ষে তিনি সেই সেঞ্চুরিটি করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইস্পাতকঠিন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং দেশের প্রয়োজনে জ্বলে ওঠার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। ’

ব্যাটসম্যান উজিরের চেয়েও সম্ভবত প্রজ্ঞায় এগিয়ে ছিলেন ক্রিকেটার উজির। খেলার আইন ও নিয়মকানুন সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল কিংবদন্তিতুল্য, যা তাকে অধিনায়ক কারদারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পরামর্শকে পরিণত করেছিল। এর সেরা উদাহরণ ১৯৫৭-৫৮ সালের কিংস্টন টেস্ট। গ্যারি সোবার্সের বিশ্বরেকর্ড গড়া ৩৬৫ রানের ইনিংসের পর দর্শকরা মাঠে ঢুকে পড়লে পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিক তখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস ঘোষণা করলে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে ৯০ মিনিট ব্যাট করতে নামতে হতো। উজিরই তখন কারদারকে মনে করিয়ে দেন যে, অস্বাভাবিক কারণে পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখানে খেলা চালিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আম্পায়াররা প্রথমে দ্বিধায় থাকলেও, নিয়ম বই ঘেঁটে উজিরের কথাই মেনে নিতে বাধ্য হন।

বড় ভাই হিসেবে তিনি ছিলেন পরিবারের বটবৃক্ষ। সাদিক বলেন, ‘তিনি আমাদের শান্ত থাকতে শেখাতেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে কখন এবং কীভাবে আচরণ করতে হবে তার পাঠ দিতেন। যেকোনো সমস্যায় তিনিই ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। ’

অবসরের পর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর আগে তিনি পিসিবি’র উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তার ক্রিকেটীয় জ্ঞান ও কঠোর শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন তরুণদের জন্য সবসময়ই ছিল এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সাদিকের কথায়, ‘তিনি শৈশব থেকে অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য শৃঙ্খলার মধ্যে জীবনযাপন করেছেন, রাত নয়টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়া ছিল তার বহুদিনের অভ্যাস। ’

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।