বিশ্বকাপে রানের ‘মহোৎসব’ চলছে! এই নিয়ে সাবেক অনেক বোলারের আক্ষেপ! এভাবে চলতে থাকলে, আগামীতে কোন ছেলের হাতে কেউ বল তুলে দিয়ে বলবে না; ‘যাও বাবা; বল কর। আগামীতে বড় বোলার হবে!’
ক্রিকেট মহলের অনেকের মন্তব্য; খেলাটা একেবারে ব্যাটসম্যানদের জন্য একপেশে বানিয়ে ফেলা হয়েছে! কথাগুলো একেবারে উড়িয়ে বাউন্ডারি লাইনের ওপারে ফেলে দেয়া যাচ্ছে তাও নয়।
তিনশ, সাড়ে তিনশ, চারশ! খুব বড় কোন স্কোর মনে হচ্ছে না এখন আর! দক্ষিণ আফ্রিকা তো দু’দুবার চারশ করে ফেললো! অস্ট্রেলিয়াও করলো। আর তিনশ? সেটা তো আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডও করছে। সেখানে নেলসনে বাংলাদেশ টস জিতে যখন ফিল্ডিং করলো আর স্কটিশরা ৩১৮ রান তুললো, তখন যদি কারো ভ্রু কুচকে যায় তার জন্য শুধু একটা কথাই বলার ছিল; ‘দয়া করে এবারে বিশ্বকাপের বিভিন্ন ম্যাচের স্কোরকার্ড গুলো দেখুন। এই তিনশ আঠার রানকে না টপকাতে পারলে সেটা হবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতা!’ হ্যাঁ, মাইকেল হোল্ডিং থেকে মার্ক রিচার্ডসন দু’জনেই বলে ফেললেন;‘ নেলসনে তিনশ কোন রান-ই না!’
সত্যিই তাই স্কটিশদের ৩১৮ রান বাংলাদেশ যেভাবে তাড়া করে জিতলো সেটা খুব স্বাভাবিক ছিল। ওটা না করতে পারলে প্রশ্ন উঠতো তাহলে আর বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন কেন? না, সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ তামিম-মাহমুদউল্ল্যাহ- মুশফিক -সাকিবরা দেননি।
১১ বল বাকি থাকতেই ম্যাচটা জিতেছে ৬ উইকেটে। এবং সেটা দুর্দান্ত অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলে দাপটের সাথে।
তারপরও একটু আক্ষেপ হবে তামিমের জন্য। ফর্ম হারানো তামিম ফর্মে ফিরলেন। ভালভাবেই ফিরলেন। তার এই ফর্মে ফেরাটা উদযাপন করতে পারতেন সেঞ্চুরি দিয়ে। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে দাড়ি পড়ে গেলো তার ইনিংসে। থেমে গেলেন ৯৫ রানে। কিন্তু তার আগে মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৯ রান যোগ করলেন। ৬২ বলে ৬২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমশন পেয়ে ওয়ান ডাউনে নামা মাহমুদল্ল্যাহ। তবে তার থেকে আরো উজ্জ্বল এবং সাবলীল ছিলেন মুশফিক। ৪২ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেললেন এই উইকেটকেকিপার ব্যাটসম্যান। মুলতঃ তার ইনিংসটা ম্যাচটাকে বাংলাদেশের দিকে টেনে আনলো। ঐ সময় দ্রুত রান তুলে আস্কিং রান রেটকে কখনোই বড় হতে দেননি ছোটখাটো এই ক্রিকেটার। তিনি যখন আউট হলেন, তখনো ৭২ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের ম্যাচ জিততে। কিন্তু উইকেটে ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি যে বাংলাদেশ দলে নির্ভরতার অনেক বড় প্রতীক সেটা আরো একবার প্রমান করলেন তরুণ সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে, দলকে জিতিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে। তার নামের পাশে তখন ৪১ বলে অপরাজিত ৫২ রান। আর সাব্বির রহমান খেললেন ৪০ বলে অপরাজিত ৪২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
ব্যাট হাতে দলের হয়ে ফিনিশিং টাচটা যেমন দিলেন সাকিব, তেমনি বল হাতেও তিনি -ই ছিলেন সবচেয়ে কার্যকরী বোলার। স্কটিশদের বিব্রত করতে স্ট্র্যাট্রেজি বদলে বাংলাদেশ মাশরাফির সঙ্গে সাকিবের হাতে তুলে দিয়েছিল নতুন বল। এবং বাংলাদেশের এই চালটা সফল বলা যেতেই পারে। কারণ, যদিও উইকেটা তিনি পেয়েছেন ইনিংসের শেষ ওভারে, তবুও রান আটকে রাখার ক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল ছিলেন সাকিব। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে তিনিই বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ইকোনোমি রেট বজায়ে রাখলেন। ওভার প্রতি তার রান খরচা ৪ দশমিক ৬! রান উৎসবের এই ম্যাচে ওরকম একটা বোলিং ফিগার কিছুটা হলেও ঈর্ষনীয় নয় কি! লো স্কোরিং ম্যাচে মিচেল জনসনের মতো তারকা বোলারও যেখানে ৬ ওভারে ৬৮ রান দিয়েছেন, সেখানে সাকিবের দশ ওভারে ৪৬ রান, অন্য যুক্তিও দাঁড় করাছে না?
ভাল বোলার যে কোন উইকেটেই ভাল বল করতে পারেন। সেটা বিশ্বকাপ নামক রান উৎসবে এসেও সাকিব প্রমান করলেন। সাকিব আল হাসান বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার কি না তা নিয়ে এখনো যারা একটু আধটু ফিসফিসানি করেন; তা বন্ধের জন্য সাকিব আল হাসান তো আর সবার ঘরে ঘরে বিভিন্ন ম্যাচের স্কোর কার্ড পৌঁছে দিতে পারবেন না!, তাই দয়া করে তারা যেন একটু স্কোর কার্ডের উপর চোখ বুলিয়ে নেন!
তবে এই ম্যাচের স্কোরকার্ড বলছে; ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান স্কটল্যান্ডের ওপেনার কোয়েটজার। ১৩৪ বলে ১৫৬ রানের খুব ভাল একটা ইনিংস খেলে তিনিই মুলত: স্কটিশদের ইনিংসকে পৌঁছে দেন তিনশ’র কোটায়। ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কারটাও উঠলো তাই তার হাতে। আর বাংলাদেশ নেলসন থেকে ব্র্যাডম্যানের শহরে ফিরছে পূর্ণ দু’পয়েন্ট নিয়ে। ভুল বলা হলো! শুধু দুটো পয়েন্ট নয়, অ্যাডিলেডে ৯ মার্চ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাসও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। কারণ, বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও যোগ দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে