ঢাকা: ফুটবলবিশ্বের ‘একক অধিপতি’ বলা হয় ব্রাজিলকে। ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ পাঁচবার তাদের মাথায় সেরার মুকুট উঠেছে বলেই এমন সর্বজনবিদিত খেতাব পেয়েছে তারা।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের এই হাতছানিকে মরীচিকা না ভেবে অনুপ্রেরণা পেতে সোনালি ইতিহাস ঘাঁটতে পারে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া।
পরিসংখ্যানিক ইতিহাস কী বলছে? ১৯৮৭, মাঝে দু’টো বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে ফের ১৯৯৯, ২০০৩, ২০১৫। এই চারবারের আয়োজনের সমাপ্তিপর্বে অজিরাই তো বাঁধভাঙা উল্লাস করেছে।
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজন করেছিল চিরবৈরী ভারত ও পাকিস্তান। দু’দেশের মাটিতে প্রায় মাসব্যাপী ক্রিকেটীয় যুদ্ধ শেষে শিরোপা হাতে নিয়ে প্রথমবারের মতো গর্বে বুক ফুলিয়ে দেশে ফেরে অ্যালান বোর্ডারের অজি বাহিনী। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বোর্ডার বাহিনীর কাছে ৭ রানে হেরে বুক চাপড়ে দেশে ফিরতে হয় ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে।
এরপর ১৯৯২ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপ থেকে যায় উপমহাদেশের দুই পরাশক্তি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে।
তারপর আবারও অজি রাজত্ব। হ্যাটট্রিক অর্থাৎ টানা তিনবার বিশ্বকাপ জিতে নেয় তারা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দলটির নেতৃত্বে ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। আর ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন রিকি পন্টিং।
৯৯’র ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় স্টিভ ওয়াহ’র অজি বাহিনী। সেই যে শুরু। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ক্রিকেটে একক রাজত্ব চালায় অস্ট্রেলিয়া।
দ্বি-জাতি, ত্রি-জাতি সিরিজ বা অন্য যে কোনো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষকে নাকানি-চুবানি দেওয়ার ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে অজিদের কাছে ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয় ভারত।
আর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও বজায় থাকে অজি শাসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একক আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে ৫৩ রানে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তোলে ওশেনিয়ান পরাশক্তি।
২০১১ বিশ্বকাপে অবশ্য খুব বেশি এগোনো হয়নি অজিদের। কোয়ার্টার ফাইনালেই ভারতের কাছে ৫ উইকেটে হেরে ফিরতি ফ্লাইট ধরতে হয় তাদের।
গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতার জন্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটযোদ্ধারা উপমহাদেশের ‘বৈরী পরিবেশ’কে দায়ী করলেও এবার কিন্তু নিজেদের পরিবেশেই খেলছেন তারা। নিজেদের পরিবেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে ফাইনালেও পৌঁছে গেছে মাইকেল ক্লার্ক বাহিনী। এখন একেবারে ঘরের মাঠ মেলবোর্নেই বৃহস্পতিবার বিশ্বসেরার মুকুট পঞ্চমবারের মতো মাথায় তুলতে নামবে তারা।
ফুটবলে ব্রাজিলের মতো ক্রিকেটে নিজেদের ‘একক অধিপতি’ বানাতে এখন সেলেকাওদের সোনালি ইতিহাসও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে লাগাতে পারে ক্লার্ক বাহিনী।
সেক্ষেত্রে সেলেকাওদের পাঁচটি সেরার মুকুট জয়ের গল্পগুলো জেনে নিতে পারে অজি বাহিনী।
ব্রাজিল প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৫৮ সালে। সুইডেনে অনুষ্ঠিত ওই আসরের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৫-২ গোলে হারিয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় লাতিন আমেরিকান জায়ান্ট দলটি।
এরপর ১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ নেয় সেলেকাওরা। মাঝে ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ বাদে দিয়ে ফের ১৯৭০ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ ঘরে তুলে ব্রাজিল। সে আসরে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় লাতিন আমেরিকানরা। তারপর দীর্ঘ বিরতি।
পাঁচটি বিশ্বকাপ শিরোপা খরায় ভুগে ১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র আসরের শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিলিয়ানরা। সেবারও সেলেকাওদের কাছে পেনাল্টিতে হেরে যায় ইতালিয়ানরা। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে ২০০২ সালের জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ ঘরে তুলে পঞ্চম মুকুট জয়ের গৌরব অর্জন করে লাতিন আমেরিকান পরাশক্তি।
তাহলে? অস্ট্রেলিয়া কি ক্রিকেটের ‘ব্রাজিল’ হতে পারবে? নাকি ‘জার্মানি’ই থেকে যাবে? পরিসংখ্যান-বিশ্লেষণ বাদ দিয়ে আপাতত চোখ রাখা যাক মেলবোর্নের মাঠের লড়াইয়েই।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫