ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

ক্রিকেট

আধুনিক ক্রিকেটের রূপকার কোকোর দর্শন গবেষণার বিষয়

শামীম চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:২৬, আগস্ট ১২, ২০২৫
আধুনিক ক্রিকেটের রূপকার কোকোর দর্শন গবেষণার বিষয়

ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসা থেকে ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের মাঠ পায়ে হাঁটা পথ। এই ক্লাবটিকেই কৈশোর-তারুণ্যে বড় আপন করে নিয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।

এই মাঠে ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টনের টানে ছুটে আসতেন কোকো। ওল্ড ডিওএইচএসকে দ্বিতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগে এন্ট্রির আইডিয়াও তার।

বাছাই পর্ব উতরানোর পেছনে ভূমিকা ছিল উইকেটকিপার-ব্যাটার কোকোর। উইকেটকিপার কাম ব্যাটার হয়ে এই ক্লাবের হয়ে কোকো খেলেছেন দ্বিতীয় বিভাগেও।  ২০০২ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে প্রমোশন পেল ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাব, তখন আরাফাত রহমান কোকো ক্লাবটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। বেগম খালেদা জিয়া তখন দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময় বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবকে দিয়েছেন সময়। আরাফাত রহমান কোকোর জীবনের বড় অংশই ছিল ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাব। ক্লাবের জন্য একটা থিম সং ঠিক করেছিলেন। বন জোভির সেই বিখ্যাত গান ‘ ইটস মাই লাইফ’।

আসলেই ক্রিকেট এবং ওল্ড ডিওএইচএস ছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর অনুপ্রেরণায় ২০০২-৩ মৌসুমে সেলিম শাহেদের নেতৃত্বে প্রথম বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনের টিকিট পায় ওল্ড ডিওএইচএস। প্রিমিয়ার ডিভিশনে উঠেই আবাহনীর ঘরের ছেলে হয়ে যাওয়া আকরাম খানকে দলে ভেড়ায় ওল্ড ডিওএইচএস। তাকে দল গঠনের স্বাধীনতা দেন আরাফাত রহমান কোকো। শ্রীলঙ্কা থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার পেম লাল-কে কোচ হিসেবে এনে, ফিজিও মিঠুকে সাপোর্টিং স্টাফ হিসেবে যুক্ত করেন কোকো।

তখন আবাহনী-মোহামেডানের মতো জায়ান্ট ক্লাব পর্যন্ত ন্যাচারাল টার্ফের উইকেটে অনুশীলনের সুবিধা ক্রিকেটারদের দিতে পারত না। কোকোর আইডিয়ায় ওল্ড ডিওএইচএসের খেলার মাঠে ন্যাচারাল সেন্টার উইকেট তৈরি করা হয়েছিল। জাতীয় দলের মতো ক্লাবের ক্রিকেটারদের অনুশীলন সুবিধা দিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছিল বোলিং মেশিন। এমন ফ্যাসিলিটিজ পেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনে নিজেদের অভিষেকে ট্রফি জয়ের উৎসব করে ওল্ড ডিওএইচএস। পরের বছর কেনিয়ার সুপার স্টার স্টিভ টিকোলোর উপস্থিতিতে ধরে রাখে শিরোপা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই ওল্ড ডিওএইচএসে খেলার সুযোগ পেয়ে তামিম ইকবাল নিজেকে চিনিয়েছেন। প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে পারটেক্সের বিপক্ষে ফতুল্লায় ১৮৮ রানের ঝোড়ো ইনিংসে হৈচৈ ফেলে দেন তামিম। এরপর তাঁর গায়ে ওঠে জাতীয় দলের জার্সি।  

২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকার গঠিত হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) আসে পরিবর্তন। বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান আরাফাত রহমান কোকো। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আমূল বদলে দেওয়া কোকোর সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল হিসেবে সর্বকালের সেরা তিন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালের আবির্ভাব দেখেছে বিশ্ব। শাহরিয়ার নাফীস, নাফিস ইকবাল, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, মেহরাব জুনিয়র, শাহাদাত হোসেন রাজিব, এনামুল জুনিয়র, সামছুর রহমান শুভ, আরাফাত সানি, সোহরাওয়ার্দী শুভরা আরাফাত রহমান কোকোর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল।

২০০২ সালের ১১ আগস্ট বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ জারি হলে বিসিবিতে আসে পরিবর্তন। বোর্ড পরিচালনায় গঠিত হয় ১০ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি। বদলে যায় ক্রিকেটের চেহারা। তরুণ সংগঠকদের সামনে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক ঝাঁক নতুন মুখ বদলে দিয়েছে এ দেশের ক্রিকেটের সাংগঠনিক চেহারা।

২০০৪ সালে ১৬ দেশের অংশগ্রহনে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন ছিল সে সময়ে বিসিবির জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মসৃণেভাবে পাড়ি দিতে পেরেছে বিসিবি আরাফাত রহমান কোকোর সুপরিকল্পনায়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে ঘিরে এ দেশের ক্রিকেট অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে কোকোর পরিকল্পনায়।  

উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ায় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা ছিল সে সময়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জ। একতলা প্যাভিলিয়নের পাশে স্টেডিয়াম ঘেঁষে একটা পুকুর থাকায় সেন্টার উইকেট থেকে বাউন্ডারি রোপের দূরত্ব ছিল বড়জোর ৫০ গজ। এই অসম্ভবকে সম্ভব করে সেখানেই নির্মিত হয়েছে দেশের দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেট স্টেডিয়াম।  

আশ্চর্য হলেও সত্য, এই স্টেডিয়াম নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রাক্কলিত বরাদ্দ ছিল মাত্র ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যে অঙ্কটা তখনকার প্রেক্ষাপটে  পর্যন্ত ছিল মহা সাশ্রয়ী। এই বাজেটের মধ্যে ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়াম নির্মাণ ছাড়াও ১টি ৩লা প্যাভিলিয়ন এবং ১টি ভিআইপি ও হসপিটালিটি বক্স, ৭০ আসনের প্রেস বক্স, ড্রেনেজ সিস্টেম, অভ্যন্তরীণ সড়ক, কার পার্কিং পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে এনএসসি। আরাফাত রহমান কোকোর আইডিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেডিয়ামগুলোর মতো একটি গ্রিন গ্যালারি স্থাপিত হয়েছে এই স্টেডিয়ামে।

বগুড়ায় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করলেই তো হবে না, আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি পেতে হলে এখানে দরকার অন্তত একটি চারতারা মানের হোটেল, আধুনিক মানের একটি হাসপাতাল, হেলিপ্যাড। স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেসবও নিশ্চিত করেছেন তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান। বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ক্রিকেট ফ্যাসিলিটিজ দেখে মুগ্ধ হয়ে দেন ইয়েস কার্ড। বগুড়া পায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর স্বীকৃতি।

২০০৪ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একক স্বাগতিক মর্যাদার পেছনেও ছিল আরাফাত রহমান কোকোর কৌশলগত পরিকল্পনা। আইসিসি প্রতিনিধিদলকে আকৃষ্ট করতে এ দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামো, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র বানানো হয়েছিল তার নির্দেশনায়।  
এক বছরের মধ্যে ঢাকা স্টেডিয়াম এবং এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ছাড়াও দেশে অন্তত ৬টি ভেন্যুকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা যাবে, এ বিশ্বাস ছিল কোকোর। কোন ৮টি ভেন্যুকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা হবে, সেগুলোও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তিনি।  

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দেয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আইসিসির ধারণা বদলে দিতে পেরেছিলেন কোকো। যে পথ ধরে বাংলাদেশ পায় ২০১১ বিশ্বকাপের যৌথ স্বাগতিক মর্যাদা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ইতোপূর্বের আসরসমূহে ছিল না দর্শক ক্রেজ। নীরবেই সম্পন্ন হয়েছে সেসব আসর। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সে ধারনা পাল্টে দিয়েছে। বিসিবির হিসাব অনুযায়ী ওই আসরে শুধু টিকিট কেটে সাধারণ গ্যালারিতে খেলা দেখেছেন প্রায় ৪ লাখ দর্শক!

ঢাকা স্টেডিয়ামকে নিয়ে ফুটবল-ক্রিকেটের দড়ি টানাটানির অবসানেও ভূমিকা রেখেছেন কোকো । মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামকে ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্স থেকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপান্তরের আইডিয়া তারই। কোকোর অনুরোধে বাংলাদেশের টেষ্ট মর্যাদার তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামকে ক্রিকেটের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এই স্টেডিয়ামকে ক্রিকেটের জন্য বরাদ্দ পেয়ে হোম অব ক্রিকেটে পরিণত করার আইডিয়াটা নেন আরাফাত রহমান কোকো। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোকোর ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত করতে বিনা পয়সায় জে ওয়ার্কসন নামের অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান নকশা তৈরি করে দেয়।  

মিরপুর স্টেডিয়ামের ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সুবিধাও তারই পরিকল্পনার ফসল। এনএসসির অর্থায়নে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের রূপান্তর কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে বিসিবিকে দুর্ভাবনায় পড়তে দেননি কোকো। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনএসসি থেকে ১৩ কোটি টাকা পেয়েছে বিসিবি। ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ওডিআই ম্যাচ দিয়ে শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়।

দর্শক হয় না বলে যে স্টেডিয়াম ছেড়ে দিয়েছে ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন, সেই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে উপচে পড়ে দর্শক। দেড় যুগের মধ্যে ২১৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে।  

ঢাকা স্টেডিয়াম এবং গুলশানের নাভানা টাওয়ার থেকে ২০০৮ সালে বিসিবির অফিস স্থানান্তরিত হয়েছে  মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। ২০০৫ সালে তিনি যখন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান, তখন বিসিবি গঠন করে একাডেমি। একাডেমির জন্য দরকার একটা পৃথক মাঠ, আবাসনের জন্য পৃথক ভবন। বিসিবির পক্ষে তখন একাডেমি ভবন নির্মাণের আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে আরাফাত রহমান কোকো ছুটে গেছেন দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছে। তাতেই মিলেছে সাড়া।

আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রগ্রামে বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ আয়োজন থেকে বিরত থাকতে এখন কতই না ছুঁতো খোঁজে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তবে আরাফাত রহমান কোকো যখন ছিলেন বিসিবিতে, তখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বিসিবির। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রণে ২০০৩ সালের জুলাই-আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশ প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে পেরেছে তার ক্রিকেট ডিপ্লোমেসির কারণেই।  

অর্থ সংকটের কারণে বাংলাদেশের ঘরোয়া এবং বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মানসম্পন্ন ক্রিকেট বল ব্যবহৃত হতো না তখন। এসজি,ডিউক, কোকাবুরা বল আমদানি করা ব্যয়বহুল। এসব ব্রান্ডের বল আমদানি করে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ আয়োজন অসম্ভব।  বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে বিশ্বসেরা ব্র্যান্ড কোকাবুরা বল সংগ্রহ করে নিজের লাগেজে করে এনেছিলেন মেলবোর্ন থেকে।  

২০০৪ সালে দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যুব দল হতাশ করলেও হতোদ্যম হননি কোকো। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কোকোর পরামর্শে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদকে দেয়া হয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নির্বাচকের দায়িত্ব। পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অনূর্ধ্ব-১৯ দল গঠন করেছিলেন ফারুক। তার সুফল পেয়েছে ওই দলটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। সেই আসরে ৫ম হয় বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশে ফ্রাঞ্চাইজি টি-২০ ক্রিকেট প্রবর্তনের পেছনেও মূল আইডিয়া আরাফাত রহমান কোকোর। ২০০৩-৪ মৌসুমে ক্লাব সমূহের আপত্তিতে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট  লিগ শুরু করা অসম্ভব হয়ে পড়ে যখন,  তখন প্রধানমন্ত্রী পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ক্রিকেটারদের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা দিতে বিকল্প আইডিয়া হিসেবে কর্পোরেট টি-২০ লিগ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন।

আরাফাত রহমান কোকো যতোদিন বিসিবিতে ছিলেন, ততোদিন বিসিবির কোনো কমিটিকে স্পন্সর নিয়ে ভাবতে হয়নি। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট আসর জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, কর্পোরেট ক্রিকেট লিগ এমননি স্কুল ক্রিকেট-প্রতিটি আসরেই স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের নিশ্চয়তা ছিল।  

ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকান্ডে নতুনত্ব আনতে ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ডস নাইট প্রবর্তন করেছে বিসিবি আরাফাত রহমান কোকোর পরিকল্পনায়। বিসিবিতে চেয়ার আঁকড়ে থাকতে চাননি এই আপাদমস্তক ক্রিকেট নিবেদিতপ্রাণ। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত বিসিবির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেননি আরাফাত রহমান কোকো। নীরবেই বিসিবি থেকে গেছেন সরে।  

বেঁচে থাকলে আজ কোকোর ৫৬তম জন্মবার্ষিকী পালিত হতো উৎসবমুখরভাবে। কিন্তু নিয়তির কী পরিহাস? মাত্র ৪৫ বছরেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন আরাফাত রহমান কোকো। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন ইমেজ প্রতিষ্ঠায় যা করেছেন, তা সত্যিই অবিস্মরণীয়।

লেখক : হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।