ঢাকা: ভারত সিরিজের জন্য অপেক্ষায় বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটভক্ত। একটি টেস্ট ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে পূর্নশক্তির দল নিয়ে ঢাকায় এসেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল।
সর্বশেষ ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে আবার টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। টেস্ট সিরিজে কেমন করবে বাংলাদেশ? ভাবনা-চিন্তা সময়ের হাতেই ছেড়ে দেওয়া যাক না। চলুন জেনে নেই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীতের টেস্ট সিরিজগুলো সম্পর্কে।
২০০০ সাল: টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর সাদা জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয়নি বাংলাদেশের। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে ঢাকায় তখন সাজ সাজ রব। প্রথম ইনিংসেই স্বাগতিকদের তাক লাগানো ব্যাটিং! আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ১৪৫ রানের কীর্তিতে বাংলাদেশ দলীয় ৪০০ রানের মাইলফলক পার করে। দ্বিতীয় ইনিংসে খারাপ করায় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হারে ৯ উইকেটের ব্যবধানে।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত শিবিরের দেয়ালে দুশ্চিন্তা লেপ্টে দিয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় তার অফস্পিন ঘূর্ণিতে তুলে নেন ৬ উইকেট। অভিষেকে এমন কীর্তি গড়ায় বুলবুল-নাইমুরের নাম উঠে যায় রেকর্ডবুকে।
২০০৪ সাল: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে চার বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে আসে ভারত। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দুটি টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হার মানে বাংলাদেশ। প্রথমটিতে ইনিংস ও ১৪০ রানে আর দ্বিতীয়টিতে ইনিংস ও ৮৩ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ভারতের অধিনায়ক তখন সৌরভ গাঙ্গুলি আর বাংলাদেশের হাবিবুল বাশার সুমন।
২০০৭ সাল: এবার ব্যবধান কমে আসে। তিন বছরের মাথায় ঢাকায় পা রাখে ভারত। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য ভারতীয় দলের নেতৃত্বে তখন রাহুল দ্রাবিড়। আর বাংলাদেশের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে তৃতীয় দিনটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ ‘ড্র’ করে বাংলাদেশ। বৃষ্টি-বিঘ্নিত সে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে শচিন টেন্ডুলকার ও সৌরভ গাঙ্গুলির সেঞ্চুরিতে আট উইকেটে ৩৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। মাশরাফি বিন মর্তুজার ৭৯ রানে ভর করে ২৩৮ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১০০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা।
বাংলাদেশকে ২৫০ রানের টার্গেট দেয় ভারত। জবাবে জাভেদ ওমর বেলিম ও হাবিবুল বাশারের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২৮ ওভার ব্যাটিং করে দুই উইকেটে ১০৪ রান করে টাইগাররা। শেষ ১৫ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন হয় ১৪৬ রান। আর ভারতের আট উইকেট। দুই অধিনায়কের সম্মতিতে শেষ পর্যন্ত ‘ড্র ’মেনে নেওয়া হয়। চার ইনিংস মিলে ২১৯ ওভার খেলা মাঠে গড়ায়।
সে ম্যাচে দুই ইনিংস মিলে পাঁচ উইকেট (৪+১) ও ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর করায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওই ম্যাচেই প্রথম টেস্ট ক্যাপ পড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় টেস্টে ঢাকার শের-ই-বাংলায় এসে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ। ইনিংস ও ২৩৯ রানে হারে স্বাগতিক দল। ভারতীয় টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের (দিনেশ কার্তিক, ওয়াসিম জাফর, রাহুল দ্রাবিড় ও শচিন টেন্ডুলকার) সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে তিন উইকেটে ৬১০ রান করে সফরকারীরা। জবাবে মাত্র ১১৮ রানে অলআউট হয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেড়শ রানের মধ্যে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা মাশরাফি বিন মর্তুজার ৭০ রানের ইনিংসে দু’শো পেরোয় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২৫৩ রান করে টাইগাররা। দুই ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ হারে ২-১ এ।
২০১০ সাল: বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ এটাই। ভারত আসে বিরেন্দর শেবাগের নেতৃত্বে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে তখন সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রামের জহুর আহেমদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে পাঁচদিন লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ হারে ১১৩ রানে। সেবার দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০১ রান করে হারের ব্যবধান কমায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র দুই রান।
পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট সিরিজ:
• বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে এ পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ৭ বার। যার মধ্যে একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বাকি ৬ ম্যাচেই হার মেনেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে তিন ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ।
• ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ছাড়া বাকি সবগুলো ম্যাচই খেলেছেন তিনি।
• রানের দিক থেকেও এগিয়ে আশরাফুল। ৬ ম্যাচ খেলে ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৪২.৮৮ গড়ে ৩৮৬ রান করেছেন তিনি। দুই টেস্ট খেলে ৫৮.৫০ গড়ে ২৩৪ রান করেছেন তামিম ইকবাল। আর ৫ ম্যাচ খেলে ২০.৬০ গড়ে ২০৬ রান করেছেন হাবিবুল বাশার সুমন।
• ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ রফিক। ৩ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব। এক ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়ারও কীর্তি রয়েছে রাজিবের। চার ম্যাচ খেলে ১১ উইকেট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে মাশরাফি বিন মর্তুজা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ০৮ জুন ২০১৫
এসকে/এমআর