ফতুল্লা থেকে: হার এড়ানো গেলো। কিন্তু ফলো অন এড়ানো গেলো না! তাতে অবশ্য বাংলাদেশের তেমন কোনো ক্ষতি হলো না।
বিরাট কোহলির নেতৃত্বে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক এক ভারতকেও দেখা গেল! যে ভারত উত্তেজক ক্রিকেট খেলতে চায়। যাদের শরীরী ভাষাও একেবারে অন্য রকম। টেস্ট ক্রিকেটে ভারত উপমহাদেশের মাটিতে তিন পেসার নিয়ে ক’টা ম্যাচ খেলেছে তা অঙুলের কড় গুনে বলা যাবে। সেই ভারত ফতুল্লা টেস্টে তিন পেসার নিয়ে নেমেছিল। ইশান্ত শর্মা-উমেশ যাদব- বরুণ অ্যারন মিলে অবশ্য বল করলেন মাত্র ২৫ ওভার। আর যে বাংলাদেশ এক পেসার রেখেছিল একাদশে এবং সেই একমাত্র পেসার মোহাম্মদ শহীদ একাই করেছেন ২২ ওভার। সঙ্গে যোগ করুন ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের হাত থেকে বেরিয়ে আসা আরো ৩ ওভার মিডিয়াম পেস বোলিং। তাহলে দাঁড়ালোটা কি? দু’টো দলই ফতুল্লা টেস্টে সমান সংখ্যক ওভার করালো পেসারদের দিয়ে। ওভারের হিসেবে হয়তো সমান। কিন্তু পার্থক্য হলো অন্য জায়গায়। আর সেটা ভারতীয় ক্রিকেটেও শেষ কবে দেখা গেছে মনে করতে পারছেন না ভারতীয় সাংবাদিকরাও। স্লিপ, লেগ স্লিপ রেখে বল করছেন ভারতীয় পেসাররা! আর সেটা একটা-দুটো ওভারে নয়। আক্রমণাত্মক ফিল্ড প্লেসমেন্টের এরকম নমুনা ভারতীয় অধিনায়ক রেখে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম এবং দ্বিতীয় ইনিংসের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে!
এবং হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে বিরাট কোহলির আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের নমুনা। আর সেটা দেখে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে বলতে হলো: ‘আপনার হাতে কোয়ালিটি বোলার থাকলে ওরকম কিছু করা যায়। ’ কথাটা অনেকাংশে সত্যি। তবে বাংলাদেশকে যে ফলো অন করতে হলো তাতে ভারতীয় বোলারদেও কৃতিত্বের চেয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদেরই দায়ই বেশি। ইমরুল কায়েস (৭২) ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা যেন টেস্ট মেজাজটাই ভুলে গিয়েছিলেন! মুশফিকের জায়গায় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে যিনি খেললেন সেই লিটন কুমার দাস ৪৫ বলে ৪৪ রান করে সাহসটা দেখালেন। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে আরো একটু টেস্ট মেজাজ দেখাতে পারলে বাংলাদেশ হয়তো ফলো অন এড়াতে পারতো। তবে না পারার দায়টা শুধু লিটনের একার নয়। দায় নিতে হবে মুমিনুল, সাকিব, তামিম, মুশফিকদেরও। কারণ, দায়িত্বশীল ব্যাটিংটা করতে পারলে ফলো অনের লজ্জাটাও এড়ানো যেতো। জুনে টেস্ট ম্যাচের আয়োজন নিয়ে একটু বেশি সমালোচনামুখর যারা তারাও বলতে পারতেন না ;‘বৃষ্টি বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিলো!’
বৃষ্টি কাকে বাঁচালো তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। তবে তর্কহীনভাবে একটা কথা বলাই যায়: এই টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তাভাবনার চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক ছিল ভারতীয়রা। তাদের ম্যাচ জেতার ইচ্ছার সামনে বাংলাদেশ নয়, বৃষ্টি-ই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই টেস্টে আক্ষেপ কিছু থাকলে সেটা ভারতীয়দের। তবে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ নিশ্চয়ই টেস্ট ক্রিকেটপ্রেমী নিখাঁদ সমর্থকদের। বাইশজন ক্রিকেটারের খেলা তারা যা দেখলেন তার চেয়ে বেশি দেখতে হলো বৃষ্টির খেলা! ক্রিকেট হয়তো এখন আর শুধু শীতকালীন খেলা নেই। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা-বসন্ত সারা বছর জুড়েই ক্রিকেট। তবে জুন-জুলাইয়ে বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেট আপনাকে কিছু হতাশা উপহার দেবে না তা কিভাবে হয়! আর যে ভারত বাংলাদেশে টেস্ট খেলার জন্য জুন-জুলাই ছাড়া সময় বের করতে পারে না, বৃষ্টির হাত দিয়ে ক্রিকেট ঈশ^র তাদেরকে এমন একটা উপহার দিলেন যা নিয়ে র্যাংকিং-এ তিন থেকে চারে নেমে যেতে হলো! তিন নম্বরে উঠে এলো নিউজিল্যান্ড। ফতুল্লার বৃষ্টিকে তাই ধন্যবাদ জানাতে পারে অন্য গোলার্ধে থাকা নিউজিল্যান্ড-ই!
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
জেএম