ঢাকা: ক্রিকেট মহলে একটা কথা চালু আছে সাউথ আফ্রিকার বিশ্বকাপ-ভাগ্য বৃষ্টির কারাগারে বন্দী। দু’দুটো বিশ্বকাপ থেকে তারা ছিটকে গিয়েছিল বৃষ্টির কারণে।
ক্রিকেটে এখন আর শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা-বসন্ত বলে কিছু নেই। বছরজুড়ে ক্রিকেট আর ক্রিকেট। তবুও বৃষ্টির সঙ্গে সাউথ আফ্রিকার যে সম্পর্ক তাতে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার আগেই বাঙালি মেতে উঠতে পারে ক্রিকেটীয় ঈদ-উৎসবে! যাদের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো সিরিজ জেতা হয়নি, সেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলে সেটা ঈদ-উৎসবের চেয়ে খুব একটা কম খুশির কিছু কি হবে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালির জন্য? সিরিজ জয় কেন, গোটা সিরিজে একটা ম্যাচ জিতলেই তো বাংলাদেশকে তা নিয়ে যাবে আটলান্টিকের ওপারে ২০১৭-র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সেই জয়টাও তাই হয়ে দাঁড়াতে পারে এদেশের মানুষের জন্য উৎসবের এক বড় উপলক্ষ্য। আইসিসি-র র্যাংকিংয়ে ৭ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা আটকাতে সাউথ আফ্রিকার পাশের দেশ জিম্বাবুয়েতে আবার একটা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে! অবশ্য সেটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়ারই বা কি আছে! পারলে বাংলাদেশ নিজের যোগ্যতায়ই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করবে। এবং সেটা সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়েই।
সাউথ আফ্রিকা অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছিল সেমিফাইনাল থেকে। আর বাংলাদেশের বিদায় ছিল ভারতের বিপক্ষে বির্তকিত এক কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ থেকে। তারপর বাংলাদেশ দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে পাকিস্তানকে ৩-০ তে বাংলাওয়াশ করলো। ভারতের বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ জিতলো। আর সাউথ আফ্রিকা সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে নতুন করে মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে। যদিও তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটার বিশ্রামের চেয়ে আইপিএল খেলেই সময় পার করেছেন। তাই বলা যায়, ক্রিকেটের মধ্যে তারাও ছিল। তবে তুলনামূলকভাবে তারাই একটু বেশি সজীব-সতেজ অবস্থায় সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে।
কিন্তু শুরু নয়, সবাই দেখতে চাইবে শেষটা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গ্রাফ অনেকটা উর্ধ্বমুখী। সেই ধারাটা ধরে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সাউথ আফ্রিকা। র্যাংকিং বলুন, ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত স্কিল বলুন, অভিজ্ঞতা বলুন, সাউথ আফ্রিকা বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে। তবে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলছি বিশ্বকে এই কথাটা জানিয়ে দেয়ার জন্য এরকম একটা দলের বিপক্ষে লড়াইয়ের চেয়ে ভাল মঞ্চ আর কি হতে পারে। এ বি ডি ভিলিয়ার্স-হাশিম আমলা-ডুমিনি-ডুপ্লিসেস এর মতো ব্যাটসম্যানদের বল করে নিজেকে প্রমাণ করার আরো বড় মঞ্চ পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের উনিশ বছরের তরুণ পেসার মোস্তাফিজ। যার স্লোয়ার আর কাটারে আপাতত বিস্ময়াচ্ছন্ন ক্রিকেটবিশ্ব। তামিম-সৌম্য-সাব্বির-লিটন-নাসির-সাকিবরা যদি ভয়-ডরহীন ব্যাট করতে পারেন, তাহলে তার দারুণ প্রদশর্নী হতে পারে সাউথ আফ্রিকান বোলারদের বিপক্ষে।
তবে খেলাটা ক্রিকেট। সেখানে কি ঘটতে যাচ্ছে সেটা আঁচ করা কঠিন। ভাল ক্রিকেট খেলতে থাকা বাংলাদেশও হোঁচট খেতে পারে। আর তাতে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষগুলো যেন বিরক্ত হয়ে না পড়েন। আমাদের রাষ্ট্র-সমাজ-ক্রিকেট সব জায়গাই আবেগের ভাইরাসে ভরা। আর সেটা খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। পাকিস্তান-ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর আবেগ নামক ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজে। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ- যদি ‘আত্মতুষ্টি’ নামক ভাইরাস-আক্রান্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ টিম। যদি পড়ে, তাহলে অনুচ্চারিত একটা আওয়াজ শোনা যেতে পারে
ক্রিকেটমহলে: মোহাম্মদ আশরাফুল ছাড়া আর কি কেউ নেই, যিনি সাউথ আফ্রিকানদের কারাগার ভেঙে বাংলাদেশের জন্য সাফল্যকে বের করে আনতে পারেন?
ফুটনোট: আট বছর আগে গায়ানায় মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসেই সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র ওয়ানডে জয়।
** টি-২০ দল ঘোষণা, ফিরলেন গাজী
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম