ঢাকা: ক্রিকেট বিশ্বের শীর্ষ সারির দেশগুলোতে সারা বছরই খেলার সুযোগ পান ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকলেও অবকাঠামো ও পরিকল্পিত সূচির কারণে বছরের ১২ মাস ক্রিকেট নিয়েই থাকেন তারা।
বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা ক্রিকেটারদের পুরো ১২ মাস ক্রিকেটেই মগ্ন রাখার ব্যাপারে পরিকল্পনা করছেন। দীর্ঘ-বিরতির কারণে যেন কোনো ছন্দপতনের শঙ্কা না জাগে সেজন্যই এ পরিকল্পনা আঁকছেন তারা। এছাড়া, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অসাধারণ পারফরম্যান্সের ফলে বিসিবিকে সামনের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। তাই কেবল বর্তমান জাতীয় দলই নয়, সামনে এ দলে কারা আসবে, পাইপলাইন কেমন হবে-এ নিয়েও ভাবছে বিসিবি।
বিসিবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ক্রিকেটারকে নিয়ে হাইপারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি) গঠন করে চলছে চার মাসের অনুশীলন ক্যাম্প। সেখানে রয়েছেন দেশি-বিদেশি কোচরা। এর মাধ্যমে নিজেদের সঠিকভাবে তৈরি করতে পারছেন ক্রিকেটাররা।
খেলোয়াড়দের সারাবছর ক্রিকেট চর্চায় রাখার গুরুত্ব ও অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে বাংলানিউজ আলাপ করে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট এখন ১২ মাসের খেলা। আন্তর্জাতিক মান নিয়ে খেলতে চাইলে ক্রিকেটারদের চর্চায় রাখতে হবে। কোনো ক্রিকেটার বছরে তিন-চার মাস বসে থাকবে, এরপর ফিরে খুব সহজেই খেলেবে- এটা সম্ভব না। নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ’
দীর্ঘদিন বিকেএসপিতে হেড কোচের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৫ সাল থেকে বিসিবি’র গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন নাজমুল আবেদিন। সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয় কী, তার পাশাপাশি তিনি এটাও ভালোভাবে জানেন কীভাবে পাইপ লাইন মজবুত করতে হবে।
নাজমুল বলছিলেন, ‘ডেভেলপমেন্টের অংশ হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে শুরু করে জাতীয় দল পর্যন্ত যারা আছে তারা যেন সারা বছর অনুশীলনের সুযোগ পায়। সে দিকে দৃষ্টি রেখে অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ ও ১৯ ও এইচপির সবার অনুশীলন চলছে। এর ফলাফলটা আমরা পরবর্তী মৌসুমে পাব। এভাবে যদি প্রতি বছর প্রস্তুতিটা ভালো হয়, তাহলে ক্রিকেটাররা ভালো করবে এবং ভালো মানের ক্রিকেটার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ’
এইচপি কার্যক্রমকে বেশ ইতিবাচকভাবেই উল্লেখ করছেন নাজমুল আবেদিন। তিনি চান, শুধু এইচপি নয়, বয়সভিত্তিক দলগুলোকেও সারা বছর অনুশীলনের আওতায় আনতে; ‘যে কোনো পর্যায়ে অনুশীলন একটা পজিটিভ ব্যাপার। কোনো খেলোয়াড়ের সমস্যা থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করতে পারে। ভালো মানের কোচ আছেন এখানে। আমাদের যারা লিডিং ক্রিকেটার আছে, তাদের ক্রিকেটের ফ্লোতে-ই রাখতে হবে, সবসময়ই অনুশীলনের ওপর রাখতে হবে। ’
এতগুলো দলকে সারা বছর অনুশীলনের মধ্যে রাখার মতো অবকাঠামো আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘অবকাঠামোগত দিক থেকে আগের বছরগুলোতে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এখন কিছুটা উন্নতি করেছি। বিকেএসপিতে যে নতুন মাঠগুলো হয়েছে, যে অবকাঠামো আছে-তা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত। ড্রেসিংরুমের সঙ্গেই হোস্টেল সুবিধা রয়েছে। ওখানেই খেলোয়াড়রা থাকছে, সেখানে আমাদের কোচরাও আছেন। ’
গেম ডেভেলপমেন্টের কাজগুলো বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলন, ‘আমাদের অন্যতম একটা কাজ হলো ট্যালেন্ট হান্ট করা। এ মুহূর্তে যারা বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের মধ্যে আছে, তাদের কিন্তু সারা বছর ধরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় থেকে তুলে এনেছেন আমাদের নির্বাচকরা। আমাদের কোচরাও ভালোভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলশ্রুতিতেই কিন্তু আমাদের পাইপলাইনটা গড়ে উঠেছে। ’
নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘এখন আমরা জানি বিকেএসপিতে অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৭ ক্যাম্পে কারা খুব ভালো, কাদের সম্ভাবনা আছে আগামী ১০ বছর খেলে যাওয়ার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এইচপি নয়, এর নিচে যারা আছে (অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৭) তাদেরও অফ-সিজনে অনুশীলনের আওতায় আনতে হবে। ’
গত সপ্তাহে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন, সারাদেশ থেকে পেস বোলার ও লেগ স্পিনার হান্ট করার ইচ্ছা রয়েছে তাদের। এ প্রসঙ্গে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি বোলিং হান্ট করতে চাইছেন। এটা খুবই ভালো হবে। হয়তো অনেক ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে না। তবে ২-১ জনও যদি আসে-সেটাই সম্পদ হবে এ দেশের ক্রিকেটের জন্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
এসকে/এমআর/এইচএ