ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

পূজার স্বপ্ন পূরণের দিন

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
পূজার স্বপ্ন পূরণের দিন ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ছিপছিপে গড়ন দেখে বোঝার উপায় নেই, বল হাতে ২২ গজে ‌এভাবে তেড়েফুঁড়ে উঠতে পারেন পূজা চক্রবর্তী। ঘন্টায় ১০০ কি.মি. বেগে বল ছুঁড়ে সবাইকে অবাকই করলেন গোপালগঞ্জের এই মেয়ে।



রবি ফাস্ট বোলার হান্টে মেয়েদের মধ্যে চূড়ান্ত বিজয়ী হওয়ার আগেই জাতীয় দলের সাবেক নারী ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি প্রস্তাব দিয়ে বসলেন, প্রিমিয়ার লিগে আমা‍র টিমে তুমি খেলবে? সাথিরা জাকির প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব রুপালি ব্যাংকের কোচ ও অধিনায়ক। তার কাছ থেকে আসা এমন প্রস্তাবে সম্মতিও জানালেন পূজা। জাতীয় দলের পেসারদের যখন এতো গতি উঠানোর খবর পাওয়া যায়নি সেখানে পূজাকে হাতছাড়া করার তো কোনো মানেই হয় না!

রবি ফাস্ট বোলার হান্ট পূজাকে দিয়েছে স্বপ্ন পূরণের দারুণ এক প্ল্যাটফর্ম। বিসিবি একাডেমি মাঠে দাঁড়িয়ে ফাস্ট বোলার হান্টের যৌথ আয়োজক বিসিবি ও মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’কে কয়েকবার ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন এই কিশোরী, ‘বিসিবি ও রবি’কে ধন্যবাদ। এমন একটা আয়োজন না হলে আমার এখানে আসাই হতো না। বিসিবি ও রবি’কে এজন্য ধন্যবাদ, তারা এই সুযোগটা আমাদের করে দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেই একাডেমি মাঠ ছাড়তে চেয়েছিলেন পূজা! পুরস্কার না নিয়েই বাড়ি ফেরার তাড়া তার। বেশ কয়েকদিন ধরেই থাকতে হচ্ছে ঢাকায়। এবার গোলাপগঞ্জে বাবা-মা’র কাছে ছুটতে হবে। তবে সে সুযোগ নেই পূজার!

একাধিক নিউজ চ্যানেল থেকে এলো অনুরোধ-রাতের টক শো’তে আসুন না আমাদের স্টেশনে! এর পর দীর্ঘ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে অতিথিদের হাত থেকে পূজা নিলেন ৫০ হাজার টাকার চেক, ট্রফি ও সার্টিফিকেট। রবি’র তরফ থেকে আরও পাবেন প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা (আগামী ৫ বছর পর্যন্ত), হ্যান্ডসেট ও মোবাইল বিল হিসেবে মাসে ১ হাজার টাকা। প্রিমিয়ার লিগে খেললে টাকার পরিমান বাড়বে দিগুণ, জাতীয় দলে এলে হবে পাঁচগুণ।

পূজার আজ স্বপ্ন পূরণের দিন। তবে তাকে উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছে না মোটেও। উচ্ছ্বাস থাকলেও সেটি প্রকাশ করবেন কার সাথে? সঙ্গে নেই কোনো আপনজন! একাডেমি মাঠে শত শত মানুষের ভীড়েও চেহারাটা মলিন। মুখখানা দেখে ফটোসাংবাদিক কিছু একটা বলে হাসানোর চেষ্টা করলেন পূজাকে। পূজা বুঝি আজ অতীতে ফিরে ‍গেছেন যখন প্রানের খেলা ক্রিকেট তাকে খেলতেই দিতে চাইতেন না বাবা-মা।

হয়তো সে দিনগুলোর কথা এমন সাফল্যের দিনে মনে পড়ছে তার, ‘গ্রামাঞ্চলে আমার বাড়ি তো, সবাই আজেবাজে কথা বলতো, খারাপ কথা বলতো-এ কারণে আমার বাবা-মা আমাকে ছাড়তো না। লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে যেতাম। তারপর মনে করলাম যেহেতু এতো পারিবারিক সমস্য খেলবোই-না। ’

গোপালগঞ্জের সাতপার উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে খেলাধুলায় আবার টান অনুভব করেন পূজা। স্কুল থেকে আবার শুরু করেন খেলাধুলা। তবে ক্রিকেট নয়; অ্যাথলেটিক্স, ‘স্কুলে ভর্তি হলাম, অ্যাথলেটিক্স খেলতাম। গোপালগঞ্জ সদরে নিয়ে গেল আমাদের। ওখানে একটা মেয়ে বললো.. আপু, ‌আপনার যে রানিং ‍তাতে আপনি ক্রিকেট অনুশীলন করেন, অনেক ভালো করবেন। বাড়িতে আলোচনা করলাম এটা নিয়ে। বাড়ির কেউ রাজি ছিলেন না। অনেক কষ্টে রাজি করালাম। তারপর থেকে আবার ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করলাম। এখন আমার বাবা-মায়ের সাপোর্ট অনেক। মামা-মামী ও গ্রামের মানুষও উৎসাহ দেয়। ’

ফাস্ট বোলার হান্টে বিজয়ী হয়ে কাজটা আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন পূজা, ‘আমার ‍আরও পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করলে হয়তো ১০৫-১১০ কি.মি. গতি উঠাতে পারবো। এখানে এতো তাড়াতাড়ি আসতে পারবো, আগে ভাবিনি। ’

ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সহজেই পরিকল্পনাও করতে পারছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী পূজা চক্রবর্তী। এখন যারা নারী দলে খেলেন তাদেরকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই কিশোরী, এখন যারা খেলেন তাদের লেভেল তো অনেক বড়। তবে ওনারা যে পর্যায়ে আছে তার চেয়ে ভালো পর্যায়ে যেতে চাই। ’

বলছিলেন, জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদের নাকি দারুণ একজন ভক্ত তিনি। কয়েকদিন পর হয়তো এই একাডেমি মাঠেই তাসকিনের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে আউটসুয়িং স্পেশালিস্ট পূজা চক্রবর্তীর! 

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
এসকে/আরএম

** পুরস্কার হিসেবে যা পেলেন বিজয়ীরা
** রবি ফাস্ট বোলার হান্টের সেরা ১০ বোলার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।