খুলনা থেকে ফিরে: একটা সময় রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেই উঠে আসতেন জাতীয় পর্যায়ের বেশিরভাগ ক্রিকেটার। তারও আগে জাতীয় দলে একচ্ছত্র দাপট ছিল ঢাকার ক্রিকেটারদের।
জাতীয় দলে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাতে শুরু করেন এখানকার ক্রিকেটাররা। উঠে আসেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত মানজারুল ইসলামসহ অসংখ্য ক্রিকেটার। সাকিব, রুবেল, আল-আমিন, ইমরুল, এনামুলরা এসে খুলনার নাম-ডাক ছড়িয়ে দেন পুরো বিশ্বে। মুস্তাফিজ-সৌম্য-সোহানরা উঠে এসে আরও প্রসিদ্ধ করলেন খুলনা বিভাগকে। এ জন্য ক্রিকেটার উঠে আসার উর্বর ভূমি বলা হয় খুলনা বিভাগকে। তাই বলে ভাববেন না খুলনার ক্রিকেট-অবকাঠামো খুব উন্নত!
অসংখ্য ক্রিকেটার উঠে আসার উর্বর স্থানেই কমে আসছে ক্রিকেট। মাঠের অভাবে দুই মৌসুম ধরে বন্ধ খুলনা প্রিমিয়ার লিগ। ২০১৩-১৪ মৌসুমে সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগ হয়েছিল খুলনায়। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, ডিএসএ কাপ, শহীদ শেখ আবু নাসের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-কিছুই আয়োজন করতে পারছে না খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
লিগ, টুর্নামেন্ট মাঠে না গড়ানোয় ক্রিকেট-চর্চায় এখানকার তরুণরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানালেন স্থানীয় একাডেমির কোচ। তিনি বলেন, এমন হতে থাকলে খুলনা থেকে ক্রিকেটার উঠে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই তো কমে গেছে। সোহান-মিরাজ ছাড়া কে আছে, এখন আর খুলনার?’ বয়সভিত্তিক দলগুলোতেও আগের মতো ক্রিকেটার নেই খুলনার। ’
জেলা লিগ না হওয়ায় নারী ক্রিকেটাররা হারিয়ে ফেলছেন ক্রিকেট-চর্চার আগ্রহ। নারীদের জেলা লিগ বন্ধ ৩ বছর ধরে। খুলনার মেয়ে সালমা-জাহানারা-শুকতারা-রুমানাদের দেখাদেখি যেখানে নারীদের ক্রিকেট-চর্চা দিনে দিনে বাড়ার কথা সেখানে উল্টো কমে আসছে। নারী ক্রিকেটারদের আগ্রহ কেন কমছে সেটি জানালেন বাংলাদেশ নারী দলের ওয়ানডে অধিনায়ক সালমা খাতুন, ‘ক্রিকেটাররা সারাবছর প্র্যাকটিস করে যদি ম্যাচ খেলতে না পারে তাহলে তারা কেন খেলবে। এখানে ৩ বছর ধরে জেলা লিগ হচ্ছে না। মেয়েরা ম্যাচ না পেলে তাদের মায়েরা রোদে-পুড়ে মেয়েকে কেন খেলতে দেবে। ম্যাচ না পেলে কেবল অনুশীলনে কতদিন আগ্রহ থাকবে ক্রিকেটারদের।
লিগ আয়োজন না করতে পারার পেছনে মাঠ-সংকটকে সামনে আনলেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান। তিনি বলেন, ‘জেলা স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজ চলছে। আমরা মাঠ সংকটে পড়েছি। এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম বিভাগ লিগ আয়োজনের জন্য বিভাগীয় স্টেডিয়াম (শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম) ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে বিসিবি সভাপতি, গ্রাউন্ডস কমিটি, প্রধান নির্বাহী বরাবর চিঠি পাঠাই। চার মাস পেরিয়ে গেলেও তার উত্তর আমরা পাইনি। ’
এ প্রসঙ্গে বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটিরি চেয়ারম্যান হানিফ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো চিঠি আমরা পাইনি। আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে লিগ করতে চাইলে বিসিবি সভাপতির অনুমোদন লাগবে। সেক্ষেত্রে তারা আবার চিঠি পাঠাতে পারে। ’
খুলনাতে লিগ না হলেও ক্রিকেট-চর্চা বাঁচিয়ে রেখেছে এখানকার একাডেমিগুলো। খুলনা শহরে রয়েছে ১২টি একাডেমি। সবগুলো একাডেমির অনুশীলন চলে জেলা স্টেডিয়ামের পাশে সার্কিট হাউজ মাঠে। ওই মাঠে মাসব্যাপী বানিজ্যমেলা আয়োজন করায় বিপাকে পড়েছেন একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীরা। বর্তমানে জেলা স্টেডিয়ামে হচ্ছে তাদের অনুশীলন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক একাডেমি কোচ ক্ষোভ নিয়েই বললেন, ‘বানিজ্যমেলার দোকানপাট বসাতে এক মাস আর মেলা চলে একমাস। ক্রিকেট মৌসুমেই যদি দুই মাস চলে যায়, তাহলে অনুশীলন কিভাবে চলবে। এর পর আবার বৃষ্টির মৌসুম চলে আসবে। আরও বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে, সবমিলে বছরের ৩-৪ মাসের বেশি আমরা অনুশীলন করতে পারি না। ’
খুলনা বিভাগের ক্রিকেট যেখানে রোল মডেল হয়ে উঠার কথা, সেখানে খুলনাই এখন ধুঁকছে ক্রিকেট-শূন্যতায়। মাঠের অভাবে রং হারাচ্ছে খুলনার ক্রিকেট। উর্বর এ ভূমি থেকে ভবিষ্যতে ক্রিকেটার উঠে না এলে ক্ষতি তো পুরো বাংলাদেশের-ই!
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
এসকে/এমআরএম
** নারী ক্রিকেট মানেই তো সালমা
** মাঠের মানুষ আব্দুস সাত্তার কচি
** জাতীয় দলে ফিরবেন, বিশ্বাস জিয়ার
** লক্ষ্যটা নিজের ভেতরেই রাখতে চান সোহান
** ‘মাশরাফি ভাইয়ের রুমেই বেশী আড্ডা হতো’
** আবু নাসের স্টেডিয়াম যেভাবে ‘লাকি ভেন্যু’ হলো
** ক্রিকেটভক্ত-ক্রিকেটারভক্ত মিম, আফরিদ
** বিশ্বকাপের ক্যাচ দুটি মনে রাখবেন সৌম্য
** ‘লাল-সবুজ’ বাড়ির বাসিন্দা সৌম্য
** সৌম্যর সুন্দরবন-ট্রিপ
** মাশরাফিতে মুগ্ধ মুস্তাফিজের বাবা
** মুস্তাফিজের বোলিংটাই কেবল পাল্টেছে
** ‘কাটার স্পেশালিস্ট’ এর শুরু এ মাঠেই
** গ্রামের বাড়িতে দুরন্ত মুস্তাফিজ
** ক্রিকেটাঙ্গনে দাপট দেখানো খুলনার পথে…