এদের মধ্যে জন্মগতভাবেই মেহেদি হাসান টিটুর দুইটি হাত বাঁকা ও ছোট। অনেকটা অর্ধাংশের মতো।
তারপরও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালবাসা তাদের। সুযোগ পেলেই ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে ছুটতো খেলার মাঠে। ছুটছেন এখনো। আর ক্রিকেট প্রীতির কারণেই শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও দমাতে পারেনি তাদের। ক্রিকেট মাঠে বল হাতে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছেন তারা।
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মেহেদি হাসান টিটু শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও ক্রিকেটের টানে মাঠ ছাড়েনি কখনও। তার এই আগ্রহ সবার আগে নজরে পড়েছিলো তালা উপজেলার সুভাষিনী ক্লাবের কোচ শাহ বিল্লাহর। তার অধীনেই টিটুর ক্রিকেট জীবনের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি হয়। অনুশীলন করার সময় কোচের কাছ থেকে ক্রিকেটের সব ধরনের নকশা বুঝে নিয়েছিলেন তিনি। কোচের অনুপ্রেরণা পেয়ে ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা আরও বেড়ে যায় তার। স্বপ্ন পূরণের আলাদা এক শক্তিও অর্জন করে ফেলে তিনি।
২০১৩ সালে কোচের সাহায্যে সাতক্ষীরা একাডেমিতে অনুশীলনের সুযোগ পেয়ে যান টিটু। জেলা পর্যায়ে তাকে আরো পরিণত করে তুলতে পরিশ্রম করেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপু। তাদের সবার পরিশ্রমের প্রতিদান দিয়েছেন টিটু।
২০১৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে আজাদ স্মৃতি সংসদের হয়ে মাঠে নেমে অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন তিনি। ৩ দশমিক ৩ ওভার বল করে ১২ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছিলো এই লেগ স্পিনার।
একই সালে অক্টোবর মাসে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ড্রিম ফর ডিজেবিলিটি ফাউন্ডেশনের হয়ে ভারত সফর করেন তালার এই কৃতি ক্রিকেটার। সেখানে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুইটি পরিত্যক্ত হলেও একটি ম্যাচেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হনি তিনি। তিন ওভার বল করে সাত রান দিয়ে একটি উইকেট লাভ করে এই লেগি।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে চলমান দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে কুখরালীর বিপক্ষে তালা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে মাঠে নামেন মেহেদি হাসান টিটু। এতে চার ওভার বল করে ১৮ রান দিয়ে তিনটি উইকেট লাভ করেন তিনি। টিটু যে শুধু বল হাতেই সফল তা নয়, দলের দুঃসময়ে অষ্টম উইকেটে ব্যাটে নেমে হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার।
ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেহেদি হাসান টিটু বাংলানিউজকে বলেন, জন্মগতভাবেই আমার দুইটি হাত বাঁকা ও ছোট। অনেকটা অর্ধাংশের মতো। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ক্রিকেটের মধ্যে আমি আলাদা আনন্দ খুঁজে পাই। আমি খেলাটি ইনজয় করি এবং মাঠে নামলেই নিজের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করি।
এদিকে পোলিও রোগের কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা বয়ে বেড়ানো কামরুজ্জামান টুকু ২০০২ সালে নওয়াপাড়া মাঠে বড় ভাইয়ের (মো. মনিরুজ্জামান) সঙ্গে খেলা করতে যেয়ে স্পিনিং ভেলকি দেখিয়ে সবার মন জয় করে। ছয় রান দিয়ে হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন এই স্পিনার। সে সময়ের পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছিলো সবার। তখন থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধিতা পিছিনে ফেলে মাঠে দাপিয়ে বেড়ান টুকু।
এলাকাভিত্তিক টুর্নামেন্টে দক্ষতার সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন তালার এই ক্রিকেটার। এ ধরনেরই একটি টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচ খেলে ১৮টি উইকেট লাভ করেছিলেন টুকু। এলাকার মধ্যে দুর্দান্ত খেলে সুযোগ পায় সুভাষিনীর ক্লাবে।
কোচ শাহ বিল্লাহর অধীনে অনুশীলন করে নিজেকে আরও পরিণত করে তুলেছেন তালার এই অফ স্পিনার।
ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন সাতক্ষীরায় চলমান দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে তালা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার একাদশে।
প্রতিযোগিতামূলক এই লিগের অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়ান কামরুজ্জামান টুকু। দুই ওভার বল করে ছয় রান দিয়ে দুইটি উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার। এছাড়া গত সালের ৩০ ডিসেম্বর ফিজিক্যাল টিমে নিবন্ধনপত্র জমা দিয়েছেন টুকু।
ক্রিকেটে ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে কামরুজ্জামান টুকু বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আশা করছি এর ধারাবাহিতকতা বজায় রেখে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল টিমেও খেলবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এএটি