ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শুকলাল দাশের কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘আনন্দপুরের দিন’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
শুকলাল দাশের কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘আনন্দপুরের দিন’

চট্টগ্রাম: অমর একুশে বইমেলার ১০ম দিনে এসেছে শিশুসাহিত্যিক-সাংবাদিক শুকলাল দাশের কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘আনন্দপুরের দিন’। নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে বইমেলায় ৪৯ ও ৫০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থ-শৈলী থেকে প্রকাশিত এই বইটিতে মোট ৭টি গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলোতে মহান মুক্তিযুদ্ধে দীপু নামের দশম শ্রেণির এক সাহসী কিশোরের সাহসিকতার সাথে অংশগ্রহণ এবং বীরত্বের সাথে লড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বুলেটবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করার পরও দেশ মাতৃকার জন্য সামান্যতম অবদান রাখতে পারার গর্বে কিশোর দীপুর কোন ধরনের অনুশোচনা দেখা যায়নি বরং মা-বাবার সামনে গর্ব করে এই বীর কিশোর বলেছে, ‘বাবা আমি পাকিস্তানিদের বুলেটে আহত হলেও ভীষণ খুশি।

দেশ স্বাধীন হয়েছে, এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়ার নেই, বড় কোনও আনন্দ নেই। ’ 

ছেলের এই অবস্থা দেখে মা-বাবার অন্তর কেঁদে ওঠলেও ছেলে বেঁচে আছে এতেই তারা খুশি। পাশাপাশি ‘মন খারাপের দিন’গল্পে উঠে এসেছে অনীক নামের এক কিশোরের এসএসসি পাস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রিয় গ্রাম, প্রিয় মা-বাবাকে ছেড়ে শহরের চলে যাওয়ার বেদনাময়-স্মৃতিকাতরতার কথা।  

অপরদিকে ‘পদ্মদিঘির পদ্মকুমারী’ গল্পে পদ্মপাড়ার গুড্ডু, রুদ্র-সৈকত ও লাবনীসহ সকলেই প্রতিদিন দল বেঁধে স্কুলে গেলেও তাদের সমবয়সী মনাকে তার নতুন মা স্কুলে যেতে না দিয়ে গরুর ঘাস কাটতে পাঠানোর বেদানার্ত কথামালা। সেই অভিমানে বার বছরের মনা পদ্মদিঘিতে পদ্মকুমারীর সাথে তাদের জলের দেশে চলে যাওয়ার করুণ কাহিনি আছে বইটিতে। আরো আছে ‘মুইতলা মামার বাড়ির দিনগুলো’তে সোহেলের মনে মামার বাড়ির আনন্দ আর স্মৃতিকাতরতার দিনের কথা।  

পুরো গল্পের বইটিতে ‘আনন্দপুরের দিন’ গল্পটি কিশোরসহ সব বয়সী পাঠকদের আকৃষ্ট করার মতো। দেশের উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুটি গ্রাম ‘আনন্দপুর ও সীমান্তপুর’। আনন্দপুর গ্রামে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-হাসপাতাল সবকিছু থাকলেও সীমান্তপুর গ্রামে নেই কোনও স্কুল-কলেজ। কারণ তারা ছিটমহলের বাসিন্দা।  

সীমান্তপুরের নিরু-মিরু, হাসান-হোসেনরা কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে আনন্দপুরের স্কুলে যায় প্রতিদিন। এজন্য আনন্দপুর গ্রামে তাদের স্কুলের সহপাঠি রবি-ববি-জয়-বিজয়দের প্রতিদিন টিটকিরি শুনতে হয়। আনন্দপুরের স্কুলে প্রতি বছর মহান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মহান শহিদ ও ভাষা দিবস উদযাপন হলেও সীমান্তপুর গ্রামে কোন জাতীয় দিবস উদযাপন করতে পারে না। এজন্য গ্রামের নিরু-মিরু-হাসান-হোসেনদের মনে অনেক দুঃখ। একসময়  দুই দেশের সরকার প্রধানের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ছিটমহলগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময় হয়। এভাবে অনেক দিন পর একটি ঝুলে থাকা বিষয়ের নিষ্পত্তি হলে সীমান্তপুরবাসীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সেদিন সীমান্তপুর বাজারের বড় বটগাছটার নিচে মঞ্চ বানিয়ে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। বিকেলে গ্রামে আনন্দ মিছিল বের হয়। আনন্দপুরের লোকেরা সেদিন  সীমান্তপুরের আনন্দে শামিল হল। নিরু-মিরু-হাসান-হোসেনদের অতীতের সব কষ্ট, সব অপমান মন থেকে মুছে গিয়েছিল। সব ভেদাভেদ ভুলে আনন্দপুর থেকে আসা সহপাঠী রবি-ববি-জয়-বিজয়দের তারা পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়, নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করে।  

আসল আনন্দটা তখনও বাকি ছিল। সেটা এল সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে। সীমান্তপুরবাসীরা তাদের জীবনের প্রথম বিজয় দিবস উদযাপন করল। সেদিন  সীমান্তপুরবাসীরা প্রথম গলা খুলে গেয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত-‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। রাষ্ট্রীয় অতিথিরা সেদিন সীমান্তপুরের নামকরণ করলেন ‘নয়া আনন্দপুর’। খাঁচার পাখি নয়, খোলা আকশের পাখির মতোই নিরু-মিরু, হাসান-হোসেনরা যেন উড়তে উড়তে স্কুলে পড়তে যায়। তখন তাদের আর কেউ জেলখানার কয়েদি বলে টিটকিরি মারে না।  

শুকলাল দাশের জন্ম চট্টগ্রামের আনোয়ারার শিলালিয়া গ্রামে। দৈনিক আজাদীর সিনিয়র রিপোর্টার শুকলাল দাশ ২০১৭ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ 
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।