ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ট্রেন ঘেঁষে সেলফি, চলে আড্ডাবাজি

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
ট্রেন ঘেঁষে সেলফি, চলে আড্ডাবাজি ...

চট্টগ্রাম: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে স্টেশন রয়েছে ৭৪টি। এসব স্টেশনে প্রায় প্রতিদিনই সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে পুলিশ ও রেললাইনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা।

কখনো কখনো এসব স্টেশনে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন খোদ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজারের নেতৃত্বে গঠিত টিম।  

তবে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু হলেও এখনো শুরু হয়নি সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

এতে প্রায় সময় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ রুটে নতুন ট্রেন দেখে সব বয়সী মানুষ রেললাইনের পাশে ছুটে আসছেন। কেউ সেলফি তুলছেন আবার কেউ ছুঁয়ে দেখছেন দ্রুত ছুটে চলা ট্রেন।  

১৮৯০ সালের রেল আইনে রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এমনকি এর মধ্যে গরু-ছাগল ঢুকে পড়লে সেটিকেও নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। রেলে কাটা পড়ে কেউ আহত হলে উল্টো ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে রেলওয়ে। আইন থাকলেও তা মানার প্রবণতা নেই।

রেললাইনে দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অসচেতনভাবে রেললাইন দিয়ে হাঁটাচলা, পারাপার, মোবাইল ফোনে কথা বলা বা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে শুনে রেললাইন দিয়ে হাঁটা, ট্রেনের হুইসেল শুনতে না পাওয়া, আঁকাবাঁকা পথে ট্রেন দেখতে না পাওয়া, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা এবং নেশাগ্রস্ত হয়ে রেললাইনে চলাচল অন্যতম। এসব বিষয়ে কক্সবাজার রুটে এখনো পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কোন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়নি।

কক্সবাজার রুটে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উৎসুক কিছু সংখ্যক মানুষকে রেললাইনের ওপর দিয়ে দ্রুত হেঁটে ও দৌড়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। তাদের কেউ স্কুল শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী, কেউবা সাধারণ পথচারী। উঠতি বয়সী তরুণরা ব্যারিকেডের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছে। কেউ আবার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছে।  

রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে আসে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। ট্রেনটি প্রচণ্ড গতিতে রামু স্টেশন পার হওয়ার সময় এক তরুণকে নির্ভাবনায় চলন্ত রেলগাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়। দ্রুতগতিতে রেল চলাচলের ফলে বাতাসের গতিতে নিজেকে সামলাতে না পেরে ওই তরুণ নিচে পড়ে যায়। ট্রেন দেখতে ছোট শিশুরাও চলে আসছে রেললাইনের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার রুটে যেহেতু ট্রেন চলাচল শুরু করেছে সেহেতু সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে ঘটেছে কয়েকটি দুর্ঘটনা। এ রুটে অবাধে চলাফেরা করছে গরু- ছাগল। এলাকার মানুষ জানে না নিয়ম-কানুন।  

তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিষয়ে রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। জনবলও তেমন নিয়োগ হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে এদিক-ওদিক থেকে লোকবল নিয়ে চলছে এ রুটে ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে পাহাড় ও নদীপথ দিয়ে পর্যটন নগর কক্সবাজার পর্যন্ত এই রেল লাইন। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ সব মিলিয়ে ৯টি স্টেশন নির্মাণ হয়েছে রেলপথটিতে। অনেকগুলো স্টেশনের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।

গত ৭ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে লোহাগাড়ায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে মো. রাশেদ আবিদ নামে যুবক গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এখনো চিকিৎসাধীন রাশেদ।

স্থানীয়রা জানান, রাশেদ নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। হঠাৎ কক্সবাজার থেকে ট্রেন আসতে দেখে সেলফি তুলতে রেললাইনে দাঁড়িয়ে যায় রাশেদ। সেই মুহূর্তেই পেছন থেকে ট্রেন এসে তাকে ধাক্কা দেয়। সচেতনতার অভাবে শুধু মানুষ আহত বা নিহত হচ্ছে না, গবাদিপশুও মারা যাচ্ছে।  

বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালুর দ্বিতীয় দিনে ২ ডিসেম্বর রামু উপজেলার রশিদনগরে রেললাইনের বিটের নাট-বল্টু খুলে ফেলে দুষ্কৃতকারীরা। এর আগে ১২ নভেম্বর রাতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়া অংশের হ্যান্ডেল ক্লিপ চুরি হয়ে যায়। রেললাইনের রক্ষিত বাড়ি এলাকার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, সেদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেললাইনে কোনো শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করার আওয়াজ শোনা যায়।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে রেলওয়ে পুলিশ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আরএনবি, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোতয়াল্লি, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ রেলওয়ে পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান তারা। কিন্তু কক্সবাজার রুটে পুরোদমে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়নি।

রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধসহ রেলওয়ে পুলিশের নানান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় ও কলোনিতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কক্সবাজারে রুটেও আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সব সেক্টরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা নিজেরাও এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবো। এরপরেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে যায়। তাই নিজ থেকে কেউ সচেতন না হলে সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।