ঢাকা, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়া থেকে বিরত থাকুন: মেয়র শাহাদাত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়া থেকে বিরত থাকুন: মেয়র শাহাদাত নগরের নিউ মার্কেট এলাকা পরিদর্শনে চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম: নগরবাসীকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় চড়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, আপনারা যদি তাদের নিরুৎসাহিত করেন, তাহলেই তারা রাস্তায় নামা বন্ধ করবে। তবে আইনের প্রয়োগও অত্যন্ত জরুরি।

ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলো শহরের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। সম্প্রতি একটি শিশু খালে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
এগুলো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমি সিএমপিকে ধন্যবাদ জানাই তারা একদিনেই এক হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করেছে।  

এই শহরে আর কোনো মা যেন সন্তান হারিয়ে বুক খালি না করে—আমরা সবাই মিলেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি নিজেকে শুধু একজন মেয়র নয়, একজন নগরসেবক, একজন সমাজসেবক হিসেবে ভাবি। আমরা সবাই মিলে এই শহরটাকে ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটিতে রূপান্তরিত করবো।

রোববার (২০ এপ্রিল) নগরের নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাত ও সড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মেয়র এসব কথা বলেন।  

মেয়র বলেন, হকাররা সকাল বেলা ফুটপাতে বসতে পরবে না। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা বসতে পারবে। ধাপে ধাপে এটা আরও গোছানো হবে। ভবিষ্যতে আমরা এটাকে ‘ইভনিং মার্কেট’ হিসেবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হকার পুনর্বাসনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট জায়গা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। প্রথমটি হলো জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। যেখানে বর্তমানে কিছু অপরাধী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।  সেখানে হকারদের বসানো যেতে পারে, যেখানে অবশ্যই রেলওয়ে রাজস্ব পাবে।  

আমরা চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ এবং জনসমাগমে ব্যস্ত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে টার্গেট করা হয়েছে নিউ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো। এখানে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করতে আসে, যার ফলে যানজট লেগেই থাকে। এর আগেও আমরা চকবাজার এলাকায় রাস্তা দখল করে বাজার বসানো দোকানদারদের পুনর্বাসন করেছি এবং এলাকা দখলমুক্ত করেছি। পরবর্তী লক্ষ্য মেডিক্যাল কলেজ এলাকা—এখানে রোগী এবং তাদের স্বজনরা ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার জন্য ছোটাছুটি করেন, আর ফুটপাতগুলো দখল হয়ে থাকে। আমি এই এলাকার ব্যবসায়ী ও দখলদারদের অনুরোধ করবো, আপনারা স্বেচ্ছায় সরে যান, কারণ আমরা এই এলাকাকেও শৃঙ্খলার আওতায় আনতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আগ্রাবাদ এলাকায় একটি পে-পার্কিং ও নাইট মার্কেট চালু করেছি। এতে যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এরকম পে মার্কেট ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে।

মেয়র বলেন, কোনো জোর জবরদস্তি নয়, হকারদের বোঝানোর মাধ্যমেই উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব। কাউকে মারধর করে, বারবার চাপ দিয়ে কোনো কাজ স্থায়ী হয় না। সব পক্ষকে আমরা  বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে নগরের যানজট নিরাসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি।  

তিনি বলেন, নগরবাসীর চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতেই হবে। পাশাপাশি হকারদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখেই ধাপে ধাপে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই মিলে শহরটাকে একটি দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে চাই। ষাটের দশকে হয়তো শহরে মানুষের সংখ্যা কম ছিল, তাই পরিবেশও তুলনামূলকভাবে সুন্দর ছিল। আজকের দিনে ৭০ লাখের বেশি মানুষের শহরে। আমরা হয়তো পুরোপুরি সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবো না, তবে কিছুটা হলেও সেই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

আমি যদি আসকার দীঘির পাড়কে দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনঃউন্নয়ন করতে পারি, যদি ভেলুয়ার দীঘি, জোড় ডেবাসহ এসব ঐতিহ্যবাহী জায়গায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে মানুষের সামনে নতুনভাবে তুলে ধরতে পারি, আর সিআরবি এলাকাটিকে যদি আরও সবুজ, আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে পারি—তাহলে মানুষ সত্যিই এই শহরে স্বস্তি পাবে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের চসিকের নিজের মার্কেট, যেটি নালার ওপর ছিল, আমি তা নিজেই ভেঙে দিয়েছি। মাসে প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তবুও জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা করেছি। অতএব, যারা নালার ওপর অবৈধ স্থাপনা করেছেন, তাদের অনুরোধ করবো—আপনারা এগুলো ভেঙে দিন। আমরা চাই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর হোক, মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।